তরিকায়ে নকসবন্দিয়া মোজাদ্দেদিয়ার উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ দরবার বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের উরশ শরিফে গত তিন দিনের মতো গতকাল শনিবারেও দিনরাত জনস্রোত অব্যাহত ছিল। আগামী মঙ্গলবার সকালে আখেরি মোনাজাত পর্যন্ত এ জনস্রোত অব্যাহত থাকবে বলে মনে করছেন ওকিবহাল মহল।
অতীত ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় গত শুক্রবার জুমার নামাজ বাদে মিলাদ এবং দোয়া শেষে পীর ছাহেব হজরত মাওলানা শাহসুফি সৈয়দ খাজাবাবা ফরিদপুরী (কু.ছে.আ.) ছাহেবের রওজা শরিফ জিয়ারতের মাধ্যমে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে এবারের উরশ শরিফের সূচনা হয়েছে। ঐদিন মাগরিব নামাজ বাদ দু’রাকাত করে ৬ রাকাত নফল নামাজ এবং ফাতেহা শরিফ পাঠের পরে মোনাজাতের মাধ্যমে এ উরশ শরিফের কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
ফরিদপুরের আটরশির বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের এ উরশ শরিফে যোগদানে দেশের বাইরে থেকেও বিপুল সংখ্যক জাকেরান ও আশেকান সহ মুসুল্লিয়ানগণ সমবেত হয়েছেন। গতকাল শনিবার বিকেলে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সংযুক্ত সড়ক ও মহাসড়ক ধরে জনস্রোত ছিল এ দরবার শরিফমুখী। পাশর্^বর্তী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘলয়, ত্রিপুরা, বিহার ছাড়াও উত্তর প্রদেশ এবং সুদুর কাস্মির থেকেও বেশকিছু জাকেরান ও আশেকানগণ এ দরবারে পৌঁছেছেন। শুধু কুচবিহারের প্রায় ৩শ’ জাকেরানের কাফেলা বিশ্ব জাকের মঞ্জিরে পৌঁছে গত বুধবার।
তরিকায়ে নকসবন্দিয়া-মোজাদ্দেদীয়ার নিয়ম অনুযায়ী বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে পাঁচ ওয়াক্তিয়া ফরজ ও সুন্নত নামাজ ছাড়াও প্রতিদিনই রাতের শেষ প্রহরে রহমতের সময়ে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে এবাদত বন্দেগীর কার্যক্রমের সূচনা হয়ে থাকে। উরশ শরিফের সময়ও একই কার্যক্রম অব্যাহত থাকছে। এরপরে মিলাদ ও দোয়া মোনাজাত ছাড়াও জিকির শেষে লাখ-লাখ জাকেরান ও আশেকানবৃন্দ জামাতের সাথে ফজরের নামাজ আদায়ন্তে ফাতেহা শরিফ ও খতম শরিফ পাঠের মাধ্যমে এ উরশ শরিফের প্রতিদিনের কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের খাদেমবৃন্দসহ দেশের বিশিষ্ট ওলামায়ে কেরামগণও এ উরশ শরিফে ওয়াজ করছেন।
এ দরবারে ফজর থেকে এশার নামাজ জামাতের সাথে আদায়সহ নফল নামাজ, মোনাজাত এবং মোরাকাবা-মোশাহেদা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নকসবন্দিয়া-মোজাদ্দেদীয়া তরিকার নিয়ম অনুযায়ী বাদ ফজর ও বাদ মাগরিব ফাতেহা শরিফ পাঠন্তে মোনাজাত এবং বাদ এশা ৫শ’ বার দরুদ শরিফ পাঠন্তে নবী করিম (সা.)-এর পাক কদম মোবারকে নজরানা দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও জোহর, মাগরিব ও এশার নামাজন্তে নফল নামাজ আদায় এবং দোয়া-মোনাজাতও অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে।
বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের পীর ছাহেব-এর আপন পীর খাজা এনায়েতপুরী (কু.ছে.আ.) ছাহেব শনিবার ছবেহ ছাদেকের সময় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ওফাত লাভ করেন রোববার দুপুর সোয়া ১২টায়। তার দাফন হয় সোমবার বাদ আসর। আর বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের পীর ছাহেব এর দাদা হুজুর, হজরত মাওলানা শাহ সুফি সৈয়দ খাজা ওয়াজেদ আলী (র.) ছাহেব ওফাত লাভ করেন মঙ্গলবার। আপন পীর ও দাদা হুজুরের জন্ম-মৃত্যুর এসব দিবসকে হিসেব করেই প্রতিবছর ফাল্গুন মাসের প্রথম শনিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে ৪ দিনব্যাপী মহাপবিত্র বিশ্ব উরশ শরিফ উদযাপিত হয়ে থাকে।
বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের পীর ছাহেব নিজেও সোমবার দিবাগত মধ্যরাতের পরে মঙ্গলবার ওফাত লাভ করেন। এসবেরই ধারাবাহিকতায় আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে উরশ শরিফের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
বিশ^ জাকের মঞ্জিল ও সংযুক্ত প্রায় ২৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এ উরশ শরিফের এন্তেজাম ইতোপূর্বেই সম্পন্ন হয়েছে। সমবেত জাকেরান ও আশেকান সহ মুসুল্লিয়ানদের অজু ও আহারসহ এক সামিয়ানার নিচে নামাজ আদায় এবং অবস্থানের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। উরশ শরিফ উপলক্ষে এ দরবার শরিফের খাবার মাঠে দিনরাত একই সাথে অর্ধলক্ষাধিক মানুষের খাবার পরিবশেন করা হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন