বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পুরোদমে চলছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। প্রতিদিন মেলায় বিক্রি হচ্ছে নানা রঙের প্রচ্ছদে ঢাকা নতুন সব বই। তবে এর বাইরেও মেলায় চলছে খাবারের রমরমা ব্যবসা। মেলার ভিতরে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট অংশে রয়েছে এসব খাবারের দোকান। প্রবেশপথেও রয়েছে বেশকিছু ভাসমান দোকানপাট। যেখানে নানারকম লোভনীয় খাবার বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। খাবারের দাম ও মান নিয়ে অভিযোগ রয়েছে মেলায় আগত পাঠক দর্শনার্থীদের। অন্তত ৩০ শতাংশ বেশি মূল্যে খাবার বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের।
মেলায় গিয়ে দেখা যায়, দোকানগুলোতে নেই কোনো খাবারের মূল্য তালিকা। যার থেকে যত পারছে হাতিয়ে নিচ্ছে বিক্রেতারা। কোথাও ৮পিসের এক প্লেট ফুসকা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায় আবার কোথাও তা ১০০টাকায়। অবশ্য এক কর্মচারী বলেন, শিক্ষার্থী পরিচয়ে কেউ আসলে তাদের থেকে খাবারের দাম একটু কম রাখা হয়। আবার অনেক হাফেজ বা মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে খাবার পরিবেশেনের কথাও জানান ওই বিক্রয়কর্মী। নানারকম ফলের তৈরি লোভনীয় রোলার আইসক্রিম বিক্রি হচ্ছে মেলার বাইরে ও ভিতরের খাবারের দোকানগুলোতে। তবে মেলার প্রবেশ পথে যেই আইসক্রিম বিক্রি হচ্ছে ৫০টাকায় একই জিনিস মেলার ভেতর বিক্রি হচ্ছে ১০০টাকায়। তাও তার মান নিয়ে রয়েছে অভিযোগ। ক্রেতারা বলেন, হরেক রকমের ফলের নাম করে কেবল দুই একটা ফল দিয়ে তৈরি হচ্ছে এই আইসক্রিম।
খাবারের দোকান ছাড়াও মেলার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট অংশে রয়েছে নামাজের স্থান ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরিসেবা। এ অংশে খাবারের দোকান বসিয়েছে পুরান ঢাকার হাজী বিরিয়ানী, বিসমিল্লাহ কাবাব, হাজীর বিরিয়ানী এন্ড কস্তুরী কাবাব, ক্যাফে ফোর স্টার, নুর ফাস্ট ফুড এন্ড কাবাব, মেট্রো বেকারস, কফিলাইন জুস এন্ড স্মুদি কর্ণার, ময়মনসিংহ পিঠা ঘর, ফয়সাল বিরিয়ানী ও পুরান ঢাকার নবাব বিরিয়ানী। মূলত নামকরা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভিন্ন ভিন্ন নামে এখানে জায়গা নিয়েছে বলে জানা যায়।
মেলায় এসব দোকানে গিয়ে দেখা যায়, টিএফসিতে একটি চিকেন স্যান্ডউইস বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, একটি চিকেন বার্গার বিক্রি হচ্ছে ১৫০টাকায়। দোকানে কর্মরতরা জানান খাবারের কোনো মূল্য তালিকা নেই। ফয়সাল বিরিয়ানীর সামনে এক প্লেট ফুসকা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। দোকান মালিক বিল্লাল বলেন, ২৮ দিনের জন্য ১২ ফিট বায় ১২ ফিট একটা জমির ভাড়া দিতে হয়েছে ৫ লক্ষ টাকা। সে হিসেবে তো এক প্লেট ফুসকার দাম ১ হাজার হওয়া উচিত। তাও জায়গা বুঝে পেয়েছি মাসের ৭তারিখে।
জাহিদ হাসান নামের ঢাবির মুহসীন হলের এক শিক্ষার্থী জানান, আমি আর আমার এক বন্ধু মেলায় গিয়ে কিছু বই কিনি। বই কেনা শেষে ভাবলাম এখানে তো লোভনীয় কিছু খাবারের দোকানও রয়েছে, তো হালকা নাস্তা করা যায় কিনা। যথারীতি একটা দোকানে গিয়ে মূল্য জিজ্ঞেস না করেই নাস্তার অর্ডার দিলাম। দুইটা পরোটা আর চিকেন চাপ ও কুলড ড্রিংকসে বিল আসলো ৫০০এর কাছাকাছি।
গতকাল মেলার ওই অংশে নুর ফাস্ট ফুডে গিয়ে দেখা যায়, চিকেন চাপ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়, সাথে একেকটা ১০টাকার লুচি বিক্রি হচ্ছে ২০টাকায়। হাঁসের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১৫০টাকায়, হাফ বিরিয়ানী (গরু) ১৬০, চিকেন ১৫০। দোকানের কোথাও নেই কোনো মূল্য তালিকা। ম্যানেজার হাবিবুর রহমান বলেন, যে হারে আমরা খাবার বিক্রি করছি তা বর্তমান বাজার মূল্য হিসেবে ঠিকই আছে। এছাড়া ১২ ফুটের একটা জায়গা ভাড়া নেয়া লাগছে ৫ লক্ষ টাকায়।
পুরান ঢাকার হাজী বিরিয়ানীতে গিয়ে দেখা যায়, একেকটা নরমাল নান রুটি বিক্রি হচ্ছে ৫০টাকায়, একবাটি হালিম ১০০ টাকা, চিকেন চাপ ১৮০ টাকা। চিকেন টিকা (দেশি মুরগী) ২৫০টাকায়, হাঁসের মাংস (হাফ) ২০০ টাকায়, ৩০০গ্রাম মাটন কাচ্চি ২৫০ টাকায়। এখানেও নেই খাবারের কোনো মূল্য তালিকা। ম্যানেজার জুয়েল আহসান বলেন, বাংলা একাডেমি থেকে প্রতিবছর একটা মূল্য তালিকা দেয়া হয় যা এবার তারা দেয়নি। তিনি বলেন, ৮ বছর আগে যে জায়গাটা এখানে ৫০ হাজারে পাওয়া যেতো তার জন্য এখন দিতে হচ্ছে ৫ লক্ষ টাকা। বাজারে প্রতিদিনই জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। মোট ৬০ লক্ষ টাকা পরিশোধ করে এখানে জায়গা নিয়েছে মালিকপক্ষ। এ টাকাটাই উঠাতে প্রতিদিন ২ লাখের অধিক বিক্রি করতে হবে। এর বাইরে স্টাফদের বেতন, জিনিসপত্রের দাম তো আছেই। এসব কারণে খাবারটা একটু বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
গতকাল সোমবার মেলায় নতুন বই এসেছে ১০৫টি। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ : আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মফিদুল হক। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন হারিসুল হক এবং অপূর্ব শর্মা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আবেদ খান। আজ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন শাহনাজ মুন্নী, তসিকুল ইসলাম, দন্ত্যস রওশন এবং মামুন রশীদ।
আজকের সময়সূচি: আজ মঙ্গলবার অমর একুশে বইমেলার ১৪তম দিন। মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে বাংলা সাহিত্যের অনুবাদ এবং বিদেশি সাহিত্যের বাংলা অনুবাদ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন জি এইচ হাবীব এবং শামসুদ্দিন চৌধুরী। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন সম্পদ বড়–য়া, রফিক-উম-মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক মো. আবু জাফর এবং মাহবুবা রহমান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন ফকরুল আলম।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন