বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

দাম বাড়লো কবর সংরক্ষণে

এতে সাধারণ মানুষ কবর দেয়ার সুযোগ পাবে : ডিএনসিসি মেয়র

একলাছ হক | প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

নিরাপদ হোক সাড়ে তিন হাত মাটি। সেই নিরাপত্তার জন্য রাজধানী ঢাকার সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রিয়জনের কবর সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকেন স্বজনরা। কিন্তু দিন দিন রাজধানীর কবরস্থানগুলোতে যাতে জায়গা সঙ্কট দেখা না দেয় সেই উদ্যোগ নিয়েছে সিটি করপোরেশন। এজন্য ঢাকার নির্ধারিত কবরস্থানগুলোতে প্রিয়জনের কবর সংরক্ষণে নিরুৎসাহিত করছে। এর ফলে কবর সংরক্ষণ ফি বাড়িয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অধীনে ছয়টি কবরস্থানে লাশ দাফনে নতুন নীতিমালা জারি করেছে ডিএনসিসি। গত ১৮ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কবরস্থান সমূহের নীতিমালা-২০২২ প্রণয়ন করা হয়। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী কবর সংরক্ষণ করা যাবে ১৫ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত। এজন্য একটি কবর সংরক্ষণে এক থেকে সর্বোচ্চ দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত খরচ হবে। ডিএনসিসির সচিব (অ.দা.) মোহাম্মদ মাহে আলমের সই করা এই নীতিমালা ওই দিন থেকেই কার্যকর হয়েছে।
কবর দেয়ার জন্য নয় বরং কবর সংরক্ষণকে নিরুৎসাহিত করতে ডিএনসিসি কবর সংরক্ষণ ফি বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন কবরস্থানে কবর দেয়ার ফি বাড়ানো হয়নি। বরং কবর সংরক্ষণের জন্য ফি বাড়ানো হয়েছে। কবর সংরক্ষণে নিরুৎসাহিত করতেই মূলত সংরক্ষণ ফি বাড়ানো হয়েছে। প্রতিনিয়ত বিপুল সংখ্যক আবেদন আসে কবর সংরক্ষণের জন্য। এভাবে কবর সংরক্ষণ করা হলে কবর দেয়ার জায়গা কমে যাবে। আশা করছি ফি বৃদ্ধির কারণে কবর সংরক্ষণের আবেদন অনেক কমবে এবং সাধারণ মানুষ কবর দেয়ার সুযোগ পাবে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর উত্তরায় ডিএনসিসির উন্নয়নকৃত উত্তরা ৪নং সেক্টর কবরস্থান উদ্বোধনকালে ডিএনসিসি মেয়র এসব কথা বলেন।
ডিএনসিসির কবরস্থানে জনগণ সীমিত ফিতে দাফনের সুযোগ পাচ্ছে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, ডিএনসিসির আওতাধীন কবরস্থানে প্রতিটি লাশ দাফন বাবদ রেজিস্ট্রেশন ফি মাত্র ৫০০ টাকা এবং দুঃস্থ, অসহায় ও বিত্তহীন মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই ফি মাত্র ১০০ টাকা। এছাড়াও কেউ যদি ১০০ টাকাও পরিশোধ করতে অপারগ হয় তার জন্য বিনামূল্যে দাফনের সুযোগও রয়েছে। কবরস্থানসহ অন্যান্য স্থাপনা মেইনটেন্সের জন্য সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি জনগণকে, কমিউনিটিকে এগিয়ে আসতে হবে।
সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বনানী কবরস্থান বাদে ঢাকা উত্তর সিটিতে আরও পাঁচটি কবরস্থান আছে। কবরস্থানগুলো হলো উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর কবরস্থান, উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর কবরস্থান, উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টর কবরস্থান, মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান এবং রায়েরবাজার স্মৃতিসৌধসংলগ্ন কবরস্থান। এর মধ্যে উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরের কবরস্থানটি নতুন। আগে কবরস্থানটি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নিয়ন্ত্রণে ছিল।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, নতুন করে ফি বাড়ানোর কারণে সাধারণ মানুষকে কবর সংরক্ষণে নিরুৎসাহিত করা। কারণ, অনেকেই কবর সংরক্ষণ করতে চান। কিন্তু রাজধানীর কবরস্থানে জায়গা নেই। ১৫ বছর ও ২৫ বছর মেয়াদে কবর সংরক্ষণের জন্য এখন দেড় শতাধিক আবেদন জমা পড়েছে। নীতিমালা সংস্কারের জন্য এত দিন অনুমতি দেওয়া বন্ধ ছিল। এখন নতুন নীতিমালা হয়েছে। তাই বর্ধিত ফিতে কবর সংরক্ষণের অনুমতি দেওয়া হবে। আগে ১০, ১৫, ২০, ২৫ বছর পর্যন্ত কবর সংরক্ষণ করার সুযোগ ছিল। এখন নতুন নীতিমালায় ১৫ বছর বা ২৫ বছর মেয়াদি কবর সংরক্ষণ করতে হবে। আগে বনানী কবরস্থানে ১৫ বছর কবর সংরক্ষণে ফি ছিল ২৪ লাখ, এখন তা বাড়িয়ে ১ কোটি টাকা করা হয়েছে। একই কবরস্থানে আগে ২৫ বছরের জন্য কবর সংরক্ষণ ফি ৪৫ লাখ টাকা ছিল। এখন ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা করা হয়েছে। উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টর কবরস্থানে আগে ১৫ বছর কবর সংরক্ষণ ফি ছিল ২৪ লাখ, এখন ৩০ লাখ টাকা করা হয়েছে। আর ২৫ বছরের ফি ৪৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ লাখ টাকা করা হয়েছে। মিরপুর কবরস্থানে আগে ১৫ বছর কবর সংরক্ষণ ফি ছিল ৬ লাখ, এখন তা ২০ লাখ করা হয়েছে। আগে ২৫ বছর কবর সংরক্ষণ ফি ছিল ১১ লাখ, এখন তা ৩০ লাখ করা হয়েছে। উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর কবরস্থানে আগে ১৫ বছর কবর সংরক্ষণ ফি ছিল ৬ লাখ, এখন তা ৭৫ লাখ টাকা করা হয়েছে। ২৫ বছর কবর ফি ছিল ১১ লাখ, এখন তা এক কোটি টাকা করা হয়েছে। উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর কবরস্থানে ১৫ বছর কবর সংরক্ষণ ফি ছিল ৬ লাখ, এখন তা বেড়ে ৫০ লাখ টাকা করা হয়েছে। আর ২৫ বছরের কবর সংরক্ষণ ফি ৭৫ লাখ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া রায়ের বাজার কবরস্থানে আগে ১৫ বছর কবর সংরক্ষণ ফি ছিল ৬ লাখ, এখন তা ১০ লাখ করা হয়েছে। এছাড়া ২৫ বছর কবর সংরক্ষণ ফি ছিল ১১ লাখ, এখন তা বাড়িয়ে ১৫ লাখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটির সমাজকল্যাণ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, কবর সংরক্ষণে মানুষকে নিরুৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে এই ফি বাড়ানো হয়েছে। কেননা, ইতিমধ্যে ঢাকা উত্তর সিটির অনেক কবরস্থানে নতুন করে কবর দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই। সেখানে পুরোনো কবরের ওপর আবার নতুন কবর দিতে হচ্ছে। তাই ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ মানুষকে কবর সংরক্ষণে নিরুৎসাহিত করতে চাইছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন