বসন্তের শুরুর সন্ধ্যায় কানায় কানায় প‚র্ণ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের আবহাওয়া খেলা শুরু হওয়ার আগেই পাগলাটে হয়ে গেল জেমসের সুরের ছোঁয়ায়। ম্যাচ শুরু হলেও রোমাঞ্চের আবেশ থাকল পুরোদমে। শিরোপা লড়াইয়ের একদিকে তিনবারের চ্যাম্পিয়ন বিপিএলে সফলতম দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। অন্যদিকে বিপিএলের চারবারের চ্যাম্পিয়ন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা ম্যাজিকে চমক জাগানিয়া সিলেট স্ট্রাইকার্স। হোম অব ক্রিকেটের ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করে ৭ উইকেটে ১৭৫ রান করে প্রথমবারের মতো বিপিএলের শিরোপা জয়ের খুব কাছাকাছিও চলে গিয়েছিল ‘চায়ের দেশে’র প্রথম কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি। তবে তীরে এসে তরী ডোবানোতে ‘বিশেষজ্ঞ’ রুবেল হোসেনের দুইটা অমার্জনীয় ভুলে পঞ্চমবারের মত বিপিএলের শিরোপা উঁচিয়ে ধরার সৌভাগ্য হলো না মাশরাফির। ফলে গতবারের সেরা কুমিল্লা এবারও ৭ উইকেট ও ৪ বল হাতে রেখে পৌঁছে গেল জয়ের বন্দরে। ইমরুল কায়েসের হাত ধরে দ্বিতীয় ও নিজেদের চতুর্থ শিরোপা উৎসবে মাতল কুমিল্লা।
সিলেটের ছুঁড়ে দেওয়া বড় রানের চ্যালেঞ্জে ব্যাট করতে নেমে দারুণ উড়ন্ত স‚চনা এনে দেন লিটন দাস। তবে জর্জ লিন্ডের নৈপুন্যে ৭ রানের ব্যবধানে ২ উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ে কুমিল্লা। লিন্ডে সিলেটকে সুযোগ করে দিয়েছিলেন প্রতিপক্ষকে আরও চেপে ধরার। লিটনের সঙ্গে জুটি গড় জনসন চার্লস তখন ৮ রানে। এই ক্যারিবিয়ান ব্যাটার সুইপ শটে লিন্ডেকে মিড উইকেটের উপর দিয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিলেন রুবেলের বুকে। তবে তিনবারের প্রচেষ্টায়ও সহজ ক্যাচটি হাতে রাখতে পারলেন না বাগেরহাটের এই পেসার। আক্ষরিক অর্থেই হাত থেকে ফেলে দিলেন বিপিএল শিরোপা। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে চার্লস খেললেন ৭ চার ও ৫ ছক্কায় ৫২ বলে সাজানো ৭৯ রানের এক প্রলয়কারী ম্যাচজয়ী ইনিংস।
চোট নিয়ে শেষ কয়েক ম্যাচ খেলা মাশরাফি গতকালের ফাইনালে প্রথমবারের মত বল হাতে আসেন ইনিংসের শেষ ওভারে। তার দ্বিতীয় বলে লং অফে সিঙ্গেল জন্য ঠেলে দিয়েই কুমিল্লার জয় নিশ্চিত করেন চার্লস। অথচ কোয়ালিফায়িংয়ে রান করতে না পারায় দ্বিতীয় এলিমেনিটর ম্যাচে তাকে বাদ পড়তে হয়েছিল। আর ফাইনাল খেলতে নেমেই তিনি দলকে জেতালেন এবং হলেন ম্যাচ সেরা। প্রতিক্রিয়ায় জানালেন, ‘লিটন ম‚লত খেলার পথটা সহজ করে দেয় আমাদের জন্য। আমরা নিজেদের উপর বিশ্বাস রেখেছিলাম আর শেষ পর্যন্ত ফলাফল পেয়েছি।’ ৩৯ বলে ৫৫ রানের এক সময়োপযোগী ইনিংস খেলে কুমিল্লার জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন লিটন। শেষদিকে চার্লসকে দারুণ সঙ্গ দেওয়া মইন আলী খেলেন ১৭ বলে ২৫ রানের ইনিংস।
এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে আন্দ্রে রাসেলের প্রথম ওভার থেকে ১৮ রান তোলে সিলেট। তবে দ্বিতীয় ওভারে তানভীর ইসলামের দারুণ এক ডেলিভারিতে রানের খাতা খোলার আগে ফেরেন তৌহিদ হৃদয়। পরের ওভারে আন্দ্রে রাসেলের সেøায়ারে কাটা পড়েন ১ রান করা মাশরাফি। দলকে বিপদমুক্ত করতে তৃতীয় উইকেটে জুটি গড়েন শান্ত-মুশফিক। ৩৮ বলে ফিফটি করে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এক বিপিএলে ৫০০-এর অধিক রান করার নজির গড়েন শান্ত। পুরো আসরে ১৫ ইনিংসে ৩৯.৬৯ গড় ও ১১৬.৮৪ স্ট্রাইক রেটে তার রান ৫১৬। টুর্নামেন্ট সেরার পুরষ্কার জেতা শান্ত জানান, ‘রান করার তাড়না সব সময় থাকে। আমি খুশি এই আসরের সেরা রান সংগ্রহক হতে পেরে। দল হিসেবে আমরা চেষ্টা করেছিলাম জিততে, তবে দিনটা আমাদের ছিল না।’
তবে অর্ধশতকের পর ইনিংস বড় করতে পারেননি শান্ত। মঈন আলীর অফ স্পিনে বোল্ড হন ৪৫ বলে ৬৪ রান করে। ভাঙে ৭৯ রানের জুটি। শান্তর আউটের পর নিয়মিত উইকেট হারাতে থাকে সিলেট। রায়ান বার্ল, থিসারা পেরেরা, লিন্ডে, জাকির হাসানদের কেউই দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি। সেই ঝড় সামলে নিজে ঝড় তোলেন মুশফিক। ৩৫ বলে করেন ফিফটি। শেষদিকে মুশফিকের অপরাজিত ৭৪ রানে ১৭৫ করে সিলেট। ৪৮ বলের ইনিংসটি এই উইকেটকিপার সাজান ৫টি চার ৩টি ছয়ে। তবে সেটি বৃথাই গেল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন