সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মেট্রোরেলের জায়গা দখল

একলাছ হক | প্রকাশের সময় : ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

মেট্রোরেলের যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। স্বপ্নের এই মেট্রারেল চালুর কিছুদিন যেতে না যেতেই দখল হচ্ছে মেট্রোরেলের জায়গা। দিন দিন মেট্রোরেলের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা ওঠিয়ে দখল করে নিচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। অবৈধভাবে দোকানপাট তৈরি করে ব্যবসা করছেন অনেকে। এমনটি এসব এলাকায় মসজিদের নামেও অবৈধভাবে মেট্রোরেলের জায়গা দখল করা হচ্ছে। পেশি শক্তির মাধ্যমে প্রভাব খাটিয়ে এসব জায়গায় দোকানপাট ওঠানো ও মসজিদ করা হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়।

জানতে চাইলে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক ইনকিলাবকে বলেন, রাস্তার পাশে কোন স্থাপনা গড়ে তোলা হলে এটা আমাদের দায়িত্ব না। মেট্রোরেলের কাজ করার সময় আমরা রাজউক ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাথে কথা বলেই নিয়েছি।
উত্তরার দিয়াবাড়ি গোল চত্বর এলাকায় সরেজমিন দেখা যায়, গোলচত্বরের উত্তর ও পশ্চিম পাশে গড়ে তোলা হয়েছে বেশকয়েকটি দোকান ও টঙঘর। এসব দোকান গড়ে তোলা হয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায়। গোলচত্বরের পশ্চিম পাশে টিনের চালা ও বেড়া দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে একটি মসজিদ। তবে মসজিদটি গত সাত থেকে আট মাস আগে গড়ে তোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় এক দোকানদার।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, আগে এখানে কোনো মসজিদ ছিলো না। মেট্রোরেলের জায়গা নেয়ার পর এখানে মসজিদ করা হয়েছে। মেট্রোরেলের লাইনের নিচে রাস্তার পাশেই গড়ে তোলা হয়েছে এই মসজিদ। আসলে এটা জায়গা দখল করার জন্য গড়ে তোলা হয়েছে।

মেট্রোরেল দিয়াবাড়ি গোলচত্বর জামে মসজিদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. রুবেল ইনকিলাবকে বলেন, এই মসজিদটি মেট্রোরেলের জায়গায় করা হয়েছে। এটা প্রায় তিন/চার বছর আগে প্রতিষ্ঠা করা হয়। স্থানীয় লোকজনের নামাজ পড়তে অসুবিধার কথা বিবেচনা করে এই মসজিদটি করা হয়েছে।
এদিকে, উত্তরা উত্তর মেট্রোরেল স্টেশন এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠেছে তিনচাকার অটোরিকশার স্ট্যান্ড। এসব অটোরিকশার স্ট্যান্ডে জটলা করে দাঁড়িয়ে থাকে রিকশাগুলো। এতে রাস্তায় অন্য যানবাহন চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে।

এছাড়াও মেট্রোরেলের পিলারে লাগানো হচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পোস্টার। এতে সৌন্দর্য হারাচ্ছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাটি। রাজধানীর মিরপুর-১২ নম্বর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের যতগুলো পিলার আছে এসব পিলারের অধিকাশেংই রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের পোস্টার লাগিয়ে সৌন্দর্য নষ্ট করা হচ্ছে। কার্যকর তদারকির ব্যবস্থা না থাকায় রাজধানীতে মেট্রোরেল চালু হওয়ার আগেই পিলার দখল করে নিয়েছিলেন নেতাকর্মীরা।

মিরপুুরের এক বাসিন্দা বলেন, রাজধানীতে মেট্রোরেল হওয়া এটা আমাদের জন্য গর্বের। তবে চালু হওয়ার আগেই এই পিলারগুলোতে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের পোস্টার লাগিয়ে সৌন্দর্য নষ্ট করেছে। এখন মেট্রোরেল চালু হওয়ার পরও পিলারগুলোতে পোস্টার লাগিয়ে নষ্ট করছে।

মিরপুর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে সরেজমিন দেখা গেছে, বেশিরভাগ পিলারেই পোস্টার লাগানো হয়েছে। তবে পল্টন ও মতিঝিল এলাকায় পিলারগুলোতে পোস্টার লাগানো হয়েছে বেশি।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ইতোমধ্যে বলেছেন, মেট্রোরেলের পিলারে লাগানো পোস্টার নিজ দায়িত্বে না সরালে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যারা মেট্রোরেলের পিলারে পোস্টার লাগিয়েছেন, তারা নিজ দায়িত্বে সেগুলো সরাবেন। অন্যথায় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জানা যায়, গত ২৯ ডিসেম্বর থেকে মেট্রোরেল চালু হলেও চলছে সীমিত সময়ের জন্য। বর্তমানে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তথা মাত্র মাত্র ৪ ঘণ্টা চলছে মেট্রো। এবার জুলাই মাস হতে ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলবে মেট্রোরেল।

এ সম্পর্কে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক জানিয়েছেন, আগামী জুলাই মাসে প্রতিদিন ফজরের সময় থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল করবে। তখন অফিসগামী মানুষও বেশি চলাচল করতে পারবে। এখন মেট্রোরেলের চলার সময় ও অফিস টাইমের সঙ্গে মিস ম্যাস রয়েছে। আমরা আগেও বলেছিলাম পর্যায়ক্রমে ধাপে ধাপে পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রমে যাব। পৃথিবীর সব মেট্রোরেল কিন্তু এভাবেই শুরু হয়। এটা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড প্র্যাক্টিস। আমরাও এটা অনুসরণ করে মেট্রোরেল পরিচালনা করছি। মেট্রোরেল পুরোদমে উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত চালু হলে ঘণ্টায় ৬০ হাজার ও দৈনিক পাঁচ লাখ যাত্রী পরিবহন করতে পারবে।

এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, আগামী ১৮ ফেব্রæয়ারি থেকে চালু হচ্ছে মেট্রোরেলের উত্তরা সেন্টার বা দুই নম্বর স্টেশন। এরপরের ধাপেই ১ মার্চ মিরপুর-১০ স্টেশন চালু হবে। আর অবশিষ্ট ৪টি স্টেশন আগামী ২৬ মার্চের মধ্যেই চালু হবে। মেট্রোরেলের সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ সেবা পেতে আগামী জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

ঢাকার উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে প্রথম মেট্রোরেল যেটা এমআরটি লাইন-৬ নামে পরিচিত। এ প্রকল্প সরকার হাতে নেয় ২০১২ সালে। ২৮ ডিসেম্বর এই পথের প্রথমাংশ উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চালু হলেও দ্বিতীয় অংশ আগারগাঁও থেকে মতিঝিল ২০২৩ সালের জুন মাসে চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। আর মতিঝিল থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত বর্ধিতাংশ চালু হতে পারে ২০২৫ সালে। এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্পের মূল ব্যয় ছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। পরে মতিঝিল থেকে কমলাপুর বাড়তি অংশ যোগ হওয়ায় ব্যয় বাড়ে ১১ হাজার ৪৯৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা। তখন সর্বোমোট ব্যয় দাঁড়ায় ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এর মধ্যে উন্নয়ন সহযোগী জাইকার অর্থায়ন ১৯ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা ও সরকারি অর্থায়ন ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন