ফিরোজ মল্লিককে (৬০) গ্রেফতার করা হয়েছে। ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে’ গত ৯ ফেব্রুয়ারি তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অপরাধ-তিনি সাজাপ্রাপ্ত আসামি। বরিশাল উজিরপুর থানায় একটি চুরির মামলায় ৩ বছর কারাদণ্ড হয়েছিল তার। ঘটনা ১৯৯৩ সালের। তিন বছরের কারাদণ্ড থেকে বাঁচতে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন ৩০ বছর। উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নের কালিহাতা গ্রামের আব্দুল মজিদ মল্লিকের পুত্র ফিরোজ। দণ্ডিত একজন আসামির আত্মগোপনে থাকা আইনের চোখে ‘গর্হিত অন্যায়’। অপরাধ প্রশ্নে শূন্য-সহিষ্ণুতার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাই গর্হিত এই অন্যায়কারীকে ছাড়েনি ৩০ বছরেও। হবিগঞ্জ সদর থেকে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার করা হয়েছে ৩ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি মো: আল আমিন (২৫)। তিনি সদর থানার উমেদনগর এলাকার মরহুম শিশু মিয়ার পুত্র।
শায়েস্তাগঞ্জ থানায় দায়েরকৃত একটি মাদকের মামলায় ৩ বছর কারাদণ্ড হয়েছিল তার। বিচার চলাকালে আসামি ছিলেন পলাতক। একতরফা বিচারে সাজা হয়ে যায় তার। গ্রেফতার এড়াতে দীর্ঘদিন ছিলেন পলাতক। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় মো: আল আমিনকে।
সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেফতার নিঃসন্দেহে বিশাল অর্জন! আর এই অর্জনের দৌলতে পুলিশ বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সদস্যরা হয়তো বাগিয়ে নেবেন পদোন্নতি, প্রাইজ পোস্টিং কিংবা সর্বোচ্চ কোনো পদক-পদবি। কিন্তু কাকে গ্রেফতার করা হলো? কি অপরাধে গ্রেফতার করা হলো? কখন করা হলো এ গ্রেফতার? এমন প্রশ্ন তখনই প্রাসঙ্গিকতা পায় যখন দেখা যায়, আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যা রহস্য উন্মোচনে আদালতের কাছ থেকে ৯৫ বার সময় নেয়া হয়। যখন ১২ বছরেও চিহ্নিত এবং গ্রেফতার হয় না হত্যাকারীদের। এক যুগেও শেষ হয় না গ্রেফতারে বেঁধে দেয়া সময়সীমার ‘৪৮ ঘণ্টা’। যখন বছরের পর বছর হিমাগারে পড়ে রয় টিভি উপস্থাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম ফারুকী হত্যা মামলা, হাজারীবাগে স্কুলছাত্রী তাসনিম রহমান করবী হত্যা মামলা, ঢাকার গোপীবাগের কথিত পীর লুৎফর রহমানসহ ৬ হত্যা মামলা। তথ্য পর্যালোচনায় বেরিয়ে আসে দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এমন অজস্র ‘অর্জন’ এবং উত্তরবিহীন অযূত ব্যর্থতার তথ্য।
দেশের পুলিশ বাহিনীর দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো জো নেই। কার মানে কি আছেÑ পুলিশ সেটিও টের পেয়ে যায়। সরকারবিরোধী দলগুলোর রাজনৈতিক কর্মসূচি সামনে থাকলে সচল হয়ে ওঠে পুলিশের ‘মুড মেথড’। কে কোনো উদ্দেশ্যে কে কোথায় বসে কিংবা দাঁড়িয়ে আছেÑ সব জেনে যায় পুলিশ। যে কারণে ‘নাশকতার পরিকল্পনা’র অভিযোগে চলে একের পর এক গ্রেফতার অভিযান। সাম্প্রতিক সময়ে এমন ঘটনা ঘটেছে ভুরি ভুরি।
গত ২ ফেব্রুয়ারির ঘটনা। নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ বিএনপির আহ্বায়ক-সদস্য সচিবসহ ৭ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে ককটেল, লাঠি ও ইটের খোয়া উদ্ধার করে। এ ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বিস্ফোরক আইনে ১০৩ জনের নাম উল্লেখ করে দায়ের হয় মামলা। আরও দেড়শ’ জনকে করা হয় অজ্ঞাতনামা আসামি।
ওইদিন সন্ধ্যায় পৌরশহরের টেংগাপাড়া এলাকার শাহ কামাল রোডের বিএনপির কেন্দ্রীয় নেত্রী অ্যাডভোকেট রোকসানা কানিজ চৌধুরী পলমলের বাসা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এর আগে গতবছর ৮ ডিসেম্বর গ্রেফতার করা হয় নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লার বক্তাবলী ইউনিয়নের ওয়ার্ড মেম্বার আব্দুর রশিদকে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন। পুলিশ সেই গোপন সংবাদ পেয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করা হয় তাকে। রশিদ মেম্বারের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে বলেও জানায় ফতুল্লা মডের থানা পুলিশ। রশিদ মেম্বার বিএনপি করেন।
এ ধরনের সংবাদে এমনটি মনে হওয়া স্বাভাবিক যে, আইন আসলে অন্ধ। কি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সেটি তার দেখার বিষয় নয়। কে অপরাধ করেছেÑ সেটিই মুখ্য। এছাড়া আইনের হাত অনেক লম্বা। আইনের অলৌকিক এই হাত দিয়ে সে অপরাধীকে টেনে নিয়ে আসতে পারে মাটির সাতস্তর নিচ থেকে। আর সেই আইন বাস্তবায়নে যদি দায়িত্ব বর্তায় পুলিশের ওপরÑ তবেই হলো। আইনের হাত হয়ে যায় আরও বেশি লম্বা। লম্বা এই হাত মানে না মত কিংবা পথ। মানে না ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ কিংবা দেশপ্রেমিক। চেনে না কে সন্ত্রাসী কিংবা কে একাত্তরের রণাঙ্গনের বীরযোদ্ধা। যে কারণে দেখি বা মাত্র হাতকড়া পড়ে নরসিংদীর বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু ছালেক রিকাবদারদের (৭০) হাতে। এ ক্ষেত্রে আইনের শাসন এতোটা কঠোর যে, মুক্তিযোদ্ধাকেও এতটুকুন ছাড় দেয়া যায় না। সেপাই মর্যাদার পুলিশ সদস্যও তাকে পারে কোমরে দড়ি বেঁধে টানতে টানতে কাঠগড়ায় তুলতে।
ঘটনাটি একেবারে টাটকা। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি নরসিংদীর শিবপুর থানা থেকে গ্রেফতার করা হয় উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আবু ছালেককে। ঘটনার দিন রাতে কোনো ধরনের গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই তাকে গ্রেফতার করা হয়। গত বছর নভেম্বর মাসে দায়ের হওয়া একটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয় তাকে। মুক্তিযোদ্ধার হাতে হ্যান্ডকাফ, কোমরে দড়ি। এই ছবি ভাইরাল হয় নেট দুনিয়ায়। দেশবাসীর ক্ষোভ ও ঘৃণা কুড়ায় পুলিশ। সম্প্রতি খুব কাছাকাছি সময়ে ঘটেছে এমন আরও কয়েকটি ঘটনা।
গত ২০ ডিসেম্বর হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি নিয়ে মায়ের জানাজা পড়িয়েছেন গাজীপুরের মো: আলী আজম। ওই জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি তিনি। অসুস্থ মায়ের সামনে থেকেই গ্রেফতার করা হয় তাকে। নাশকতার মামলায় আদালত জামিন নামঞ্জুর করলে তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কারাগারে থেকে পান মায়ের মৃত্যু সংবাদ। কয়েক ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি দেয়া হয় তাকে। মুক্ত সময়টিতেই তাকে রাখা হয় হ্যান্ডকাফ ও ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে। এ ঘটনায়ও দলমত নির্বিশেষে মানুষের ঘৃণা কুড়ায় কারা পুলিশ। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই হত ১৬ জানুয়ারি পুলিশ আবারও জানান দেয় নিষ্ঠুরতার। হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি নিয়ে মায়ের জানাজায় অংশ নেন শরীয়তপুর ছাত্রদল নেতা সেলিম রেজা। জেলার সদর উপজেলার সুজনদোয়াল গ্রামে ঘটে এ ঘটনা। দাফনের সময়ও খোলা হাতে মায়ের কবরে সেলিম রেজা দিতে পারেননি একমুঠো মাটি। এ দু’টি ঘটনাকে ‘অমানবিক’ আখ্যা দিয়েই দায় সেরেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। তবে ঘটনার নিন্দা জানিয়ে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। সংস্থাটি বলেছে, এ ঘটনা কেবল অমানবিকই নয় বরং মানুষের মৌলিক অধিকারেরও পরিপন্থি।
তবে কোনো মানবাধিকার সংগঠনের একটি বিবৃতিও জোটেনি যখন ‘শিশুবক্তা’খ্যাত জনপ্রিয় ইসলামী বক্তা রফিকুল ইসলাম মাদানিকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে আদালতে তোলা হয়। গত ১৬ জানুয়ারি তাকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে আদালতে হাজির করা হয় তাকে। তার বিরুদ্ধে ৭টি মামলা করা হয়েছে। ৩টি মামলায় জামিনে আছেন। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মামলায় বিচার শুরু হয়েছে।
এসব ক্ষেত্রে পুলিশ যতটা নিষ্ঠুর-ততোটাই উদাস, উদার এবং ঢিলেঢালা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গিদের ক্ষেত্রে। দিনের আলোয় জনাকীর্ণ আদালত প্রাঙ্গণ থেকে পুলিশ সদস্যদের পিপার স্প্রে ছিটিয়ে নেয়া হয় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রধান ফটক দিয়ে অপেক্ষমাণ মোটরসাইকেলে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায় দণ্ডিত মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত সামির ও মো: আবু ছিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব। গত ২০ নভেম্বর সংঘটিত এ ঘটনার পর ৩ মাস হতে চলল। তাদের বিষয়ে কোনো ‘গোপন সংবাদ’ও পায়নি পুলিশ। তাদের গ্রেফতারও করতে পারছে না।
চাঞ্চল্যকর মামলার অন্তহীন তদন্ত : ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি নৃশংসভাবে খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি। এ ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম বাদী হয়ে রাজধানীর শেরে বাংরা নগর থানায় মামলা করেন। মামলাটি প্রথম তদন্ত করছিল থানা-পুলিশ। তৎকালিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তখন ঘোষণা করেছিলেন পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সাগর-রুনি হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা হবে। কিন্তু ৪৮ ঘণ্টা নয়Ñ ব্যর্থতা চেষ্টার ৯৬ ঘণ্টা পর (৪ দিনের মাথায়) পুলিশ তদন্তভার ন্যস্ত করে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) হাতে। দায়িত্ব পাওয়ার ৬২ দিনের মাথায় ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হাইকোর্টে দাখিল করা এক প্রতিবেদনে ব্যর্থতা স্বীকার করে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। হাইকোর্ট তখন র্যাপিট অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব) কে তদন্তের দায়িত্ব দেন। মাস যায়। বছর যায়। গত ১১ বছরে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৯৫ বার সময় নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এক যুগ হতে চললেও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা যায়নি চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের। আগামী ৫ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের ধার্যকৃত ৯৬তম তারিখ।
সাগর-রুনি ছাড়াও একই বছর ২৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর হাজারিবাগের বাসায় শ্বাসরোধ ও গলাকেটে হত্যা করা হয় স্কুলছাত্রী তাসনিম রহমান করবীকে। এটির বিচার শুরু হয়নি ১১ বছরেও। ২০১৩ সালের ২৯ আগস্ট দিন-দুপুরে রামপুরার ওয়াপদা রোডের বাসায় গুলি করে হত্যা করা হয় সিআইডির অবসরপ্রাপ্ত এএসপি ফজলুল করিমকে। ২১ ডিসেম্বর পুরান ঢাকার গোপীবাগে কুপিয়ে ও গলাকেটে হত্যা করা হয় কথিত পীর লুৎফোর রহমান ফারুক, তার ছেলেসহ ৬ জনকে। বিচার হয়নি এটিরও। ২০১৪ সালের ২৭ আগস্ট টেলিভিশনে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের উপস্থাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম ফারুকীকে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারে নিজ বাসায় নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। বিচার শুরু হয়নি চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলাটিরও। ২০১৫ সালের ১৩ মে পল্লবীতে নিজের ফ্ল্যাটে খুন হন গৃহবধূ সুইটি আক্তার ও তার মামা আমিনুল ইসলাম। একই বছরে বাসা থেকে উদ্ধার হয় আইনজীবী ফাহমিদা আক্তারের হাত-পা বাঁধা লাশ। ২০১৬ সালের নভেম্বর মগবাজার মধুবাগের বাসায় গলাকেটে হত্যা করা হয় গৃহবধূ ডলি রানী বণিককে। ৭ বছর হতে চললেও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল না হওয়ায় বিচার শুরু হয়নি।
এ রকম আরও অন্তত ৯টি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা রয়েছে খোদ রাজধানীতেই। পুলিশ থেকে ডিবি, ডিবি থেকে সিআইডি, পিবিআই। এই করে হাত বদল হলেও গ্রেফতার করা হচ্ছে না আসামিদের। সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তাদের ভাষ্য-চাঞ্চল্যকর হলেও বেশিরভাগ হত্যাকাণ্ডই ক্ল-লেস। নিহতদের স্বজনদের অভিযোগ অবশ্য ভিন্ন। তারা বলছেন, হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন না হওয়ার পেছনে রয়েছে তদন্ত সংস্থাগুলোর অনাগ্রহ, গাফলতি ও ব্যর্থতা। স্কুলছাত্রী তাসনিম রহমান করবীর মা আফরোজ ফারহানা বলেন, পুলিশ অনেক বড় বড় অপরাধী ধরে, তাহলে এটি কেন পারছে না? নাকি তাদের কোনো আগ্রই নেই? বিশ্লেষকরা বলছেন, আইন সবার ক্ষেত্রেই সমান হওয়ার কথা। বাস্তবতা হচ্ছে, আইন দুর্বলের জন্য সমান। কিন্তু সবলের জন্য একটু বেশি সমান। আইন সবলের কবলে পড়লে যেন ভোতা হয়ে যায়। সবল যেকোনো ধরনের অপরাধ করলেও প্রথমত: তাকে গ্রেফতারই হতে হয় না। গ্রেফতার হলেও তিনি জামিন পেয়ে যান। জামিন না পেলেও কারাগারে প্রবেশমাত্র তাদের জন্য অপেক্ষা করে আয়েশী জীবন। অর্থ-বিত্ত ও প্রভাবশালীদের অনেকের কারাগারে থাকতেই হয় না। ঠাঁই মেলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হসপিটালের কেবিনে। তারা মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারেন। পেয়ে যান হাই কমোড। প্রতিদিন তারা খেতে পান বাসায় রান্না করা খাবার। কারাগারের ভেতর ফুটফরমায়েশ খাটার লোকও তৈরি থাকে তাদের। বোতল চৌধুরী, কাজী কামাল, মুরাদ, সাহেদ, জিকে শামীম, পাপিয়া, রাসেল, হালমার্কের তানভীর, তুষার, ডেসটিনির রফিকুল আমীন, মোহাম্মদ হোসেন সাজাপ্রাপ্ত এমন অনেকেরই নাম নেয়া সম্ভব। বিভিন্ন মামলায় তাদেরও আদালতে হাজির করা হয়। তাদের কারও কারও হাতে হাতকড়া থাকলেও পায়ে থাকে না ডান্ডাবেড়ি। কারণ, তারা ভিআইপি।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর আইন প্রয়োগে বৈষম্য এবং দক্ষতা-অদক্ষতা প্রশ্নে অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা জজ মো: মঈদুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, একটি ঘটনা ঘটলে, সেটির মামলা হলে তদন্তের মাধ্যমেই উপসংহারে আসতে হবে। পুলিশ তদন্তের মাধ্যমে অনেক ঘটনাই উদ্ঘাটন করেছে। অনেক ক্লু-লেস হত্যাকাণ্ডের আসামিদের গ্রেফতার করেছে। তাই তাই সাগর-রুনি হত্যার মতো চাঞ্চল্যকর মামলাগুলোর রহস্য উন্মোচনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতার অভাব-এ কথা বলা যাবে না। তিনি বলেন, সাগর-রুনিকে কেউ না কেউ তো হত্যা করেছে। এটি অন্তত: আত্মহত্যা নয়। তাহলে সম্পৃক্তদের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না কেন? এ ধরনের সেনসিটিভ মামলার কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না-এটি বিশ্বাসযোগ্য নয়। এখানে আন্তরিকতার অভাব আছে। তাদের আরও সিরিয়াস হওয়া দরকার। কোথায় সীমাবদ্ধটা এটি যারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষে যারা আছেন তারা ভালো বঝুতে পারবেন। দুর্বলের ওপর আইনের সবল প্রয়োগ প্রসঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত এই বিচারক বলেন, একটি প্রবাদেই এটি পরিষ্কার সম্ভব। আইন সবার জন্য সমান। বাস্তবতা হচ্ছে কারও কারও জন্য একটু বেশি সমান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন