দেখতে দেখতে ২৫ তম দিন পার করলো বাঙালির প্রাণের অমর একুশে গ্রন্থমেলা। যেন বিদায়ের সুর বাজছে প্রাণের মেলায়। আর মাত্র ২ দিন পর পর্দা নামবে মাসব্যাপী এই মেলার। সেই সাথে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নেমে আসবে চিরচেনা শুনসান নীরবতা। তাই বিদায়ের আগেই শেষ মুহূর্তে বই কেনার ধুম পড়েছে মেলায়। গত শুক্রবার ও গতকাল শনিবার ছুটির দিন হওয়ায় রাজধানী ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে এসেছে নানা বয়সী পাঠক। দর্শনার্থীও কম ছিল বলা যায় না। তবে এসময়ে এসে অধিকাংশই কিনে নিচ্ছেন পছন্দের লেখকের বইগুলো।
গতকাল শনিবার মেলার দ্বার খুলেছিল সকাল ১১টায়। মেলা চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকালে মানুষের উপস্থিত খুব একটা না থাকলেও বেলা গড়াতেই মেলায় নামে জনস্রোত। এদিন এক স্টল থেকে অন্য স্টলে ঘুরে ঘুরে পূর্ব থেকে সংগ্রহ করা ক্যাটালগ থেকে বাছাই করা বইগুলো কিনে নিয়েছেন পাঠকরা। এদিন মেলা ঘুরে অধিকাংশ পাঠকের হাতেই দুই একটি করে বই দেখা যায়। এসময়ে এসে আগের তুলনায় অনেক বেশি বই বিক্রি হচ্ছে বলেও জানান বিক্রেতারা।
মেলা ঘুরে স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছিল শেষপর্যায়ে এসে এখন আর ঘুরে দেখার আগ্রহ ছিল না বইপ্রেমী-দর্শনার্থীদের। সবাই বিভিন্ন প্রকাশনীর বইয়ের ক্যাটালগ সংগ্রহ করে প্রিয় বইগুলো বিভিন্ন স্টল থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন। আর এই চাহিদা পূূরণ করতে বিক্রয় প্রতিনিধিরাও রীতিমতো ক্লান্ত। রাজধানীর মৌচাক থেকে মেলায় বই কিনতে এসেছেন শাহরিয়ার। তিনি আগে থেকেই বইয়ের তালিকা ঠিক করে এনেছেন। তিনি বলেন, আগে থেকেই বেশ কয়েকটি বই পছন্দ করা রয়েছে। সেগুলোর তালিকা ধরে বই কিনব।
বিক্রয়কর্মীরা জানান, শেষ মুহূর্তে এসে বইয়ের বিক্রি বেশ ভালো। যারা আসছেন তারা আগে থেকেই বিভিন্নভাবে ভালো বইগুলোর নাম সংগ্রহ করেছেন। সেগুলোর তালিকা করে এসে এখন বইগুলো সংগ্রহ করছেন। অন্যধারা প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী নিলুপা বলেন, মেলার শেষ দিকে হওয়াতে ভিড়ের সঙ্গে বিক্রিও বেশ ভালো। এখন মেলায় যারা আসছেন সবাই বই কিনছেন।
প্রথমা প্রকাশনীতে রকিব হাসানের গোয়েন্দা কিশোর মুসা রবিন ক্যানারি দ্বীপের রহস্য, আনিসুল হলের আলো-আঁধারের প্রচ্ছদে চোখ পড়ে মেলায় আসা রাজধানীর সিটি কলেজের শিক্ষার্থী সাকিবের। জিজ্ঞেস করলে জানান, আগে ক্যাটালগ সংগ্রহ করা হয়নি। তাই এখন যে বইগুলো ভালো লাগে সেগুলোই কিনে নিয়ে যাব।
এদিকে ছোট স্টলগুলোতে বরাবরের ন্যায় একই রকম বিক্রি থাকে। কারুকাজ প্রকাশনীতে গিয়ে দেখা যায় মলিন চেহারা নিয়ে পাঠকের অপেক্ষায় প্রহর গুণছে নাজনিন মনি। সামনে যেতেই জিজ্ঞেস করলেন স্যার কোন বইটা চায় আপনার? সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে হাসিমাখা মুখটা হয়ে গেল মলিন। জানালেন, বড় বড় প্রকাশনীর ভীড়ে বরাবরই জীর্ণশীর্ণ থাকছে আমাদের মতো ছোট ছোট প্রকাশনীর স্টলগুলো। বইয়ের কাটতি সবসময় সমান।
গতকাল শনিবার অমর একুশে বইমেলার ২৫তম দিনে মেলায় নতুন বই এসেছে ১৮৫টি। সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত মেলায় ছিল শিশুপ্রহর। বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় কোভিড-১৯ : ভাষার বৈশ্বিকতা ও বাংলাদেশের সাহিত্য এবং কোভিড-১৯ : সংস্কৃতির সংকট ও রূপান্তর শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হাকিম আরিফ এবং মোহাম্মদ শেখ সাদী। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন পারভেজ হোসেন, হামীম কামরুল হক, কে এইচ মাসুদ সিদ্দিকী এবং আবুল হাসান চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রফিকউল্লাহ খান। আজ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন সামসাদ সুলতানা খানম, হাসান রাউফুন, বীথি রহমান এবং মামুন সারওয়ার।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন