বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনারেল শিক্ষা কিছুতেই অবহেলাযোগ্য নয়

জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা : আমাদের ভাবনা ১২

ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী | প্রকাশের সময় : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

একটি বিষয় পরিষ্কার করে বলতে চাই যে, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ইসলামী শিক্ষার দীক্ষা বা চরিত্র গঠন প্রক্রিয়ার প্রয়োগ ও অনুশীলন না থাকলেও এ শিক্ষাব্যবস্থাকে অনৈসলামিক বলে বাদ দেয়ার উপায় নেই। কারণ, কুরআন-হাদীসে শিক্ষাব্যবস্থার যে পরিকল্পনা দেয়া হয়েছে তা বাস্তবায়ন করতে হলে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনের অনিবার্য প্রয়োজন রয়েছে। বিষয়টির প্রতি অবহেলা প্রদর্শনের কারণে বা আমাদের ধর্মীয় মহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুমুখী শিক্ষার প্রতি অনিহার কারণে আমরা বারবার পিছিয়ে যাচ্ছি। আমাদের মাঝে আগেকার ইবনে খালদুন, আল-ফারাবী, আল-কিন্দি আল-গাজ্জালী, ইবনে সীনা, ইবনে রুশদ জন্মলাভ করছে না।

বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবনের জন্য কুরআন মজীদের একটি আয়াতের আবেদন সামনে রাখার অনুরোধ জানাব। কুরআন মাজীদের একটি আয়াতে বলা হয়েছে ‘আলেমরাই আল্লাহকে ভয় করে।’ (সূরা ফাতির, আয়াত-২৮) তার মানে জ্ঞানের সাথে আল্লাহকে ভয় করার চরিত্র বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে। প্রশ্ন হল, এ আলেমের জ্ঞান কি বর্তমানে মাদরাসা শিক্ষায় প্রচলিত কয়েকটি সাব্জেক্টে জ্ঞানচর্চা ও পারদর্শিতার মধ্যে সীমাবদ্ধ? এর বাইরে জ্ঞানচর্চার বিশাল ক্ষেত্র কি ইসলামের আওতার বাইরে? দুঃখজনকভাবে মাদরাসা বা দ্বীনি ঘরাণার ভালো ভালো লোকেরা এমন ধারণাই পোষণ করেন। যে কারণে কোনো দ্বীনি পরিবারের সন্তানকে আইন, কমার্স বা বিজ্ঞান নিয়ে উচ্চতর লেখাপড়া করতে দেখলে দুনিয়াদারির পেছনে গেছে বলে মন্তব্য ছুঁড়ে দিতে আনন্দ পান। তারা কুরআন পাকের আয়াতটির খণ্ডিত অংশ পড়েই নিজস্ব বলয় ও ঘরাণার চিন্তার জগতে ঘুরপাক খান। অথচ পুরো আয়াতটি তেলাওয়াত করলে বুঝতে পারতেন বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সাব্জেক্ট ইসলামী শিক্ষার আওতার অধীন।
‘আপনি কি দেখেন না, আল্লাহ আকাশ হতে বৃষ্টিপাত করেন; এবং আমি তা দ্বারা বিচিত্র বর্ণের ফলমূল উদ্গত করি। আর পাহাড়ের মধ্যে আছে বিচিত্র বর্ণের পথÑশুভ্র, লাল ও নিকষ কালো।

এভাবে রং-বেরঙের মানুষ, জন্তু ও আনআম (গবাদি পশু) রয়েছে। আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে যারা জ্ঞানী (আলেম) তারাই তাঁকে ভয় করে। আল্লাহ পরাক্রমশালী।’ (সূরা ফাতির-২৭ ও ২৮)
লক্ষ্য করুন, এ আয়াতে প্রকৃতিবিজ্ঞান, আবহাওয়া বিজ্ঞান, উদ্ভিদ বিজ্ঞান, কৃষিবিজ্ঞান, নৃতত্ত্ব, ভূতত্ত্ব, জীববিজ্ঞান প্রভৃতির কথা বলা হয়েছে। তার মানে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পাঠ্য সব বিষয় এর অন্তর্ভুক্ত। আলেম হিসেবে স্বীকৃতির জন্য শর্ত হল, এসব বিষয়ের জ্ঞানী মণীষীদের মধ্যে আল্লাহর ভয় ও ভালোবাসায় মথিত সংযমী জীবনের অনুশীলন থাকতে হবে। আয়াতের শেষভাগে সে কথাই নির্দেশ করা হয়েছে। কুরআন মজীদে আলেমের পরিচয় দিতে গিয়ে আরেকটি পরিভাষার ব্যবহার এসেছে। তা হ’ল, ‘উলুল আলবাব’, বুদ্ধিমান। ইরশাদ হয়েছে-
‘আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, দিবস ও রাতের পরিবর্তনে নিদর্শনাবলী রয়েছে বোধশক্তিসম্পন্ন লোকের জন্য। যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহর স্মরণ করে এবং আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা-গবেষণা করে ও (সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে) বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি এগুলো নিরর্থক সৃষ্টি করনি, তুমি পবিত্র, তুমি আমাদেরকে আগুনের শাস্তি হতে রক্ষা কর। -(সূরা আলে ইমরান, আয়াত-৯১)

এখানে সৌরবিজ্ঞান ও সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে চিন্তা গবেষণার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কুরআন মজীদে এ ধরনের আয়াতের সংখ্যা অনেক। কুরআনের এ আবেদনকে বুকে ধারণ করেছিলেন বলেই ইসলামী জ্ঞানচর্চার সোনালি যুগে ইবনে সীনা, ইমাম গাজ্জালী, আল-ফারাবী, আল-কিন্দি, আবু রুশদ, ইবনে খালদুন, রূমী, ইবনুল আরাবির মতো মহামণীষীর জন্ম হয়েছিল। আর দ্বীনি ইলমের সংজ্ঞা একেবারে সঙ্কুচিত করার কারণে আমরা জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় অনেক পিছিয়ে থাকছি। আল্লাহর সৃষ্টির সর্বত্র বিরাজিত নিদর্শনসমূহ নিয়ে চিন্তা গবেষণা করা এবং আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে পৃথিবীর যাবতীয় বস্তু-বিষয়কে আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী কাজে লাগানোই মুমিনের দায়িত্ব এবং মুসলমান হিসেবে গোটা জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাকে এ লক্ষ্য অনুযায়ী সাজানোর দায়িত্ব প্রত্যেকের ওপর অর্পিত।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন