বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের ঠিকাদারের ভুলে বিমানবন্দর উড়াল সড়কের লুপ তৈরিতে চলছে ভাঙা গড়ার খেলা। এ প্রকল্পে কাজের ধীর গতির কারণে রাজধানীর ব্যস্ততম এ সড়কে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে যানজট ও জনদুর্ভোগ। এছাড়াও বাড়ছে প্রকল্পব্যয়। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাষ্ট্র। হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি ও মাস্টার পয়েন্ট শপিং কমপ্লেক্সের সামনে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পে তৈরি করা লুপটি ভেঙে ফেলা হয়েছে।
এ বিষয়ে বাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের কনসালট্যান্ট এই লুপটি তৈরির পর বুয়েট ইঞ্জিনিয়ার টিম দ্বারা টেস্ট করে রিপোর্টে গড়মিল পেয়েছে। তাদের সাথে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ঠিকাদার এখন তাদের নিজ খরচে লুপটি ভেঙে নতুনভাবে তৈরি করে দিবে। তিনি আরো বলেন, ১০ এপ্রিলের মধ্যে অর্থাৎ রমজান ঈদের আগেই যানবাহন চলাচলের জন্য বিমানবন্দর উড়াল সড়ক উম্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উত্তরার মহাসড়কে তৈরি করা উড়াল সড়কে উঠা নামা করতে গত ৪/৫ মাস ধরে যে লুপটি বানানো হয়েছে তা অদৃশ্য কারণে রাতারাতি ভেঙে ফেলেছে এবং এর মালামাল সরিয়ে সড়কের পাশে স্তুপ করে রেখে আবারও নতুন করে লুপ তৈরির কাজ শুরু করেছে।
বিমানবন্দর সড়কে তৈরি করা লুপটি ভেঙে ফেলার কারণ জানতে চাইলে প্রকল্পের সাইট ইঞ্জিনিয়ার মো. রবিউল জানান, লুপটি তৈরি করার পর রোডস্ এন্ড হাইওয়ে এবং বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) যৌথভাবে বুয়েট ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা টেস্ট করার পর দেখা যায় কাজের গুনগত মান অনেক খারাপ হওয়া ছাড়াও এই লুপটির ধারণ ক্ষমতা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
লুপটির ধারণ ক্ষমতা হওয়ার কথা ছিলো ৪৫ টন, সেখানে টেস্টের পর দেখা যায় লুপটির ধারণ ক্ষমতা মাত্র ৩০ টন। লুপ তৈরিতে অনিয়ম হওয়ার কারণে রোডস্ এন্ড হাইওয়ে এবং প্রকল্পের কর্মকর্তারা মিলে এটি বাতিল করেন বিধায় লুপটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। তারা আরো জানায় এই লুপটি নতুন করে তৈরি করা হবে, তবে এটি তৈরি করতে আরও দুই মাস সময় লাগবে।
গত ২০১৮ সাল থেকে শুরু হওয়া ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের বিমানবন্দর এলাকায় বিআর ট প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে উত্তরা আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত সড়কের কয়েকটি লেন বন্ধ রেখে নির্মাণ কাজ চালানোর কারণে প্রায়ই ঘণ্টার পর ঘণ্টা এ সড়কে যানজট লেগে থাকে। ২০১৮ সাল থেকে এই সময় পর্যন্ত গত ৫ বছর ধরে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে বিমানবন্দর সড়ক হয়ে গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ ও উত্তরবঙ্গগামী পরিবহন যাত্রীদের।
উত্তরা মডেল টাউনে বসবাসরত ভুক্তভুগীরা জানায়, বিআরটি প্রকল্পের কাজের ধীরগতির কারণে রাজধানীর ব্যস্ততম সড়ক ঢাকা বিমানবন্দর মহাসড়ক প্রায়ই যানজটের দখলে থাকতে দেখা যায়। প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন এ সড়কের উপর দিয়ে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে চলাচল করার কারণে বিভিন্ন গাড়ির চাপে প্রতিদিনই যানজটের কবলে পরে উত্তরা মডেল টাউন বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
বিমানবন্দর মহাসড়কে মাঝে মাঝে কয়েকটি লেন বন্ধ করে দিয়ে বিআরটি প্রকল্পের চলমান কাজের কারণে সড়কে সৃষ্টি হওয়া যানজট নিরসনের লক্ষে গত ৮ নভেম্বর উত্তরা আজমপুর হয়ে টঙ্গী স্টেশন রোড ফ্লাইওভারের একাংশ খুলে দেওয়া হলেও গণপরিবহনগুলো ফ্লাইওভার ব্যবহার না করায় উত্তরা হাউজবিল্ডিং ও আব্দুল্লাহপুর ফ্লাইওভারের নিচে যানজট লেগেই থাকে। যানজটের কবলে পরে গণপরিবহন যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর গোলচক্কর এলাকার ভুক্তভোগীরা জানায়, আল্লাহ জানেন কবে এখানকার কাজ শেষ হবে। গত কয়েক বছর যাবৎ আমরা যানজটের কবলে আটকে আছি। তারা আরো জানায় হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে সড়কের মধ্যখানে বড় বড় পিলার দিয়ে উড়াল সড়ক তৈরি করা হচ্ছে অথচ এখানে হিউম্যান সেফটি বলে রাস্তায় কোন কিছু দেখা যায় না। যানজটে নাকাল রাজধানী বাসিকে স্বস্তি দেওয়ার চেষ্টায় সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও বিআরটি প্রকল্পের সড়ক নির্মাণে নানান অনিয়মের কারণে এবং কাজের ধীর গতিতে উত্তরা বিমানবন্দর সড়কে যানজট লেগেই থাকে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন