শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ছুটির দিনে বিক্রেতাদের মুখে হাসি

রাহাদ উদ্দিন | প্রকাশের সময় : ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

বাংলা একাডেমি আয়োজিত একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত বাঙালির প্রাণের মেলা অমর একুশে বইমেলা গতকাল শনিবার সপ্তাহের দ্বিতীয় ছুটির দিন পার করে। বরাবরই শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে লোকে লোকারণ্য থাকছে মেলা প্রাঙ্গণ। এদিনগুলোতে পাঠকদের উপস্থিতি মুখে হাসি ফোটায় বিক্রেতাদের। গতকালও সকাল থেকেই দুয়ার খুলে মেলাপ্রাঙ্গন। সকাল ১১ টা থেকে মেলায় ছিল শিশুপ্রহর। তাই সাত সকালেই রাজধানীর জ্যাম কাটিয়ে মেলা দর্শনে এসেছেন শিশু-কিশোরসহ সব বয়সী বইপ্রেমী। শিশুদের আনাগোনা ছিল দেখার মতো। বাবা-মায়ের হাত ধরে এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়িয়েছে তারা। কেউ কেউ বইও কিনেছে রং-বেরংয়ের।
বয়সের হিসেবে ৭ বছরের শিশু নাইমাকে নিয়ে সকাল ১১টায় মেলায় এসেছেন তিতুমীর কলেজের অফিস সহকারী আইনুল ইসলাম। শিশু নাইমাকে কিনে দিয়েছেন পৃথিবীর সেরা রূপকথার গল্প সিনড্যারেলা ও ইশপের গল্পসমূহ। বড় লেখিকা হওয়ার ইচ্ছে পোষণ করেন নাইমা। তার বাবা বলেন, আজ ছুটির দিনে অফিস না থাকায় মেয়েটাকে নিয়ে চলে আসলাম মেলায়। ভালো লাগা ভালোবাসার এই মেলায় প্রায়ই আসা হয়। তবে এখন চাকরির কারণে ছুটির দিন ছাড়া আসা সম্ভব হয় না। ২ ছেলে ও ১ মেয়ে আমার। তাদের যার যার পছন্দের পেশা বেছে নিবে তারা। মেয়েটা বই পড়তে পারে। তাই এখন থেকেই তার আগ্রহের প্রতি নজর দিচ্ছি।
ছুটির দিনগুলোতে দর্শনার্থী, লেখক ও প্রকাশকের সমাগমে মুখরিত হয়ে উঠে মেলা প্রাঙ্গণ। পছন্দের লেখককে ঘিরে দেখা যায় সেলফি তোলার হিড়িক। বিক্রেতারাও ব্যস্ত থাকেন বই বিক্রিতে। মিজান পাবলিশার্স, অন্বেষা প্রকাশনী, অন্যধারা, অন্যপ্রকাশ, শব্দশৈলী, পাঞ্জেরী, তাম্রলিপি, অনন্যা, ঐতিহ্য, বাতিঘর, অ্যাডর্ন, বেঙ্গল পাবলিশার্স, মাওলা ব্রাদার্স, প্রথমাসহ বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় প্রকাশনীর স্টলে থাকে বইপ্রেমীদের উপচে পড়া ভিড়। বিক্রেতারা জানান, সপ্তাহের অন্যান্য দিন মেলা থাকে সাদামাটা। পাঠকরা আসেন তবে সেই মাত্রায় না। টুকটাক বই কিনে নিয়ে যায়। বড় প্রকাশনীর প্যাভিলিয়নগুলোতে অধিকাংশ বিক্রয়কর্মীই অলস সময় কাটান। তবে ছুটির দিন আসলে যেন তাদের হাত চুলকানোর সময় নেই।
গতকাল শনিবার অমর একুশে বইমেলার ১৮তম দিনে মেলায় নতুন বই এসেছে ১৭০টি। সকাল ১১:০০টা থেকে বেলা ১:০০টা পর্যন্ত শিশুপ্রহর ঘোষণা করা হয়। সকাল ১০:০০টায় বইমেলার মূলমঞ্চে শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল ৪:০০টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গোলাম মুস্তাফা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মোহিত কামাল ও রাজীব কুমার সরকার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুব্রত বড়ুয়া।
প্রাবন্ধিক বলেন, জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের শিক্ষকতা ও গবেষণার প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে দেখা যায়, আমাদের সমাজ রাজনীতির বিকাশ ও ঘটনাপ্রবাহের দিকে তিনি বরাবরই মনোযোগী ছিলেন। সমাজ ও জাতীয় জীবনের ঘটনাবলি সম্পর্কে তিনি শুধু আগ্রহীই ছিলেন না, এসব বিষয়ে তিনি নির্ভয়ে তাঁর মতামত ব্যক্ত করেছেন এবং আমাদের জন্য দিকনির্দেশও প্রদান করেছেন। শিক্ষার্থীদের কাছে তো বটেই, শিল্পসাহিত্য অঙ্গনের মানুষ ও প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মীদের কাছেও তিনি হয়ে উঠেছিলেন পরামর্শক ও পথপ্রদর্শক।
সভাপতির বক্তব্যে সুব্রত বড়ুয়া বলেন, জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের জীবনচর্যার সঙ্গে বিনয় ও স্বচ্ছতা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিল। তিনি যেমন এদেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে চিন্তা করেছেন, তেমনি নিজের শিক্ষাদর্শনটিও তুলে ধরেছেন। আজ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন ওবায়েদ আকাশ, রনজু রাইম, ফারুক সুমন এবং হক ফারুক আহমেদ।
আজকের সময়সূচি: আজ রোববার অমর একুশে বইমেলার ১৯তম দিন। মেলা শুরু হবে বিকেল ৩:০০টায়, চলবে রাত ৯:০০টা পর্যন্ত। বিকেল ৪:০০টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে গোবিন্দচন্দ্র দেব এবং ভাষাসংগ্রামী গাজীউল হক শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন গাজী আজিজুর রহমান এবং আমিনুর রহমান সুলতান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন খান মাহবুব, হাসান অরিন্দম, শিহাব শাহরিয়ার, পাপড়ি রহমান, রাজীব কুমার সরকার। সভাপতিত্ব করবেন আবু মো. দেলোয়ার হোসেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন