শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ভ্যলেন্টাইন ডে সামনে রেখে খুলনায় উঠতি বয়সিদের বেহায়াপনা তুঙ্গে

ডিএম রেজা, খুলনা থেকে | প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

ঘটনা ১ : ৮ ফেব্রæয়ারি বুধবার রাত সাড়ে ৯টা। নগরীর একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়ালো লাল রঙ এর একটি টয়োটা করোলা। উঠতি বয়সী একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে গাড়ি থেকে নেমে লিফট ধরে চলে গেলেন রেস্টুরেন্টটির দশম তলায়। রুফটপ ওই রেস্টুরেন্টের কোনায় একটি টেবিলে বসে প্রথমে কোমল পানীয়র সাথে ছোট একটি সিরাপের বোতল থেকে কিছু একটা ঢেলে খাওয়ার পর দুজনই আয়েশি ভঙ্গিতে ধূমপান শুরু করলেন। এ দৃশ্য দেখে রেস্টুরেন্টে পরিবার নিয়ে খেতে আসা অনেকেই বিব্রত হলেন। কেউ কেউ বের হয়ে গেলেন। এসব দিকে কোনো ভ্রæক্ষেপ নেই ওই তরুণ তরুণীর। এক পর্যায়ে ছেলেটি সবার সামনে চেঁচিয়ে বললো আজ প্রোপজ ডে, আমি তোমাকে প্রোপজ করছি।

ঘটনা ২ : ৯ ফেব্রæয়ারি বৃহষ্পতিবার সকালে নগরীর শেষ প্রান্তে গিলাতলা শিশু পার্কে গিয়ে হাতে গোনা কয়েকজন শিশু খুঁজে পাওয়া গেলেও বেশি পাওয়া গেছে স্কুল কলেজ পালিয়ে আসা ছেলে মেয়েদের। লোকলজ্জা সংকোচ কিছুই যেন তাদের মাঝে নেই। নাম প্রকাশ করা যাবে না এমন শর্তে দুই তিনজন সাহসী প্রেমিক (কথিত) জানালো সামানে ভ্যালেন্টাইন ডে। এক নিশ্বাসে তারা বলে গেলে ৭ ফেব্রæয়ারি ছিল গোলাপ দিবস ৮ ফেব্রæয়ারি প্রোপজ ডে, ৯ ফেব্রæয়ারি চকলেট দিবস, ১১ ফেব্রæয়ারি প্রমিস ডে, ১২ ফেব্রæয়ারি চুম্বন দিবস, ১৩ ফেব্রæয়ারি হাগ ডে, ১৪ ফেব্রæয়ারি-ভ্যালেন্টাইন ডে। এগুলো আমরা উদযাপন করব। আজ এসেছি চকলেট নিয়ে। কাল আবার আসব। এদিকে, প্রকাশ্যে তাদের এই ঢলাঢলি দেখে বিব্রত শিশু পার্কে আসা অভিভাবকেরা।

ঘটনা ৩ : ৭ ফেব্রæয়ারি মঙ্গলবার বিকেলে খুলনার ৫ নম্বর ঘাট নদীর পাড়ে দেখা গেল নদীমুখি প্রতিটি বেঞ্চে জোড়ায় জোড়ায় বসে আছে প্রেমিক যুগল। একটি ছেলেকে দেখা গেল হাঁটু মুড়ে একটি মেয়ের সামনে দাঁড়িয়ে গোলাপ ফুল তুলে দিয়ে তাকে আলিঙ্গন করছে। দৃশ্যটি পাশ্চাত্য সমাজে খুব সাধারণ ব্যাপার হলেও এদেশের সমাজে তা অস্বাভাবিক। তথাকথিত ভ্যালেন্টাইন ডে কে সামনে রেখে এভাবেই উঠতি বয়সীদের মধ্যে খুলনায় বেড়েছে উশৃঙ্খলতা ও বেহায়াপনা। নগরীর ফুলের দোকানগুলো তাদের ভিড়। গিফট শপগুলোতেও চলছে কেনাকাটা। নানা ছলছুতায় পরিবারের সদস্যদের এটা সেটা বুঝিয়ে প্রেমিক প্রেমিকাদের জন্য টাকা নিয়ে তারা গিফট কিনছে। পার্ক, হোটেল, বিনোদন কেন্দ্রে তারা মিলিত হচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় তাদের এভাবেই কেটে যাচ্ছে।

নাম প্রকাশ করা হবে না এমন শর্তে খুলনার একটি সরকারি অধিদফতরের কর্মকর্তা জানান, দু দিন আগে বাসায় তার আলমারি থেকে কিছু টাকা খোয়া যায়। বিষয়টি তিনি খুলনা সদর থানাকে অবহিত করেন। সন্দেহ করা হয় গৃহপরিচারিকাকে। কিন্তু পরে জানা যায়, ওই টাকা চুরি করেছে তারই কলেজ পড়–য়া ছেলে। বিষয়টি নিয়ে তিনি আর থানা পুলিশ করেননি। তবে ছেলে স্বীকারোক্তি দিয়েছে, ভ্যালেন্টাইন ডে তে বন্ধুদের নিয়ে পার্টি করার জন্য টাকা দরকার তাই সে এ কাজ করেছে।

নগরীর দৌলতপুর ও ফুলবাড়ীগেট এলাকার কয়েকটি কোচিং সেন্টার ঘুরে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি গত দু তিন ধরে কমে গেছে। শিক্ষা কোচিং এর পরিচালক এহসানুল হক সরাসরি না বললেও স্বীকার করলেন ফেব্রæয়ারি মাসের কয়েকটি দিন নানা উছিলায় ছেলে মেয়েরা কোচিংয়ে আসে না। তবে তারা ঠিকই কোচিং করার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়।

খুলনার সিনিয়র সাংবাদিক সেখ ইউসুফ আলী বলেন, অবাধ আকাশ সংস্কৃতির নামে ভারতীয় অপসংস্কৃতি আমাদের তরুণ সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। নারী পুরুষের অবৈধ সম্পর্ক গড়তে উৎসাহী করছে ভারতীয় সিরিয়ারগুলো। আবার সংসার ভাঙ্গতেও ওই সব সিরিয়াল ভ‚মিকা রাখছে। মুঠোফোন যতটুকুনা তরুণ প্রজন্মের জন্য ভাল করছে, তারচেয়ে বেশি তাদের খারাপ করছে। এখন সিনিয়রদের প্রতি জুনিয়রদের রেসপেক্ট সমাজ থেকে উঠে যাচ্ছে। মানুষের মাঝে লজ্জা, সংকোচ সবই কমে যাচ্ছে। তাই প্রকাশ্যেই নানা ধরণের অসামাজিক কাজে লিপ্ত হচ্ছে তারা।

খুলনা বিএল কলেজের সাবেক শিক্ষক ও সমাজকর্মী অধ্যাপক আলী আহসানুল হক বলেন, সামাজিক অবক্ষয় এখন একটি মারাত্মক ব্যধিতে পরিণত হয়েছে। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চললে এ থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব। তাছাড়া, পরিবারকে সচেতন হতে হবে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, অভিভাবকেরা সন্তানদের ঠিক মত সময় দেন না। আবার সন্তানেরা কোথায় যায় কী করে কাদের সাথে মেলামেশা করে, তাও খবর রাখেন না। সন্তানদের হাতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকা কখনোই দেয়া যাবে না। মোট কথা সন্তানদের মনিটরিং করতে হবে পরিবার থেকেই। তবে, স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীও এ ক্ষেত্রে অনেক কিছুই করণীয় রয়েছে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সামিউল আলম বলেন, সামাজিক মূল্যবোধের অভাব প্রকটভাবে দেখা দিয়েছে। সমাজে একটা অস্থিরতা বিরাজ করছে। নতুন প্রজন্ম খারাপ বিষয়গুলোকে খুব দ্রæত গ্রহণ করছে। ভাল বিষয়গুলো তাদের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে আমরা একটি ব্যর্থ প্রজন্ম পাব। তাই সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে এ বিষয়ে এগিয়ে আসার এখনই সময়।

ইসলামী আন্দোলন খুলনার ভাইস প্রেসিডেন্ট, বিশিষ্ট আলেম সেখ নাসিরউদ্দিন বলেন, কোনো সভ্য সমাজে ভ্যালেন্টাইন ডে বা এ জাতীয় কোনো অনুষ্ঠান থাকতে পারে না। এগুলো বিজাতীয় সংস্কৃতি। আমাদের জন্য নয়। এসব থেকে দূরে থাকা উচিৎ। সুস্থ বিনোদনের অনেক উপকরণ আমাদের সমাজেই রয়েছে। ভালকে গ্রহণ ও মন্দকে আমাদের বর্জন করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন