রাজধানী ঢাকার দৃশ্য গতকাল ছিল ব্যতিক্রম। মহানগরীর উত্তরে আবদুল্লাহপুর থেকে দক্ষিণের বাবু বাজার ব্রীজ, পশ্চিমের মোহাম্মদপুর থেকে পূর্বের টিকাটুলি পর্যন্ত পুরো শহর পরিণত হয়েছিল মিছিলের নগরীতে। এক পক্ষ ভোটের অধিকারসহ ১০ দফা দাবিতে ‘পদযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করে। অন্যপক্ষ রাজপথ দখলের আশঙ্কা থেকে ‘শান্তি সমাবেশ’ আয়োজন করে। দু’ পক্ষের সমাবেশে অংশ গ্রহণকারী নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মিছিলে গগণবিদারী সেøাগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠে রাজধানী ঢাকার বাতাস। বিশেষ করে বিএনপির কর্মসূচি মানেই হাজার হাজার লোকের সমাগম। ১৬ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি ইদানিং যে কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করছে, সে কর্মসূচি পালনে পিঁপড়ার মতো হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসছেন।
রাজধানীতে বছরজুড়ে রাজনৈতিক দলগুলো সভা-সমাবেশ করছে। ওইসব সমাবেশে একটি স্পটকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ, মিছিল সেøাগান দেখা যায়। কিন্তু গতকাল পুরো রাজধানীই মিছিলে মিছিলে প্রকম্পিত হয়ে উঠেছিল। গোটা রাজধানী মিছিলের শহরে পরিণত হয়েছিল। ক্যালেন্ডারের পিছনের পাতা উল্টালে দেখা যায় ’৬৯ গণঅভ্য্ত্থূানের আগের দিনগুলোতে, ’৯০ এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের শেষ দিনগুলো, ২০০৬ সালে বিএনপি বিরোধী আন্দোলন এবং ২০১৪ সালের আওয়ামী লীগের এক দলীয় নির্বাচনের প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্পটে যে জনসমাগম, বিক্ষোভ মিছিল হয়; গতকাল শুক্রবার রাজধানী ঢাকার চিত্র অনেকটা সেরকমই দেখা গেছে।
রাজধানী ঢাকার মতিঝিলের কালভার্ট রোড থেকে শুরু করে গোপীবাগ, আরকে মিশন রোড, হাটখোলা রোড হয়ে রাজধানী সুপার মার্কেটের পাশ দিয়ে পুরান ঢাকার নায়াবাজার পর্যন্ত ঢাকা মহানগর দক্ষিণের পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে। এ কর্মসূচি ঘিরে ছিল হাজার হাজার মানুষের পদচারণা, জটলা এবং ব্যানার, ফেন্টুন নিয়ে মিছিল-সেøাগান। বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা কমিটি উত্তরার জসিম উদ্দিন রোড থেকে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে। জুম্মার নামাজের পর সেখানেও দেখা যায় হাজার হাজার মানুষের পদচারণা, মিছিল, সেøাগান। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচি অনুযায়ী তেজগাঁও প্রান্থপথের এফডিসি গেইট থেকে মালিবাগ পর্যন্ত পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি। এ ছাড়াও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট আল রাজি কমপ্লেক্সের সামনে থেকে পদযাত্রা শুরু করে পল্টন মোড়-জাতীয় প্রেস ক্লাব মোড় ঘুরে পুনরায় পল্টন মোড় হয়ে বিজয়নগরে গিয়ে শেষ করে। গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টি আরামবাগের ইডেন হাউজ থেকে মতিঝিলের শাপলা চত্বর, সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট পুরানা পল্টন থেকে দৈনিক বাংলা মোড় পর্যন্ত ১০ দফা দাবিতে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে। রাজধানীর পল্টন মোড়ে সমাবেশ করেছে আ স ম আব্দুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি।
এছাড়া ‘কারাবন্দী আলেমদের মুক্তির দাবিতে’ খেলাফত মজলিশ বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেইটে সমাবেশ করে। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘসহ কয়েকটি সংগঠনে মানববন্ধন, সমাবেশ করে বিভিন্ন দাবি দাওয়া আদায়ের দাবিতে। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ‘শান্তি সমাবেশ’ এবং বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগে প্রতিবাদ সমাবেশ করে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মোহাম্মদপুরের শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন। এর বাইরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের মিছিল বের হলে মিছিলে হামলা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে কয়েকজন আহত হয়।
গতকাল জুম্মার নামাজের পর ১০ দফা দাবিতে বিএনপির পদযাত্রা, যুগপৎ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সমমনা দলগুলোর পদযাত্রা কর্মসূচি পালন, গণফোরামের পদযাত্রা, বঙ্গবন্ধু অ্যাভেনিউয়ে আওয়ামী যুবলীগের সমাবেশ এবং মোহাম্মদপুরে আওয়ামী লীগের সমাবেশে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে হাজির হন। মিছিলে তারা নানা শ্লোগান দেন। আন্দোলনকারীদের পদভারে সরগরম হয়ে উঠে ঢাকার রাজপথ। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো যুগপৎ কর্মসূচি তথা পদযাত্রা ঘিরে রাজধানীতে মোতায়েন ছিলো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার সদস্যসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ। বিএনপির পদযাত্রার আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে প্রস্তুত ছিলো গরম পানির কামান, আর্মাড কার ও প্রিজন ভ্যানসহ গণআন্দোলন ঠেকাতে পুলিশে ব্যবহৃত সব ধরনের আধুনিক সরঞ্জামাদি। বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের পদযাত্রা উত্তরার জসিম উদ্দিন রোড থেকে শুরু হয়ে আবদুল্লাহপুরে শেষ হয়। জমজম টাওয়ার, রাজলক্ষী কমপ্লেক্স, রাজউক ভবন, জসিম উদ্দিন রোড, টঙ্গী ব্রীজসহ বিভিন্ন এলাকায় বিএনপির পদযাত্রার মিছিলে মুখরিত হয়ে উঠে। এ সময় রাস্তার মোড়ে মোড়েও ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা ছিলো। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির পদযাত্রাটি বিকেল ৪টায় মতিঝিলের গোপীবাগের সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে থেকে যাত্রা করে। কিন্তু বেলা দেড়টায় জুমার নামাজ শেষ হতেই সেখানে এবং মধুমিতা হলের সামনে, গোপীবাগ, টিকাটুলি, মতিঝিল, আর কে মিশন রোডে হাজার হাজার নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে হাজির হতে থাকেন। নেতাকর্মীর হাতে হাতে দেখা গেছে ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড।
পদযাত্রায় অংশ নেয়া নেতা-কর্মীদের ঢল দেখে মতিঝিল শাপলা চত্বর, টিকাটুলি মোড়, গোপীবাগ মোড়সহ আশপাশের এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ কঠোর অবস্থান নেয়। ইনকিলাব-ইত্তেফাক মোড়ের অপর দিকে মতিঝিলের দিকে প্রস্তুত রাখা ছিলো গরম পানির কামান, এপিসিসহ আন্দোলন ঠেকানোর কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের গাড়ি।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ: বিদ্যুৎ, গ্যাস, চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতি ও মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার ও গুলিসহ দমন-নিপীড়নের প্রতিবাদে এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তি, গণবিরোধী ফ্যাসিস্ট সরকারের পদত্যাগ, অবৈধ সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ দফা দাবীতে ধারাবাহিক যুগপৎ আন্দোলন করছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। এরই অংশ হিসেবে গতকাল শুক্রবার রাজধানীতে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে ঢাকা মহানগর উত্তর, দক্ষিণসহ সরকারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়া অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো।
এর মধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে রাজধানীর গোপীবাগ ওয়াক্তিয়া মসজিদের সামনে সমাবেশ করে বিকাল ৪টায় পদযাত্রা শুরু করে। বিশাল পদযাত্রাটি মধুমিতা সিনেমা হল, টিকাটুলী, দয়াগঞ্জ, ধোলাইখাল মোড়, রায়সা বাজার মোড় হয়ে নয়াবাজারে নবাব ইউসুফ মার্কেট পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে শেষ করে। এর আগে এই পদযাত্রা কর্মসূচিতে অংশ নিতে মতিঝিলের মধুমিতা হলের সামনে ও এর আশপাশের রাস্তায় জড়ো হন দলটির নেতাকর্মীরা। বেলা আড়াইটায় বিএনপির এ কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ১টার পর থেকেই নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে, সরকারের পদত্যাগের দাবিতে, নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে এবং সরকারবিরোধী নানা স্লোগানে পুরো এলাকা মুখরিত করে তুলেন। এসময় নেতাকর্মীর হাতে হাতে ছিল ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড। খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে মতিঝিল এলাকায় দুপুর থেকেই জড়ো হন দলটির নেতাকর্মীরা।
দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় সমাবেশ শেষে পদযাত্রায় নেতৃত্ব দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এতে আরো অংশ নেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস-চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ফজলুল হক মিলন, মীর নেওয়াজ আলী, সেলিম রেজা হাবিব, কাজী হাবিবুল বাশার, ইউনুস মৃধা, আবদুস সাত্তার, মো. মোহন, হাবিবুর রশীদ হাবিব, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, তানভীর আহমেদ রবিন, মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাদেক আহমেদ খান, যুব দলের মুনায়েম মুন্না, ইসহাক সরকার, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, জাসাসের জাকির হোসেন রোকনসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী। বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর অংশগ্রহণে পুরো মতিঝিল ও গোপীবাগ এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে।
ঢাকা মহানগর উত্তর: একই কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে রাজধানীর উত্তরায় পদযাত্রা কর্মসূচি জসীম উদ্দীন মোড় থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবদুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে শেষ হয়। এর আগে জসিম উদ্দিন সড়কের মোড় থেকে পদযাত্রাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আবদুল মঈন খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বক্তব্য রাখেন।
পদযাত্রায় আরো উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, কেন্দ্রীয় নেতা কামরুজ্জামান রতন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, তাবিথ আউয়াল, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, মুনসী বজলুল বাসিত আনজু, আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, সাইফুল আলম নীরব, এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, হাসান জাফির তুহিন, সাইদ সোহরাব, সুলতানা আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজিব আহসান, আনু মোহাম্মদ শামীম আজাদ, ছাত্র নেতা কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবনসহ বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, মহিলা দল, তাঁতীদল, মৎস্যজীবীদলের ওয়ার্ড ও থানার কয়েক হাজার নেতাকর্মী।
দক্ষিণের ন্যায় উত্তরের কর্মসূচিও বেলা আড়াইটায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুপুর ১২টার পর থেকেই উত্তরা এলাকায় জড়ো হতে থাকেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। তারা বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে পদযাত্রা কর্মসূচিতে অংশ নেন। এসময় তারাও বেগম জিয়ার মুক্তি, সরকারের পদত্যাগের দাবিতে এবং সরকারবিরোধী নানা স্লোগান তোলেন। নির্ধারিত সময়ের আগেই উত্তরা জসিমউদ্দিন এলাকাকে কেন্দ্র করে পুরো উত্তরা এলাকায় লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে।
যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে একই সময়ে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি(এলডিপি) কাওরান বাজার থেকে পদযাত্রা কর্মসূচি শুরু করে মালিবাগে গিয়ে শেষ হয়।
তত্ত্বাবধায়কের দাবি না মানলে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন হতে পারে : ড. ফরহাদ
যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১০ দফা দাবিতে রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকায় সমাবেশ করে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট। সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে তারা আল রাজি কমপ্লেক্সের সামনে থেকে পদযাত্রা শুরু করে পল্টন মোড়-জাতীয় প্রেস ক্লাব মোড় ঘুরে পুনরায় পল্টন মোড় হয়ে বিজয়নগরে গিয়ে শেষ করে।
এসময় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জোটের সমন্বয়ক ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির-এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি না মানলে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, ১০ দফা না মানলে রমজানের ঈদের পর শেখ হাসিনার পতনের এক দফা আন্দোলন শুরু হবে। ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, দেশের মানুষ শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন চায় না। তারা বিশ্বাস করে, শেখ হাসিনার অধীনে কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। দেশের মানুষ ছাড়া বন্ধু রাষ্ট্রগুলোও চায়, বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। সেজন্য বিদেশি কূটনীতিকরা বাংলাদেশে আসছেন, সরকারকে সুষ্ঠু নির্বাচনের তাগিদ দিচ্ছেন।
জাগপার সাধারণ সম্পাদক এসএম শাহাদাত ও এনপিপির মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার সঞ্চালনায় পদযাত্রাপূর্ব সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন-জাগপার সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান, গণদলের চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মওলা চৌধুরী, ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান এম এন শাওন সাদেকী, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ডা. নুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ জনকল্যাণ পার্টির সভাপতি ওবায়দুল হক পীরজাদা প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। সমাবেশে বিকল্পধারা বাংলাদেশের একাংশের মহাসচিব অ্যাডভোকেট শাহ মোহাম্মদ বাদল, এনপিপির যুগ্ম মহাসচিব মো. ফরিদ উদ্দিন, কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ, জাগপার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. আওলাদ হোসেন শিল্পী, যুব জাগপার সভাপতি মীর আমির হোসেন আমু প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী সরকারের দুঃশাসন জনগণকে নিঃস্ব করছে: সুব্রত চৌধুরী
সরকার পতনের যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে গতকাল বিকেল ৪টায় গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টি পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে। তাদের পদযাত্রাটি গণফোরাম কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে শাপলা চত্ত্বর ঘুরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। এসময় গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক এড. সুব্রত চৌধুরী বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন যখন বলে আমরা বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চাই তখন ওবায়দুল কাদের সাহেবের মুখ শুকিয়ে যায়! ফ্যাসিস্ট সরকার, অগণতান্ত্রিক সরকার ও জনগণের বিরুদ্ধের সরকারকে আমেরিকা, ভারত, চিন ও জাপানসহ কোন গণতান্ত্রিক শক্তি সমর্থন করে না। যার প্রমাণ আমেরিকায় গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশ দাওয়াত পায়না। আগামীদিনে একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনার জন্য আপনাকে পদত্যাগ করতে হবে, পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দিতে হবে। আমরা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ক্ষমতা ফিরিয়ে এনে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবো। তিনি বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি ও আওয়ামী সরকারের দুঃশাসন জনগণকে নিঃস্ব করছে। ১৪ বছর ধরে জনগণের পেটে লথি মারছে আওয়ামী লীগ সরকার। সহ্যের সীমা অতিক্রম করেছে জনগণ এই সরকারকে আর এক মুহূর্তও ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- গণফোরামের আবদুল হাসিব চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা খান সিদ্দিকুর রহমান, আইয়ুব খান ফারুক, মুহাম্মদ উল্লাহ মধু, তাজুল ইসলাম, নিলুফার আহম্মেদ শাপলা, মো. সানজিদ রহমান শুভ, কামাল উদ্দিন সুমন, রবিউল ইসলাম রবিসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর উত্তর-দক্ষিণের নেতৃবৃন্দ। বাংলাদেশ পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বাবুল সর্দার চাখারী, মহাসচিব আব্দুল কাদের, কেন্দ্রীয় নেতা পারভিন নাছের খান ভাষানি, আতিকুর রহমান লিটন, নাজমা আক্তার, রানী শেখ প্রমুখ।
সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট: ১০দফা দাবী বাস্তবায়নে রাজধানীতে পদযাত্রা করেছে সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট। গতকাল সকাল ১১ টায় রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড় থেকে দৈনিক বাংলা মোড় পর্যন্ত পদযাত্রা করে জোটের নেতাকর্মীরা। এর আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জোটের সমন্বয়কারী ও বাংলাদেশ ইয়ূথ ফোরামের সভাপতি মুহাম্মদ সাইদুর রহমান বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে জনগণের নাভিশ্বাস চরমে উঠেছে। সরকারের মন্ত্রীরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সিন্ডিকেট করে দেশের টাকা বিদেশে পাচার করছে। দেশের লাখ লাখ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে গায়েবী মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। মামলা-হামলা দিয়ে চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে বাঁধাগ্রস্ত করা যাবে না। অবৈধ সরকারকে বিদায় নিতেই হবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দীকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। ‘৯০’র আদলে গণঅভ্যূত্থানের মাধ্যমেই ১০ দফা দাবী বাস্তবায়ন করতে হবে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয়তাবাদী নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ ওমর ফারুক, সংবিধান সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি এ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান, গণতন্ত্র রক্ষামঞ্চের সভাপতি মনোয়ার হোসেন বেগ, মুক্তিযুদ্ধ-৭১ এর সভাপতি আনসার রহমান সিকদার, বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক কাউন্সিলের সভাপতি শেখ আলিম উল্লাহ আলীম, বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শরীফুল ইসলামসহ জোটের নেতৃবৃন্দ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন