বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

গতিহীন বাকলিয়া এক্সেস রোড

সাড়ে ৬ বছরেও শেষ হয়নি দেড় কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ : ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকায় জনদুর্ভোগ : সিডিএর ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

মাত্র দেড় কিলোমিটার সড়ক। সাড়ে ছয় বছরেও শেষ হয়নি নির্মাণ কাজ। তিন দফা সময় ব্যয় দুটোই বেড়েছে। আসেনি কাজে গতি। চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া এক্সেস রোড নির্মাণ প্রকল্পটি এখন ওই এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে বছরের পর বছর। তাতে বাসাবাড়ি সয়লাব সড়কের ধুলাবালুতে। এ দুর্ভোগের অবসান কবে হবে তা জানেন না কেউ।

সড়কটি নির্মাণের শুরুতেই বাধা হয়ে দাঁড়ায় ১০ তলা একটি ভবন। সিডিএর অনুমোদিত ওই ভবনের উপর দিয়েই সড়কের নকশা প্রণয়ন করা হয়। ফলে কাজ করতে গিয়ে ভবনটি ভাঙার সিদ্ধান্ত নেয় সিডিএ। এতে আপত্তি জানায় মালিক পক্ষ। এ নিয়ে থমকে যায় প্রকল্পের কাজ। সেই ভবন জটিলতার অবসান হয়েছে বছর পার হয়ে গেছে। তবে প্রকল্প কাজ তেমন এগুতে পারেনি।
কারণ সড়কের জন্য অধিগ্রহণকৃত বেশকিছু জমি এখনও বুঝে পাওয়া যায়নি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিছু জমির কাগজপত্র ঠিক নেই। এ কারণে রেজিস্ট্রি নেওয়া যাচ্ছে না। আবার মালিক পক্ষ জমিও বুঝিয়ে দিচ্ছে না। তাতে কাজে নতুন জটিলতা দেখা দিয়েছে। সর্বশেষ প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে কাজের যে গতি তাতে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা নিয়ে সংশয় রয়েছে। যদিও প্রকল্প পরিচালক বলছেন, আর সময় বাড়ানো হবে না। জুনের মধ্যেই কাজ শেষ করা হবে।
বন্দরনগরীর অন্যতম ব্যস্ত এবং ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা চন্দনপুরা থেকে কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত এক দশমিক ৫৩ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সড়ক নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করে সিডিএ। সড়ক নির্মাণকাজের অনুমোদন পাওয়া যায় ২০১৬ সালে। ২০৫ কোটি ৪৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটির আওতায় ৪১৭ দশমিক ৫০ কাঠা জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এছাড়া ড্রেন নির্মাণ, ৪টি বক্স কালভার্ট, ১০ ক্রস কালভার্ট, ২০০টি স্ট্রিট লাইটও স্থাপনের কাজ মিলে প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল।
যানজট কমানোর পাশাপাশি দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাথে নগরীর যোগাযোগ সহজ করার ক্ষেত্রে সিডিএর মাস্টারপ্ল্যানে এমন একটি সড়ক নির্মাণের বিষয়টি বেশ গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করা হয়েছিল। ইতোমধ্যে বহদ্দারহাট থেকে কর্ণফুলী সেতু পর্যন্ত ৬ লেনের সংযোগ সড়ক নির্মাণ শেষ করা হয়েছে। কিন্তু এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল নগরীর বৃহত্তর বাকলিয়া এলাকার বাসিন্দারা। এ এক্সেস রোড নির্মাণ করা হলে বহদ্দারহাট কর্ণফুলী সংযোগ সড়কের সুফল বাকলিয়াসহ সন্নিহিত অঞ্চলের মানুষ পাবে বলে উল্লেখ করে প্রকল্পটির উপর জোর দেয়া হয়। ২০২০ সালের জুন মাসে সড়কটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার কথা ছিল।
কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ এবং ঠিকাদার জটিলতার কারণে সাড়ে ছয় বছরেও শেষ করা সম্ভব হয়নি সড়কটির নির্মাণকাজ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাথমিক নকশা সরেজমিন পরিদর্শনে না গিয়ে অনুমোদন করায় সড়কটি নির্মাণে তৈরি হয়েছে দীর্ঘসূত্রতা। অনুমোদিত একটি ভবনের উপর দিয়ে সড়ক নির্মাণের নকশা করা হয়। শেষ পর্যন্ত ওই ভবনটি অক্ষত রেখে তার পাশ দিয়ে সড়কটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। আর এ কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপণ হয়। এতে সিডিএর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নগর পরিকল্পনাবিদেরা।
শুরুতে দেড় কিলোমিটার প্রশস্ত এবং ৬০ ফুট চওড়া সড়কটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ২০৫ কোটি টাকা। আর সময় নির্ধারণ করা হয় ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত। ২০১৭ সালে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। ২০১৯ সালে প্রকল্প মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এরপর তৃতীয়বারের মত মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। নতুন করে সংশোধিত প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২২০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। নতুন নকশায় ভবনটি না ভেঙেই দক্ষিণ দিকে সড়কটির নির্মাণকাজ করছে সিডিএ।
স্থানীয়রা জানান, ভবন জটিলতা অবসানের পর সিডিএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল গত ডিসেম্বরের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হবে। কিন্তু কাজ এখনও শেষ করা যায়নি। যেই গতিতে কাজ চলছে তাতে নির্ধারিত সময় আগামী জুনের মধ্যে কাজ শেষ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা। নগরীর ঘনবসতিপূর্ণ এবং অভিজাত আবাসিক এলাকা গড়ে উঠেছে বাকলিয়ায়। ওই এলাকার মাঝখান দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে সড়কটি। কাজে ধীরগতির কারণে বর্ষায় কাদাপানি আর শুষ্ক মৌসুমে ধুলায় যন্ত্রণায় নাকাল স্থানীয়রা। স্থানীয়দের অভিযোগ, কিছুদিন কাজে গতি আসলেও আবার তা থেমে যায়। কয়েকটি এলাকায় এখনও পুরোদমে কাজও শুরু করা যায়নি।
প্রকল্পের পরিচালক সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী কাদের নেওয়াজ ইনকিলাবকে বলেন, প্রকল্পের কাজ ৮৫ ভাগ শেষ হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে। কয়েকটি পয়েন্টে এখনও ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা রয়ে গেছে। এ কারণে কাজ কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। তিনি বলেন, সড়কটি চালু হলে নগরীর বিশাল এলাকায় যানজট কমে যাবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন