জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রলীগের নয়জন কর্মীর বিরুদ্ধে বিশ^কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে গভীর রাতে তৃতীয় বর্ষের (৪৯ ব্যাচের) এক শিক্ষার্থীকে রুমে ডেকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। গত শুক্রবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে হলের ২১৯ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিচার চেয়ে হল প্রভোস্ট বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী সাকিবুল ইসলাম ফারাবি বিশ^বিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং বিশ^কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীরা হলেন- ইংরেজি বিভাগের জুনায়েদ হাসান রানা, ফার্মেসি বিভাগের নাইমুল ইসলাম সাগর, ইতিহাস বিভাগের আতিক শাহরিয়ার, চারুকলা বিভাগের মোহতাছিম বিল্লাহ, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের আহমেদ আক্তার উৎস ও সালেক ইবনে ইউসুফ কাব্য, গণিত বিভাগের জুনায়েদ ইভান, বায়োকেমেস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের ইমরান মির্জা এবং পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সৈকত ইসলাম। তারা সকলেই বিশ^বিদ্যালয়ের ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষের (৪৮ ব্যাচ) শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
অভিযোগপত্র সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাত দুইটার দিকে শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী ২১৬ নং কক্ষের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ২১৯ নং কক্ষে ডেকে নিয়ে যায়। এসময় তাদের নানাভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। পরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের রুমে তালা ঝুলিয়ে দিলে সারারাত গেস্টরুমেই রাত্রি যাপণ করেন তারা।
ভুক্তভোগী ফারাবি বলেন, ‘গত শুক্রবার রাতে ৪৮ ব্যাচের ভাইয়েরা আমাকে ২১৯ নং কক্ষে ডেকে নিয়ে যায়। গত কয়েকদিনে কেন আমরা ছাত্রলীগের প্রোগ্রামগুলোতে ছিলাম না এ বিষয়ে জানতে চায়। আমার পরীক্ষা চলায় থাকতে পারিনি বললে তারা আমাকে উত্তেজিত হয়ে আমার দিকে তেঁেড় আসে। একপর্যায়ে আমাকে শার্ট খুলতে বলে। শার্ট খুলতে অস্বীকৃতি জানালে আমাকে এলোপাথাড়িভাবে মারতে থাকে। পরবর্তীতে ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে না থাকলে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। পরে আমরা বিষয়টি হল প্রভোস্ট কে অবহিত করি। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় আজ রবিবার প্রভোস্ট স্যাারের অভিযোগপত্র জমা দেই।’
অভিযুক্ত জুনায়েদ হাসান রানা বলেন, ‘গেস্টরুমে আমরা বসিনি। ফারাবি মাঝে মাঝেই নেশা করে। ঘটনার দিন সে নেশা করে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করতেছিল। তাই ওর বাবা মাকে জানানোর জন্যই ওকে ডাকা হয়েছিল। তবে মারধরের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’
প্রত্যক্ষদর্শী আন্তর্জাতিক বিভাগের সাকিব সরকার মারধরের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘চড় থাপ্পড়ের আওয়াজে আমি রুম থেকে উঠে এগিয়ে যাই। তখন দেখি ৪৮ ব্যাচের সিনিয়র ভাইয়েরা ফারাবি কে মারধর করতেছে। পরে তাকে আমি রুম থেকে বের করে নিয়ে আসি।’
এ ব্যাপারে বিশ^কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার বলেন, ‘ঘটনা সম্পর্কে আমি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
বিশ^বিদ্যালয়েল প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমার কাছে কেউ অভিযোগ জানায়নি। হলের প্রভোস্ট সংক্ষেপে জানিয়েছে যে সিনিয়র জুনিয়রদের কিছু একটা ঝামেলা হয়েছিল যার সমাধান হয়ে গিয়েছে। হল প্রশাসন যদি আমাকে অফিসিয়ালি জানায় তাহলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘ছাত্রলীগ র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হলে আমরা সাংগঠনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন বলেন, ‘মারধরের ঘটনা সম্পর্কে আমি অবহিত নই। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা যদি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকে তাহলে আমরা সাংগঠনিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
র্যাগিং ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধী ক্যাম্পেইনের মধ্যেই এ ঘটনা কতটা বিব্রতকর জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, ‘ঘটনা সম্পর্কে এখনো অবগত নই। ঘটনা জেনে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন