শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

দৃষ্টিহীনদের চোখে আলো গ্রন্থমেলায়!

রাহাদ উদ্দিন | প্রকাশের সময় : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

চোখে দেখতে না পেলেও বইয়ের গন্ধ মেলায় টেনে নিয়ে এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিপিকে। মাঝপথে হুইল চেয়ার সেবা দিয়ে তাকে সাহায্য করেছে সুইচ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। প্রায় ৪বছর ধরে বইমেলায় দৃষ্টিজয়ীদের জন্য বিশেষ আয়োজন স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনাীতে গিয়ে নতুন নতুন বইয়ের গন্ধ নেন লিপি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউটের এই শিক্ষার্থী থাকেন কুয়েত মৈত্রী হলে। প্রতিদিনই আসার চেষ্টা করেন মেলায়। বলেন এখানে আসলে শুধু বই না, অনেক বন্ধুু জুটে। এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে।
বলা হয়ে থাকে, মানুষ দৃষ্টিহীন বলে অন্ধ নয়, বরং মানুষ প্রজ্ঞাহীন হলেই অন্ধ হয়। সমাজের বাহ্যিক দৃষ্টিতে চোখে দৃষ্টি না থাকা মানুষগুলো বারবার নিজেদের প্রমাণ করেছেন যে, সুযোগ পেলেই তারা নিজেরা আলোকিত হওয়ার পাশাপাশি সমাজকে আলোকিত করতে পারেন। তাই আজকাল শারিরীক প্রতিবন্ধকতার শিকার জনগোষ্ঠীকে ‘ভিন্নভাবে সক্ষম’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সমাজের এসব মানুষ প্রতিবন্ধী নয় বরং পর্যাপ্ত সুযোগ সৃষ্টি করতে না পারায় এই সমাজ ও রাষ্ট্রকে প্রতিবন্ধী বললে অত্যুক্তি হবে না।
দৃষ্টিহীন মানুষগুলো চোখে দেখতে না পারলেও তাদের মন সদা জাগ্রত, আলোকিত। সমাজের এ অংশের বইপ্রেমিদের কথা চিন্তা করে প্রায় ১৫ বছর ধরে বইমেলায় ব্রেইল বই পড়ার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে ব্রেইল প্রকাশনী। এ উদ্যোগের ফলে পাঠ্যানুরাগী দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবইয়ের বাইরে পাচ্ছে খ্যাতিমান লেখকের লেখা কবিতা, উপন্যাস, ইতিহাস ও গল্পের বই পড়ার সুযোগ। গতকাল রোববারও মেলাপ্রঙ্গণ সরজমিনে ঘুরে দেখা যায় বাংলা একডেমি প্রাঙ্গণে ব্রেইল প্রকাশনীতে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের বই পড়ার চমৎকার দৃশ্য। একাডেমি অংশে মেলা থেকে বের হওয়ার পথে হাতের ডান পাশে আলো ছড়াচ্ছে স্টলটি।
আনজীর লিটনের লিখা বই বাবা বাড়ি ফিরেনি বইটির ব্রেইল সংস্করণ পড়ছিল রাজধানীর হোম ইকোনমিক্স কলেজের শিক্ষার্থী জেরিন। তিনি বলেন, অ্যাকাডেমিক বইয়ের বাইরে খুব একটা বই আমরা ব্রেইলে পাই না। যে কারণে আমাদের জ্ঞানটা থাকে সীমাবদ্ধ। সুতরাং আমাদের মতো যারা আছে এই শ্রেণির লোকদের জন্য যদি স্বনামধন্য লেখক প্রকাশকরা দুই একটা করে ব্রেইল বই বের করতো তাহলে আমাদের জ্ঞান অনেক সমৃদ্ধ হওয়ার সুযোগ পেতো। আর জ্ঞানের পথ উন্মুক্ত করার এই যে প্রয়াস এটার জন্য ব্রেইল প্রকাশনী অবশ্যই কৃতজ্ঞতার দাবীদার।
নাজিয়া জাবীন। পেশায় একজন শিশুতোষ লেখিকা। ব্রেইল বইয়ের স্বনামধন্য এই প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী বাংলাদেশী প্রকাশক। নিজ উদ্যোগে তৈরি এই প্রকাশনীর মাধ্যমে দীর্ঘ ১৫ বছর যাবত আলো ছড়াচ্ছেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সমাজে। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বিতরণ করে যাচ্ছেন বই। ২০১১ সাল থেকে এই প্রকাশনীর মাধ্যমে আলো ছড়াচ্ছেন বইমেলায়ও। ইনকিলাবের সাথে এক সাক্ষাৎকারে নাজিয়া বলেন, বইমেলাকে বলা হয় বাঙালির প্রাণের মেলা। এখন এখানে কিছু মানুষ এসে বই পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন অপরদিকে পড়তে জানা সত্ত্বেও সুযোগ পাচ্ছে না দৃষ্টিজয়ী এই মানুষগুলো। তাই তাদের কথা মাথায় রেখে সর্বপ্রথম আমি উদ্যোগটা নেই। প্রথম প্রথম তেমন কাউকে পাশে না পেলেও ধীরে ধীরে অনেকেই সাহায্য করতে থাকেন।
আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারী নতুন ৩০ টা ব্রেইল বইয়ের প্রকাশনা হবে বলে জানান নাজিয়া। তিনি বলেন, দীর্ঘদিনের এই পথযাত্রায় আমরা গতবছর ১০১ টি বই বের করার গৌরব অর্জন করি। এবার তারসাথে যুক্ত হতে যাচ্ছে আরো ৩০ টা। নাজিয়া বলেন, আমি লেখালেখি করি। আমার প্রায় ৪০টার মতো শিশুতোষ বই আছে। আজ থেকে ১৫ বছর আগে আমি আমার জমানো টাকা দিয়ে এই উদ্যোগটা হাতে নেই। এ ক্ষেত্রে আমার অনুপ্রেরণা ছিল আমার বাবা মা। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। তাদের থেকেই শেখা যে, মানবিকতা বলে একটা জিনিস আছে। শুধু নিজের জন্য বেঁচে থাকা নয়, চারপাশে তাকানো; মানুষের জন্য কিছু করার মাঝেই জীবনের আনন্দ। গতকাল রোববার অমর একুশে বইমেলার ১৯তম দিনে মেলায় নতুন বই এসেছে ৭৫টি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন