মাঘ মাস গতকাল শেষ হলো। বসন্ত ঋতুর প্রথম মাস ফাল্গুন সবে শুরু আজ। এখনই দিনমান সূর্যের তেজ প্রখর। দুপুর না হতেই রাজধানী ঢাকা, বন্দরনগরী চট্টগ্রাম এমনকি সমুদ্রপাড়ের কক্সবাজারসহ দেশের অনেক জায়গায় গরমে ঘামানোর অবস্থা। ফ্যান-এসি চালাতে হচ্ছে। দিনে এনে দিনে খাওয়া শ্রমিক-মজুররা কাহিল হয়ে পড়ছেন। আবহমান বাংলাদেশে ফাল্গুন মাসের বেশিরভাগ সময় পর্যন্ত শীত শীত আমেজ থাকে। কিন্তু এই বসন্তে গ্রীষ্মকালের মতোই খরতাপ। চৈত্র-বৈশাখের মতো বইতে শুরু করেছে গরম হাওয়া।
মাঘের শেষ দিনে গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টেকনাফে ৩১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রাতের সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও। চট্টগ্রামে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পারদ উঠে গেছে ২১ ডিগ্রি সে.। যা মৌসুমের এ সময়ের সর্বনিম্ন ‘স্বাভাবিক’ তাপমাত্রার চেয়ে চেয়ে ৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সে. ঊর্ধ্বে! দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়ায় ১০.১ ডিগ্রি সে.। গতকাল ঢাকার তাপমাত্রা ছিল সর্বোচ্চ ২৮ এবং সর্বনিম্ন ১৬ ডিগ্রি সে.। অনেক এলাকায় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে স্থানভেদে ২ থেকে ৫ ডিগ্রি সে. বেশিই রয়েছে।
সর্বশেষ আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় প্রায় সারা দেশে তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে।
এদিকে অনাবৃষ্টি ও আগাম খরার কবলে পড়েছে দেশ। কৃষক-খামারীসহ আপামর মানুষ বৃষ্টির আশায় চাতক পাখির মতো আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন। অথচ বৃষ্টির দেখা নেই। নেই বৃষ্টিবাহী মেঘমালার আনাগোনা। ন্যূনতম স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের অভাবে চারদিকে রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে উঠেছে পরিবেশ-প্রকৃতি। কৃষি-খামার, জনস্বাস্থ্যের ওপর পড়েছে বিরূপ প্রভাব।
আবহাওয়া বিভাগের তথ্য মতে, গত জানুয়ারি মাসে দেশের কোথাও ছিটেফোঁটাও বৃষ্টিপাত হয়নি। নভেম্বর-ডিসেম্বর-জানুয়ারি টানা তিন মাসে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টির ৮৮ শতাংশই ঝরেনি। অর্থাৎ পুরো অনাবৃষ্টি-খরা দশায় কেটেছে গেল তিন মাস। আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, চলতি ফেব্রæয়ারি ও আগামী মার্চ মাসেও স্বাভাবিকের তুলনায় কম বৃৃষ্টিপাত অর্থাৎ খরা-অনাবৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। এ অবস্থায় খরাদশা চলতে পারে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ মাস।
অসময়েই গ্রীষ্মের মতো তীর্যক সূর্যের কড়া রোদে নদ-নদী-নালা, খাল-হাওর-বাওড়, পুকুর-জলাশয় শুকিয়ে তলানিতে ঠেকেছে। বিল-মাঠ-ঘাট ফেটে চৌচির। পানির উৎসগুলো প্রায় সর্বত্র পানিশূণ্য হয়ে গেছে। সেই সাথে ভ‚গর্ভস্থ পানির স্তর স্থানভেদে কোথাও ৮ থেকে ১০ ফুট, কোথাও ৩০ থেকে ৪০ ফুট নিচের দিকে নেমে গেছে।
সেচের জন্য ভ‚-উপরিভাগের পানির সঙ্কট সৃষ্টি হওয়ায় এখনই ভ‚গর্ভস্থ পানি অত্যধিক হারে উত্তোলন করা হচ্ছে। এর ফলে ভ‚গর্ভস্থ পানির স্তর আরও নিচে নামছেই। ভয়াবহ মাত্রায় হ্রাস পাচ্ছে ভ‚-উপরিভাগ ও ভ‚গর্ভস্থ পানির স্টক। মৌসুমের এ সময়ের স্বাভাবিক পরিমাণ বৃষ্টিও না হওয়ায় মাটির উপরের উৎসগুলোতে এবং মাটির নিচে পানি রিচার্জ হচ্ছে না।
আগাম খরা পরিস্থিতিতে দেশের প্রায় সর্বত্র মৌসুমী ফল ও ফসল, ক্ষেত-খামার, মাছের চাষ থেকে শুরু করে সমগ্র কৃষি খাত সঙ্কট দশায় পড়েছে। ব্যাহত হচ্ছে বোরো বীজতলার আবাদ ব্যাহত হচ্ছে। ফলের বাগান শুকিয়ে যাচ্ছে। চাষাবাদে পানির অভাব পূরণ করতে গিয়ে সেচের বাড়তি খরচ কৃষকের হিমশিম অবস্থা। অনাবৃষ্টি-খরার কারণে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে কৃষি জমি ও খাবার পানিতে লবণাক্ততার আগ্রাসন বৃদ্ধি পেয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজুমল হক জানান, অস্থায়ীভাবে আকাশ আংশিক মেঘলাসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। রাজশাহী, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র রাতের তাপমাত্রা এক থেকে ২ ডিগ্রি সে. হ্রাস পেতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। এরপরের ৫ দিনে তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন