চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে মশার ওষুধ কেনায় অনিয়ম পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। দুদক বলছে, একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে ঘুরেফিরে বারবার মশার ওষুধ কিনেছে চসিক। গতকাল বৃহস্পতিবার চসিক ভবনে অভিযান চালিয়ে এই অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার কথা জানিয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা। অভিযান শেষে দুদকের সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, মশার ওষুধ নিয়ে অনিয়মের একটা প্রতিবেদনের সূত্র ধরে অভিযান পরিচালনা করা হয়। কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে প্রাথমিকভাবে অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেছে।
গত এক বছরে বেঙ্গল মার্ক ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৭৭ লাখ টাকার ওষুধ কেনা হয়েছে। সরকারি ক্রয়বিধি অনুযায়ী, ৫ লাখ টাকার বেশি কেনাকাটা করতে হলে দরপত্র আহ্বান করতে হয়। কিন্তু একই ব্যক্তিকে কাজ দিতে ৫ লাখ টাকার নিচে রাখতে ১৬ লটে ভাগ করে ওষুধ কেনা হয়েছে। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হবে জানিয়ে তিনি বলেন, কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত নগরীর টাইগারপাসে সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করে দুদক। দুদক কর্মকর্তারা সিটি করপোরেশন কার্যালয়ের দোতলায় মেয়রের একান্ত সচিবের কক্ষে প্রবেশ করেন। মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম ভারপ্রাপ্ত প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তার দায়িত্বে আছেন। সেখানে বসে দুদকের কর্মকর্তারা পরিচ্ছন্নতা বিভাগের মশার ওষুধ কেনাকাটার ফাইল তলব করেন। পরিচ্ছন্নতা বিভাগ প্রধান কার্যালয়ের পঞ্চম তলায়। ওখান থেকে পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মীরা ফাইলপত্র দোতলায় নিয়ে আসেন। দুদকের কর্মকর্তারা ফাইলের প্রয়োজনীয় নথি যাচাই-বাছাই করে সংগ্রহ করেন। অভিযান চলাকালে সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী তার কার্যালয়ে ছিলেন।
অভিযোগ রয়েছে, একটি বিশেষ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মশা মারার ওষুধ কেনার জন্য নানা অনিয়মের আশ্রয় নেয় চসিক। সরকারি তহবিলের টাকায় কেনাকাটা করতে হয় ই-জিপির (ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট) মাধ্যমে। এ জন্য দিতে হয় দরপত্র বিজ্ঞপ্তি। কিন্তু দরপত্র না দিয়ে পছন্দের ঠিকাদারের কাছ থেকে কেনা হয় ওষুধ। পছন্দের এই ঠিকাদার চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক অরভিন সাকিব ইভান। সিটি করপোরেশন চলতি বছরের জানুয়ারি ও গত বছরের সেপ্টেম্বর দুই দফায় অরভিন সাকিবের প্রতিষ্ঠান মেসার্স বেঙ্গল মার্ক ইন্টারন্যাশনালের কাছ থেকে ছয় হাজার ৩৫০ লিটার মশা মারার ওষুধ কেনে। এর আগে ২০১৯ সালের অক্টোবরে কেনা হয়েছিল ছয় হাজার ৪০০ লিটার ওষুধ। এসব ওষুধের জন্য সিটি করপোরেশনের ব্যয় হয় ৭৪ লাখ ৬১ হাজার টাকা।
ছাত্রলীগ নেতা অরভিন সাকিব নগরীর রাজনীতিতে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী। তিনি মেয়র থাকাকালে মশকনিধনের ওষুধ সরবরাহের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন ওই ছাত্রলীগ নেতা। তার কাছ থেকে ওষুধ কিনতে করপোরেশন গণখাতের ক্রয়বিধির ৭৬ (ট) ধারা (পিপিআর) ব্যবহার করে। অথচ এই ধারা অনুযায়ী অতিজরুরি বা প্রয়োজনীয় পণ্য, কার্য এবং সেবা ক্রয় করার কথা। এর মাধ্যমে প্রতিটি ক্ষেত্রে পাঁচ লাখ টাকার বেশি কেনাকাটা করা যাবে না। এ জন্য ওষুধ কেনার ব্যয় পাঁচ লাখ টাকার ওপরে না দেখানোর জন্য কয়েকটি লটে ভাগ করে কেনা হয়েছে বলে দেখানো হয়।
এ বিষয়ে করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম সাংবাদিকদের বলেন, যেসব ওষুধ কেনার বিষয়ে অভিযোগের কথা বলা হচ্ছে, তার অধিকাংশ আমি দায়িত্ব নেয়ার আগে কেনা হয়েছিল। দায়িত্ব নেয়ার পর সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে প্রায় ২০ লাখ টাকার ওষুধ কেনা হয়েছিল। তবে দায়িত্ব নেয়ার কাগজপত্র ঘাঁটতে গিয়ে একই ব্যক্তির কাছ থেকে বারবার ওষুধ কেনার বিষয়টি নজরে আসে বলেও জানান তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন