নিখোঁজ হওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপ-নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আবু আসিফের সন্ধান চান তার স্ত্রী মেহেরুন্নেছা। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ দাবী জানান।
তিনি বলেন, আমরা আতঙ্কে মধ্যে আছি, কিছুই বলতে পারছি না। যে করেই হউক আমার স্বামীকে খুঁজে দেন। স্বামীর সন্ধ্যান পেতে ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক ও উপ-নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার নিকট লিখিত দরখাস্ত দেয়া হয়েছে। যা প্রধান নির্বাচন কমিশনার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার, আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার, আশুগঞ্জ থানার ওসি ও স্থানীয় প্রেস ক্লাবে এ দরখাস্তের অনুলিপি দেয়া হয়েছে।
এছাড়াও গত বুধবার রাতে নিখোঁজ হওয়া তার শ্যালক ও নির্বাচনের প্রধান সমন্বয়কারী শাফায়েত সুমন ফিরে এসেছেন। তিনি জানান, গ্রেফতার আতঙ্কে তিনি পালিয়ে ছিলেন। তার ভগ্নিপতির নিখোঁজ হওয়ার খবরে তিনি গত সোমবার রাতে আশুগঞ্জে আসিফের বাড়িতে ফিরে আসেন। তবে কার চাপে পালিয়ে ছিলেন সে বিষয়ে কোন পরিস্কার তথ্য দেননি তিনি।
এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু আসিফের স্ত্রীর দরখাস্তে বলেন, ‘প্রচারণার ক্ষেত্রেও আমরা কোন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড পায়নি। ভোট কেন্দ্রে যাদেরকে এজেন্ট দেবো তাদেরকেও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। একজন প্রার্থীকে যেভাবেই হোক জিতিয়ে নেয়া হবে বলে প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে আমরা মনে করিনা। আমরা বিশ^াস করি এত কিছুর পরও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হলে আমার স্বামী আবু আসিফ আহমেদ বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে। এমতাবস্থায় ভয়ে আমরা এ পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ করতে পারিনি। কিছু সংখ্যক সংবাদকর্মী স্বত:প্রণোদিত হয়ে আমার বাসায় আসলে আমি তাদেরকে বিষয়টি অবহিত করি। এরপর এ বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে নির্বাচন কমিশন থেকে আমার স্বামীকে খুঁজে বের করাসহ তদন্তের নির্দেশ এসেছে বলে আমরা জানতে পারি।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জয়নাল আবেদীন জানান, আমরা তার সন্ধান পেতে যথা সম্ভব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক ও উপ-নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহগীর আলম জানান, আমরা একটি দরখাস্ত পেয়েছি। নিখোঁজের ৪ দিন পর তারা এটি দিয়েছেন। আমরা গতকালই বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়ে রেখেছি।
এদিকে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন করার লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে প্রশাসন। নির্বাচনে সংসদীয় আসনে অফিসারসহ ১ হাজার ১০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করার কথা রয়েছে। এছাড়াও ৪ প্লাটুন বিজিবি, র্যাব, পুলিশের একাধিক মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং টিম থাকবে। উপ-নির্বাচনে ১৭টি ইউনিয়নে ১৭ জন নির্বাহী ও ২ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।
জেলা নির্বাচন অফিসার ও উপ-নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং অফিসার জিল্লুর রহমান বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আজ সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, উপ-নির্বাচন উপলক্ষে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। কেউ বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, আবু আসিফ আহমেদ আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ উপ-নির্বাচনে বিএনপির দলছুট নেতা ও পাঁচবারের সংসদ সদস্য আব্দুস সাত্তার ভ‚ঁইয়ার প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী তিনি। গত শুক্রবার বিকেলে তিনি মোবাইল ফোন বাসায় রেখে বেড়িয়ে আর বাসায় ফেরেনি। এর আগে গত বুধবার আসিফের নির্বাচনী প্রচারণার প্রধান মুসা মিয়াকে ডিবি পুলিশ উঠিয়ে নিয়ে যায়। পরে গ্রাম্য ঝগড়ার মীমাংসিত ঘটনার একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করে পুলিশ। এছাড়া নির্বাচনী প্রচারণার সমন্বয়ক আসিফের শ্যালক শাফায়াত সুমনকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলনা। অবশেষে তিনিও ফিরে এসেছেন।
এদিকে গত সোমবার থেকে একটি অডিও কল সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এই অডিও কলটিকে আসিফের স্ত্রী ও বাড়ির কেয়ারটেকার বলে আলোচনা রয়েছে। যেখানে স্ত্রী মেহেরুন্নেছা কেয়ারটেকারকে তার স্যারের সকল কাপড় গুছিয়ে এবং সিসি ক্যামেরা বন্ধ করতে বলেন ও স্যার কোথায় আছেন তা কাউকে না জানাতে বলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন