সিএমএম আদালত এলাকা থেকে ছিনিয়ে নেয়া মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে গ্রেফতার করা যায়নি প্রায় তিন মাসেও। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে হত্যা, ডাকাতি, চুরিসহ নানা অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত বা ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক অনেক আসামি গ্রেফতার করলেও স্পর্শকাতর আদালত প্রাঙ্গন থেকে ছিনতাইকৃত দুই জঙ্গী কেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে তার সঠিক উত্তর নিতে পারছেন না তদন্তের সাথে জড়িত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্মকর্তারা। তবে পলাতক দুই জঙ্গিকে গ্রেফতার করতে না পারলেও ওই ঘটনায় জড়িত মেহেদী হাসান অমি ওরফে রাফি (২৪) ও প্রয়াত রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস ওমর ফারুককে গ্রেফতার করে সিটিটিসি।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, আদালত থেকে প্রকাশ্যে দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়া এবং প্রায় তিন মাসের মধ্যে গ্রেফতার না হওয়াটা রহস্যজনক। পুলিশ ও র্যাবসহ আইন-শৃংখলা রক্ষায় সম্পৃক্ত সংস্থাগুলোর এত সফলতার মধ্যে দুই জঙ্গি গ্রেফতার না হওয়া বেমানান। যেখানে ৩০ বছর বা তার চেয়েও বেশি সময় ধরে পলাতক থাকা চুরি, ডাকাতি বা ছোট কোন অপরাধে সম্পৃক্ত অপরাধী গ্রেফতার হচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনেক পুরাতন, জটিল ও ক্লু লেস মামলায় জড়িতদের শনাক্ত বা গ্রেফতারের ঘটনা এখন প্রতিনিয়তই ঘটছে। গত ২০ নভেম্বর ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গন থেকে পুলিশের চোখে-মুখে পিপার স্প্রে নিক্ষেপ করে আবু সিদ্দিক সোহেল ও মাইনুল হাসান শামীমকে ছিনিয়ে নেয় তাদের সহযোগীরা। এ ঘটনায় পাঁচ পুলিশ সদস্যকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।
ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক ইনকিলাবকে বলেন, আদালত থেকে পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গির বিষয়ে পুলিশের একাধিক ইউনিট কাজ করছে। পুলিশ এর আগে অনেক বড় বড় জঙ্গি নেতাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনেছে। পলাতক দুই জঙ্গি যেখানেই পালিয়ে থাকুক তাদেরও গ্রেফতার করে আইনের মুখোমুখি করা হবে।
পলাতক দুই জঙ্গির বিষয়ে র্যাব কাজ করছে জানিয়ে সংস্থাটির লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, জঙ্গিরা নতুন কোনো প্ল্যানে কাজ করতে পারে। তবে র্যাব এক্ষেত্রে সব সময় সতর্ক আছে। পলাতক দুই জঙ্গিসহ তাদের সহযোগিদেরও আইনের আওতায় আনতে র্যাবের গোয়েন্দা দল ও সবগুলো ইউনিট কাজ করছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, আদালত থেকে ছিনিয়ে নেয়া দুই আসামি গ্রেফতারে কাজ করছে গোয়েন্দারা। আশা করা যাচ্ছে, দ্রুত সময়ের মধ্যেই তারা গ্রেফতার হবে। তারা যদি বিদেশে পালান ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাদের ফিরিয়ে আনা হবে। এখন পর্যন্ত বিদেশে পালানোর বিষয়ে কোনো ধরনের গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া যায়নি।
জানা যায়, পলাতক দুই জঙ্গি নিষিদ্ধঘোষিত আনসার আল ইসলামের সঙ্গে জড়িত। আনসার আল ইসলাম কাট আউট (একই কাজে যুক্ত এক দলের তথ্য অন্য দল জানে না) পদ্ধতিতে কাজ করার কারণে গ্রেফতার মেহেদীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও কোনো তথ্য জানতে পারেনি পুলিশ। জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় অংশ নেয়া আরও সাতজনকে চিহ্নিত করা গেলেও তাদের অবস্থানের বিষয়ে এখনো নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ছিনিয়ে নেয়া দুই জঙ্গি জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন এবং লেখক ও বøগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার মৃত্যুদÐপ্রাপ্ত আসামি। এছাড়া আরও কয়েকটি হত্যা মামলারও আসামি তারা।
এ ঘটনা তদন্তের সাথে সম্পৃক্ত সিটিটিসির এমন একজন কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় ওমর ফারুক নামে এক আইনজীবী জড়িত। গত ২৬ ডিসেম্বর তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ওমর ফারুক পালিয়ে যাওয়া এক জঙ্গির ভগ্নিপতি ও প্রয়াত রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস ছিলেন।
জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় মেহেদী হাসান অমি ওরফে রাফি নামে একজনকে গ্রেফতার করে সিটিটিসি। রাফি মোটা অঙ্কের টাকা এনেছিলেন। এই টাকা ছিনিয়ে নেয়া জঙ্গিদের হাতে দেন তিনি। যাতে জঙ্গিরা টাকা-পয়সা দিয়ে তাদের পরবর্তী কার্যক্রম চালাতে পারেন। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় গ্রেফতার মেহেদী আগে থেকেই পরিকল্পনা করেছিলেন ছিনিয়ে নেয়ার পর জঙ্গিদের হাতে টাকা দেবেন। অমি প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় একাধিক তদন্ত কমিটি: দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ। সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কারা অনুবিভাগ) মো. হাবিবুর রহমানকে প্রধান করে এ কমিটি গঠন করে আদেশ জারি করা হয়। কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শকের প্রতিনিধি (ডিআইজি পদমর্যাদার নিচে নন), অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক ও ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। পুলিশ সদর দপ্তরের একজন ডিআইজিকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। দুই জঙ্গি মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত সামির ও মো. আবু ছিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব পালানোর ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারকে সভাপতি করে তদন্ত কমিটি গঠন করে ডিএমপি। তদন্ত কমিটির সভাপতি হলেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হাফিজ আক্তার।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন