নিজেই নিজেকে রক্তাক্ত জখম করে ঢাকার এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ছিনতাই ও নারী নির্যাতন মামলার অভিযোগ এনেছিলেন এক নারী। কিন্তু পুলিশের তদন্তে অভিযোগটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়। পরে ওই নারী ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর ওপর ভিন্ন এলাকায় হামলা চালান। এমন অভিযোগ করেছেন লালবাগ থানাধীন নিউ পল্টন লাইনের বাসিন্দা ব্যবসায়ী আকবর হোসেন মোহন। এছাড়া একই নারীর বিরুদ্ধে এটিএম কার্ড ও পিন নম্বর চুরি করে টাকা আত্মসাৎ ও হুমকির অভিযোগ এনে মামলা করেছেন তারই চতুর্থ স্বামী আবু হোসেন সাজ্জাদ। একই মামলার আসামি ওই নারীর প্রথম পক্ষের সন্তানও।
গত ৭ জানুয়ারি লালবাগ থানায় দায়ের করা ৩২৮ নম্বর জিডির অভিযোগকারি আকবর হোসেন উল্লেখ করেছেন, তিনি আজিমপুর ২৩/ডি নিউপল্টন লাইনের বাসিন্দা। একই বাড়ির দ্বিতীয় তলার বাসিন্দা ডলি বেগমের কাছে কাছে তিনি বিভিন্ন বিল পাওনা রয়েছেন। ওইসব বিলের টাকা চাইলে ডলি বেগম তাকে নারী নির্যাতন মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়েছিলেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওই নারী গত ২১ ডিসেম্বর শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে চকবাজার থানায় আকবরের বিরুদ্ধে একটি ছিনতাইয়ের অভিযোগ আনেন। কিন্তু পুলিশের তদন্ত ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণে অভিযোগটি মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়। ওই নারীর ছিনতাইয়ের অভিযোগটি তখন তদন্ত করেছিলেন চকবাজার থানার এসআই সোহাগ। তিনি গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, মাথাসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাত নিয়ে ডলি বেগম ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন দাবি করে থানায় একটি অভিযোগ দেন। তখন ওসির নির্দেশে প্রাথমিকভাবে তদন্ত করি। ঘটনাস্থল ও আশপাশের ভিডিও পর্যালোচনা করি। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিলেন উল্লেখিত ঘটনার সময় অভিযুক্ত আকবর হোসেনের অবস্থান ভিন্ন জায়গায় থাকায় অভিযোগটির সত্যতা পাওয়া যায়নি। তাই অভিযোগটি আর মামলা হিসেবে দায়ের করা হয় নি। ঢাকা মেডিকেল থেকে ওই নারী চিকিৎসা নিয়েছেন বলে মৌখিকভাবে দাবি করলেও কোনো চিকিৎসা সনদ দেখাতে পারেনি। তাই অভিযোগটি মিথ্যা বলে ধরে নেয়া হয়।
এদিকে ওই নারীর চতুর্থ স্বামী আমেরিকা প্রবাসী আবু হোসেন সাজ্জাদ স্ত্রী ডলি বেগম এবং তার (ডলির) প্রথম স্বামীর ঘরের সন্তান রাকিন হোসেন ইয়াকিন খানের বিরুদ্ধে এটিএম কার্ড চুরি করে একাধিক বুথ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা উত্তোলনের অভিযোগ এনেছেন। সংশ্লিষ্ট এটিএম বুথের সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে ডলি ও তার ছেলে ইয়াকিনের সংশ্লিষ্টতা মিলেছে। এ ঘটনায় আবু হোসেন সাজ্জাদ গত ১৫ ডিসেম্বর-২২ লালবাগ থানায় একটি মামলা নং (১৪) দায়ের করেন। উক্ত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লালবাগ থানার এসআই সুব্রত সাহা ইনকিলাবকে বলেন, মামলার তদন্তভার পাবার পর পরই অভিযুক্ত প্রধান আসামি রিফাত হোসেন ওরফে ইয়াকিনকে গ্রেফতার করে আদালতের কাছে সোপর্দ করা হয়। আবু হোসেন সাজ্জাদ অভিযোগ করে বলেন, ইয়াকিন একজন মাদকসেবি। ইয়াকিন তাকে (সাজ্জাদ) কে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করে। বিষয়টি ইয়াকিনের মা ডলি বেগমকে জানালে এবং কার্ড থেকে উত্তোলন করা টাকা ফেরত চাইলে তিনিও নারী নির্যাতনে মামলা করে জেলের ভাত খাওয়ানোর হুমকি দেন।
এদিকে চকবাজার থানায় ছিনতাইয়ের মামলা করতে না পেরে গত ১৭ জানুয়ারি পল্টন থানাধীন ৭০/এ পুরানা পল্টন লেনের আকবর হোসেনের অফিসের নিচে ডলি, তাম্বা সেলিম সাজ্জাদ আকবর হোসেনের গতিরোধ করে। অভিযুক্তরা চাঁদা দাবিসহ হত্যার হুমকি দেয় বলে অভিযোগ করেন আকবর হোসেন। এ ঘটনায় আকবর হোসেন ঢাকার সএমএম আদালতে একটি অভিযোগ (সিআর-৬৭/২০২৩) দায়ের করেন। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন।
এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ডলি আক্তারের তৃতীয় স্বামী স্বামী মরহুম মুকুল লালবাগের ওই বাসার কেয়ারটেকার ছিলেন। বাড়ির মালিক সাজ্জাদ হোসেন তখন আমেরিকায় অবস্থান করছিলেন। মোবাইল ফোনের ভিডিও কলে ডলির সাথে সাজ্জাদ হোসেনের রাতভর কথা হতো। এরই মধ্যে করোনাকালীন শাট ডাউনকালে রহস্যজনকভাবে মারা যান ডলির স্বামী মুকুল। কয়েকদিনের ব্যবধানে দেশে ফিরে ডলিকে বিয়ে করেন আমেরিকা প্রবাসী সাজ্জাদ।
ডলির বিরুদ্ধে মাদকসেবনের অভিযোগ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে এলাকায় পোস্টারও সাঁটান কেউ কেউ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন