বিশেষ সংবাদদাতা : পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের চিঠি চালাচালির মধ্যেই আটকে আছে কানুনগো ও উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার পদে পদোন্নতির ফাইলটি। গত ১৩ বছর ধরে এই পদে পদোন্নতি বন্ধ রয়েছে। এতে করে মাঠ প্রশাসনে হতাশা ও স্থবিরতা বিরাজ করছে। অথচ প্রায় ১৩শ’ কানুনগো পদ শূন্য রয়েছে। এসব শূন্য পদের বিপরীতে নিয়োগ দেয়া নিয়ে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ক্ষুব্ধ পদোন্নতি বঞ্চিত ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও জমির খাজনা আদায় সংক্রান্ত তহশীলদারগণ।
উল্লেখ্য, বছরের পর বছর পদোন্নতি বন্ধ থাকায় সার্ভেয়ার, ড্রাফট্সম্যান, তহশীলদার, সাব-সার্ভেয়ার, কম্পিউটার, ট্রাভার্স সার্ভেয়ার, বাউন্ডারি আমিন ও পেশকারদের অনেককেই পদোন্নতি না নিয়েই চাকরি থেকে অবসরে যেতে হয়েছে। পদোন্নতির তালিকাভুক্ত অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছেন। যা একেবারেই অমানবিক ও সরকারি চাকরি বিধিমালা পরিপন্থী।
জানা যায়, কানুনগো ও উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার পদে পদোন্নতির জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় ৬টি স্মারকে ৬৩০ জনের পদোন্নতির সুপারিশ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ পিএসসি’র কাছে পাঠায়। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের মধ্যে রয়েছে-চাকরির সন্তোষজনক এসিআর (২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত), যাচাই-বাছাইয়ে বিবেচিত হওয়াদের প্রত্যয়নপত্র ও পদোন্নতি দেয়া সংক্রান্ত আদালতের রায়।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের এই প্রস্তাবনার আলোকে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন একটি চেক লিস্ট করে ৬টি স্মারকে প্রেরিত ৬৩০ জনকে ২৯৪ ও ২৯৫ নম্বর স্মারকে পদোন্নতি প্রদান দ্রুত নিশ্চিত করে পিএসসি’কে অবহিত করতে বলে। কিন্তু ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই পদোন্নতি দেয়া নিয়ে বিলম্ব ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা তৈরি করা হলে পিএসসি ৩৩১ ও ৩৩৭ নম্বর স্মারকে পুনরায় পদোন্নতি প্রদান দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য ভূমি সচিবকে চিঠি দেয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় পিএসসি’র এসব চিঠিকে পাশ কাটিয়ে পদোন্নতির প্রক্রিয়াটি বিলম্ব করতে নানা ধরনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা অব্যাহত রেখেছে।
জানা গেছে, কানুনগো ও উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার পদে পদোন্নতি দেয়া নিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সৃষ্ট জটিলতার পেছনে ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ভূমি মন্ত্রণালয় যাদের নামের তালিকা পিএসসি’র কাছে পাঠায়নি এবং পিএসসি থেকে যাদের পদোন্নতির সুপারিশ প্রদান করা হয়নি- এমন কিছু ব্যক্তিকে পদোন্নতি দেয়ার জন্যই এমন টালবাহানা করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিএসসি’র এক সদস্য জানান, ভূমি মন্ত্রণালয় যে ৬টি স্মারকে প্রস্তাব পাঠিয়েছে; আমরা তা যাচাই বাছাই করে পাঠানো স্মারকের সকলকে পদোন্নতি দিতে বলেছি। কিন্তু পদোন্নতি দেয়া নিয়ে কেন ভূমি মন্ত্রণালয় বিলম্ব করছে তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। এখন ভূমি মন্ত্রণালয় বলছে, পিএসসি থেকে শুধু স্মারক নম্বর উল্লেখ করে পদোন্নতি দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে যাদের পদোন্নতির কথা বলা হয়েছে- সংশ্লিষ্ট ৬টি স্মারকে তাদের নাম উল্লেখ করে তালিকাসহ সুপারিশ পুনঃপ্রেরণের জন্য পিএসসি’কে চিঠি দেয়া হয়েছে। এই সদস্যের মতে, ভূমি মন্ত্রণালয় আমলাতান্ত্রিক জটিলতা সৃষ্টির জন্যই এমন চিঠি চালাচালি করছে। এসবের কোন দরকার ছিল না।
এ নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. ম. তামিম হোসেন বলেন, পদোন্নতি নিয়ে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা সৃষ্টি হলে মাঠ প্রশাসনে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। তার মতে, ভূমি মন্ত্রণালয় পদোন্নতি প্রদানে নিমিত্তে যোগ্য প্রার্থীদের নাম প্রস্তাব করেছে এবং কমিশন বিধি মতে সুপারিশ করেছে। কাজেই পিএসসি’র সুপারিশ মতে সকলের পদোন্নতি পাওয়াটা আইনগত অধিকার।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক গোলাম মুর্তজা বলেন, সুপারিশপ্রাপ্তদের পদোন্নতি দ্রুত দেয়া হলে আদালতে ঝুলে থাকা মামলাগুলো যেমন দ্রুত নিষ্পত্তি হবে; তেমনি সরকারের অনেক আর্থিক সাশ্রয় হবে। তাছাড়া, এসব পদোন্নতি নিশ্চিত করার পর অন্যান্য কর্মচারীদের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাবে।
এদিকে, প্রায় ১৪শ’ কানুনগো ও উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার পদ শূন্য থাকায় মাঠ প্রশাসন স্থবির হয়ে পড়েছে। ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। সরকারের ডিজিটাল জরিপ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এতে করে, ভূমি মালিকরা কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন