সূর্যের উদয়-অস্তের সাথে তাল মিলিয়ে ক্যালেন্ডারের পাতায় আজ ফেব্রুয়ারির শেষ দিন। বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা হলেই পাঠক হৃদয়ের আকুতি উপেক্ষা করে বিদায় ঘন্টা বাজবে মেলায়। বইপ্রেমীদের নতুন বইয়ের গন্ধ নেয়ার স্বাদ শেষ হয়েও হয়তো হবে না শেষ। মনে হবে আরো কিছুদিন যদি আসার সুযোগ হতো এই অঙ্গনে! যদি এখনি শেষ না হতো নতুন বইয়ের গন্ধ নেয়ার এই অনিন্দ্য অনুভূতি! কিন্তু পাঠক হৃদয়ের এতসব আকুতির কাছে আজ বেরসিকই হতে হবে আয়োজক কমিটিকে। কারণ মেলার নির্ধারিত সময় যে আজ শেষ হতে চললো। সুতরাং আরো একটা বছর বইপ্রেমীদের অপেক্ষা করতে হবে এই আয়োজনের জন্য। তখন হয়তো পাঠক, লেখক, প্রকাশকদের মিলনমেলায় আবারও মুখরিত হবে এই প্রাঙ্গন।
বাংলা একাডেমি আয়োজিত বাঙালির এই প্রাণের মেলা গতকাল সোমবার ২৭তম দিন কার করে। মাসব্যাপী চলা মেলায় এদিন ছিল বিদায়ের আবহ। তাই তো কর্মদিবসেও দ্বার খুলতেই মেলায় নামে জনস্রোত। বেলা গড়াতেই মেলার প্রবেশদ্বারে দেখা যায় বইপ্রেমীদের লম্বা সারি। লেখক, পাঠক, কবি ও কবিতার মিশেলে এদিন মেলা হয়ে উঠে প্রাণের মেলা।
শুধু রাজধানী নয়, এদিন রাজধানীর আশপাশের অনেক জেলা শহর থেকেও পাঠকরা এসেছেন মেলায়। সুদূর ফেনি থেকে মেলায় এসেছেন একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খলিলুর রহমান। মাতৃভাষা প্রকাশনীর সামনে হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখছেন একটি উপন্যাস। হাসনাত লোকমানের লিখা উপন্যাস অপ্রেম। খলিল জানান, হাসনাত স্যার যখন আমাদের জেলায় ম্যাজিসট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তখন থেকে ওনার সাথে পরিচয়। খুবই অমায়িক একজন মানুষ। লিখনিতেও অসাধারণ। বর্তমানে বাংলা একাডেমির সচিবের দায়িত্বে রয়েছেন। তাই মেলায় এসে ওনার সাথে দেখাটাও হলো আর বই কেনাও হলো।
মো. আরিফ উদ্দিন খানের বঙ্গবন্ধুর কর্মদর্শণ, চৌধুরী শহীদ কাদেরের বঙ্গবন্ধু তরুণ প্রজন্মের চোখে, মিঠুন সাহার বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন ভাবনা, মো. আনিসুর রহমানের বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের সংবিধান, আবদুল বাছিরের বঙ্গবন্ধু হত্যাকণ্ড ও জেলা ভিত্তিক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যেমন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কুমিল্লা জেলা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নোয়াখালী জেলা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চট্টগ্রাম জেলা ইত্যাদি গ্রন্থের প্রচ্ছদে ঢাকা পড়েছে তাম্রলিপি।
কিন্তু ইতিহাস ভিত্তিক এসব বই হাতে না নিয়ে মুহাম্মদ জাফর ইকবালের ফেরা গ্রন্থটি হাতে নিয়ে পড়ছিলেন রাজধানীর বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ শিক্ষার্থী হুমাইরা। জানতে চাইলে তিনি বলেন, জীবিত কিংবদন্তীদের মধ্যে জাফর স্যার নিঃসন্দেহে অন্যতম সেরা লেখক। তাই ওনার মৃত্যুর আগেই ওনার সাহিত্যের সাথে পরিচিত হওয়া, ওনাকে জানা এই বিষয়টা পরবর্তীতে অনেক আনন্দ দেবে। কারণ যখন তিনি ইতিহাসের অংশ হবে তখন হয়তো আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা হবে।
ঐতিহ্য প্রকাশনীতে তরুণ ইউসুফের লেখা শেরে বাংলা ও যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন বইটি হাতে নিয়ে পড়ছিলেন কবি নজরুল কলেজের বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আশিক। অনুভূতি ব্যাক্ত করে আশিক বলেন, বাংলা বিভাগের সাথে এই বইটি অনেক বেশি রিলেটেড। তাছাড়া বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে এই নামটা৷ তাই ওনার জীবনী জানাটা একজন বাংলা সাহিত্যের শিক্ষার্থী হিসেবে আমার জন্য অনেক বেশি জরুরি বলে মনে করছি।
এদিকে মেলার শেষ সময়ে এসেও জমে উঠতে পারেনি লিটল ম্যাগ চত্বর। জাতীয় শিশু-কিশোর পত্রিকা মাসিক ফুলের হাসি ম্যাগাজিনের বিক্রেতা হাসান জাহিদ জানান, যাতায়াতের খরচও উঠাতে পারবে না এখানকার স্টল মালিকরা। গতকাল মেলার ২৭তম দিনেও মেলার এই অংশ ছিল জনশূন্য। যদিও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পুরোটা জুড়ে এদিন ছিল গণমানুষের ঢল।
গতকাল অমর একুশে বইমেলার ২৭তম দিনে মেলায় নতুন বই এসেছে ১৫৮টি। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ববাঙালির সাহিত্য শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আলম খোরশেদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন এ. এফ. এম. হায়াতুল্লাহ, আ-আল মামুন এবং জসিম মল্লিক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। আজ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন জাহিদ মুস্তাফা, মুমিত আল রশিদ, ফরিদ আহমদ দুলাল, আরেফিন রব। আজ মেলার শেষ দিনে মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন