ভোগান্তির আরেক নাম ছিল ইসিবি চত্বর আর কালশী মোড়। পাঁচ মিনিট দূরত্বের দুটি মোড় পাড়ি দিতে সময় লাগত কমপক্ষে আধা ঘণ্টা। কখনো তা ঘণ্টায় গিয়ে ঠেকত। তবে ইসিবি চত্বর থেকে কালশী মোড়, সাগুফতা ও মিরপুর ডিওএইচএস পর্যন্ত প্রশস্ত সড়ক আর ফ্লাইওভারের বদৌলতে বদলে গেছে সে চিত্র। এখন ঘণ্টার রাস্তা পাড়ি দিতে সময় লাগছে মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিট।
যানজটে নাকাল রাজধানীর মানুষকে স্বস্তি দিতে নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও সড়কে দিনদিন গাড়ির চাপ বাড়ায় ও শৃঙ্খলা না থাকায় খুব একটা কাজে আসছে না। তবুও নিরন্তর চেষ্টা সরকারের। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের পর থেকে এখন অবধি মেট্রোরেলের একাধিক স্টেশন খুলে দেওয়ায় উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলতে স্বস্তি আসছে নগরবাসীর। বিশেষ করে মিরপুর এলাকার যেসব মানুষ এই রুট ব্যবহার করছেন তারা নির্বিঘ্নে চলাচল করছেন। এবার এই এলাকার মানুষের চলাচল স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে খুলে দেওয়া হলো কালশী ফ্লাইওভার। ২ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভারটি চালু হলে মিরপুরের সঙ্গে বনানী, উত্তরা এবং রাজধানীর পূর্বাংশের যোগাযোগ আরও সহজ হবে বলে আশা করছে সরকার। গতকাল রোববার ইসিবি চত্বর থেকে মিরপুর পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন এবং কালশী মোড়ে নির্মিত ফ্লাইওভারের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফ্লাইওভারের উদ্বোধন হলেও মিরপুরবাসী প্রশস্ত সড়কের সুফল ভোগ করছিল কয়েক মাস আগে থেকেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইসিবি চত্বর থেকে মিরপুর পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন এবং কালশী মোড়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ১২ কোটি ১১ লাখ টাকা। ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৩৩৫ কিলোমিটার, যা শুরু হয়েছে বাউনিয়াবাঁধ এলাকায়। কালশী মোড়ে এসে ফ্লাইওভারের একটি অংশ বাঁ দিকে মোড় নিয়ে পল্লবীর দিকে গেছে। অন্য অংশটি চলে গেছে মিরপুর ডিওএইচএসের দিকে। মূল উড়ালসড়ক চার লেনের। ওঠানামার জন্য পাঁচটি র্যাম্প রয়েছে। এর নিচে প্রশস্ত করা রাস্তার দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৭ কিলোমিটার, যা মাটিকাটা এলাকার ইসিবি চত্বর থেকে শুরু হয়ে কালশী মোড় হয়ে মিরপুর ডিওএইচএসে চলে গেছে। সড়কের মোট প্রশস্ততা ১২২ ফুট।
এর মধ্যে যানবাহন চলাচলের মূল রাস্তাটিই ৩৬ ফুটের। মোট ১২২ ফুট প্রশস্ত সড়কে ছয় লেন রয়েছে। উভয় পাশে অযান্ত্রিক যানের জন্য ১০ ফুটের পৃথক লেন। সড়কের পাশে ছয় ফুটের ফুটপাথ। আর রাস্তার মাঝে চার লেনের ফ্লাইওভার রয়েছে। ইসিবি থেকে এ সড়কপথে রাজধানীর মিরপুরের কালশী, মাটিকাটা, সাগুফতা ও মিরপুর ডিওএইচএস এলাকায় চলাচলকারী মানুষ বেশি সুবিধা ভোগ করবেন। মিরপুর থেকে বিমানবন্দর, উত্তরা, গুলশান, বনানী ও রামপুরা যাতায়াতে সময় বাঁচবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা বলছেন, প্রশস্ত সড়ক ও নির্মিত ফ্লাইওভারে বদলে যাবে মিরপুরে সেই আগের চিত্র। বাড়বে যানবাহনের গতি। রক্ষা মিলবে দীর্ঘ দিনের ভোগান্তি থেকে। ফ্লাইওভারের উঠে মাত্র দুই মিনিটে ইসিবি চত্বর থেকে কালশী মোড়ে যাওয়া যায়। কিন্তু আগে ইসিবি চত্বর থেকে কালশী মোড়ে আসতে সময় লাগতো অন্তত আধা ঘণ্টা। রাস্তা প্রশস্ত হয়েছে। ফ্লাইওভারও চালু হলো। এর সুফল পাবে মিরপুরবাসী। আগে রাস্তাটা ভাঙা ছিল। এখন রাস্তা অনেক বড় হয়েছে। আলাদা আলাদা লেন হয়েছে, লোকাল গাড়িও চলতে পারবে। তারমধ্যে ফ্লাইওভারও চালু হলো। কালশীতে প্রচণ্ড যানজট লেগে থাকত। এখন সব ক্লিয়ার। যানজট থাকবে না। সড়কে গতি আসবে। দূরের পথ যেতে সময়ও লাগবে কম।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, মিরপুর সেনানিবাস, চিড়িয়াখানা, সেনাবাহিনীর আবাসন, অনেক শিক্ষা ও চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান, জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম রয়েছে। মিরপুরের যাতায়াত সহজ করতে আগেই নতুন সড়ক ও সেনানিবাস এলাকায় উড়ালসড়ক নির্মাণ করা হয়েছিল। এতে মিরপুরে যাতায়াতে সড়কটির ব্যবহার অনেক বেড়ে যায়। তবে কালশী মোড়ে সরু থাকায় সেখানে প্রায় যানজট হতো। এখন ওই পথ দৈনিক এক লাখ যানবাহনের চাপ সামলাতে পারবে।#
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন