‘শতভাব বিদ্যুৎ এ দেশ’ ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কিন্তু বিদ্যুতে স্বাভাবিক পরিস্থিতি নেই। অস্বাভাবিক লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ মানুষ। শীতের পর গরম শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে বোরো মৌসুম। কয়েকদিন পর শুরু হচ্ছে পবিত্র মাহে রমজান। চৈত্রের গরম, ধানক্ষেতে সেচ এবং রমজানে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাবে। কিন্তু নির্বিঘ্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের কার্যকর উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা উৎপাদন বাড়িয়ে ‘বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক’ রাখার কথাবার্তা বললেও বাস্তবে ব্যাপকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহের উদ্যোগ শুরু করা হয়নি। ডলার সঙ্কটের কারণে রেন্টাল, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর বকেয়া বিল আটকে যাওয়ায় তারা বিদেশ থেকে জ্বালানি তেল ও গ্যাস আমদানি করতে পারছেন না। ভারতের আদানি কোম্পানিকে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেয়া হলেও সেখান থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। দেশে যে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে, সেগুলো চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ সারাদেশে বোরো ধানের জমিতে সেচ দিতে বাড়তি বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে। ফলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন সামনে বিদ্যুৎ সঙ্কট নিয়ে বিপর্যয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জানতে চাইলে বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান বলেন, সামনের গরমে বিদ্যুতের সঙ্কট হবে না। কারণ এখনও তো ডলার সঙ্কট রয়েছে, কিন্তু চাহিদা অনুসারে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে। আর সরকার ডলার সরবরাহ স্বাভাবিক করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। তাই জ্বালানি সরবরাহে সমস্যা হবে না। অথচ বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর সংগঠন ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন (বিপ্পা) সভাপতি ফয়সাল খান ইনকিলাবকে বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু রাখার জন্যই আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে সহযোগিতা চেয়েছি। প্রতিমাসে মাসে ২০ থেকে ২৫ কোটি ডলারের এলসি খুলতে হয়। তারা চাহিদার ৭০ শতাংশ তেল আমদানি করতে পারছেন। ৩০ শতাংশের জন্য এলসি খুলতে সমস্যা হচ্ছে।
জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর ইনকিলাবকে বলেন, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হওয়ায় বড় ধরনের অসামঞ্জস্যতা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সঙ্গে ক্রয়চুক্তি দায়বদ্ধতা যেহেতু ডলারে, ফলে মুদ্রার অসামঞ্জস্যতা তৈরিতে এ খাতে একটা অস্থিরতা হবেই। স্থিতিশীলতা না থাকলে এটি বিদ্যুৎ খাতকে আরো ভোগাবে।
জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম মাসেই দুই দফায় ১০ দশমিক ২৩ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। বাড়তি দাম দিয়েও বিদ্যুতের ভোগান্তি থেকে মুক্তির আশ্বাস মিলছে না সাধারণ গ্রাহকের। আগামীতে বিদ্যুতের দাম আরো বাড়তে পারে বলে সরকারের পক্ষ থেকে আভাস দেয়া হচ্ছে। আগামী এপ্রিল-মে মাসে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার মেগাওয়াট। প্রকৃত চাহিদা এর চেয়েও বেশি বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।
উৎপাদন সক্ষমতা উদ্বৃত্ত থাকা সত্ত্বেও গরমকালে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ডলার সঙ্কটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রাথমিক জ্বালানি গ্যাস, কয়লা ও ফার্নেস অয়েল চাহিদা অনুযায়ী আমদানি করা সম্ভব হবে না। ফলে বহু সচল বিদ্যুৎকেন্দ্র অচল থাকতে পারে। রমজানেও বিদ্যুতের জন্য সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হতে পারে বলে মনে করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে, সারাদেশে লাখ লাখ গভীর নলকূপ ও সাধারণ নলকূপে পানি উত্তোলন করে বোরো চাষাবাদ করা হয়। এসব মেশিন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন ও বরেন্দ্র নামে পরিচিত। সারাদেশে বিএডিসির ৫৩৩৭টি গভীর নলকূপ রয়েছে। আর রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলায় বিএসডিসির গভীর নলকূপ থাকলেও বরেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ৫৫৩৮৭৭টি বরেন্দ্র নলকূপ দিয়ে বোরো চাষ করা হয়ে থাকে। এর বাইরে ভাসমান পাম্প রয়েছে ৭৬৯৬টি। সবগুলো বিদ্যুতেই চলে।
দেশের অঞ্চলভেদে সাধারণত জানুয়ারি মাসে সেচ শুরু হয়েছে। কোনো অঞ্চলে মার্চ মাসের শেষ দিকে কোনো অঞ্চলে এপ্রিলের প্রথমার্ধ্য পর্যন্ত সেচের পানি সরবরাহ করতে হবে। এসব মেশিনের ডিজেল ও বিদ্যুতেই চলে। যেসব মেশিন ডিজেল দিয়ে চলে জ্বালানির দাম বৃদ্ধির কারণে কৃষকের উৎপাদন খবর বেড়ে যাবে। আর বিদ্যুতে পরিচালিত মেশিনগুলোতে বিদ্যুতের সরবরাহ নির্বিঘ্ন নাহলে বিড়ম্বনায় পড়বে কৃষক। বিদ্যুতের অভাবে সেচের পানি সরবরাহ বিঘ্ন ঘটলে উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। রংপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, বগুড়া, গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা বোরো ধানের চারা রোপণ করেছেন। তবে যে সব জমিতে আলু ও গম চাষ করা হয়েছে সেগুলো জমিতে এখনো ধানের চারা রোপণ করা সম্ভব হয়নি। বিদ্যুতের সরবরাহ নির্বিঘ্ন করা না গেলে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়বেন কৃষকরা। বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, বিদ্যুতের নির্বিঘ্ন সরবরাহ নিয়ে তারা আশঙ্কায় রয়েছেন। চৈত্র মাসে প্রখর রোদে ধানের চারা বড় হয় এবং জমিতে অধিক পানির প্রয়োজন হয়। ওই সময় ২৪ ঘণ্টা জমিতে পানি না থাকলে ফসল কমে যাবে। একাধিক কৃষক জানান, এখনোই মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ থাকে না। ফলে সেচ বন্ধ রাখতে হয়। সামনে ২৪ ঘণ্টা সেচ মেশিন চালানো না গেলে উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
এদিকে জ্বালানি সংকটে গত বছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ঘোষণা দিয়ে লোডশেডিং করে বিদ্যুৎ বিভাগ। দিনে ২ থেকে সর্বোচ্চ ১২ ঘণ্টা লোডশেডিং করা হয় কোনো কোনো এলাকায়। জ্বালানি সংকটে এবার শীতেও কমবেশি লোডশেডিং করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। মার্চ থেকে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। অপর দিকে অর্থ সঙ্কটে বেসরকারি কেন্দ্রগুলোর বিল ঠিকমতো পরিশোধ করতে পারছে না পিডিবি। বর্তমানে সাড়ে ৪ মাসের বিল ১৬ হাজার কোটি টাকা পাওনা রয়েছে বেসরকারি মালিকদের। তেল আমদানি ব্যাহত হলে বেসরকারি খাত থেকেও চাহিদা অনুসারে বিদ্যুৎ মিলবে না।
আসন্ন সঙ্কট মোকাবিলায় গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি শুরু হয়েছে। বাড়তি জ্বালানি তেল আমদানির পরিকল্পনাও চূড়ান্ত। গ্রীষ্মে সরকারের বড় ভরসা কয়লাভিত্তিক বৃহৎ তিন বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা, রামপাল এবং ভারতে আদানির গড্ডা। এসব কেন্দ্রে কয়লার সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখা যাবে কি-না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কয়লা আমদানি ব্যাহত হচ্ছে ডলার সঙ্কটে। অর্থের অভাবে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র মালিকদের বিল পরিশোধ করতে পারছে না বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এলসি জটিলতায় চাহিদা অনুসারে ফার্নেস অয়েল আমদানি করতে পারছেন না বেসরকারি উদ্যোক্তারা। পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকেও (বিপিসি) ভুগতে হচ্ছে এলসি জটিলতায়। ডলার সঙ্কটে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পেট্রোবাংলার এলএনজি আমদানি কার্যক্রমও। আমদানি ব্যয় মেটাতে ও বিল পরিশোধে আগামী মে পর্যন্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৬০০ কোটি ডলার প্রয়োজন হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সরকার এই ডলার জোগান দেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে।
এবার গরমে অন্তত তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি থাকতে পারে পিক আওয়ারে। ফলে লোডশেডিং পরিস্থিতি গতবারের চেয়ে বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা আছে ২৪ হাজার ১১৪ মেগাওয়াট। এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ উৎপাদন গত বছরের ১৭ এপ্রিল ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট। জ্বালানি সঙ্কটে সক্ষমতা অনুসারে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়নি কখনোই। বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও কেন্দ্র মালিকদের চুক্তি অনুসারে ঠিকই টাকা দিতে হয় সরকারকে। ক্যাপাসিটি চার্জ (কেন্দ্র ভাড়া) হিসেবে গত ১২ বছরে বেসরকারি মালিকদের এক লাখ কোটি টাকার ওপর অর্থ পরিশোধ করেছে সরকার। সামনে আরও নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হচ্ছে। ফলে এই খরচ আরও বাড়বে।
পিডিবির তথ্য থেকে জানা গেছে, গত সপ্তাহে ছিল বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১০ হাজার ৫৮৬ মেগাওয়াট। উৎপাদন ছিল সর্বোচ্চ ১০ হাজার ৫৮৬ মেগাওয়াট। পিডিবির মতে, দেশে কোনো লোডশেডিং ছিল না। তবে বিতরণ কোম্পানিগুলো বলছে, দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা এলাকায় এক থেকে দুই ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হয়েছে।
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, দলীয় লোকদের বিদ্যুৎ ব্যবসা দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়েছে সরকার। এখন বসিয়ে বসিয়ে মাসে হাজার হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি পেমেন্ট গুনছে। যা উসুল করা হচ্ছে বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে। বাড়তি দাম দিয়েও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ মিলছে না। এবার গরমে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
গত সপ্তাহে গ্যাস ও জ্বালানি তেল সঙ্কটে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হয় সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট। এদিন বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রায় ৮৯ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। আগামী এপ্রিল-মে মাসে পিডিবি গ্যাস থেকে ৬ হাজার ২৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায়। এ জন্য দিনে কমপক্ষে ১২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস দরকার।, বিদ্যুতে সর্বোচ্চ ১০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস দেওয়া সম্ভব হবে। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে দৈনিক প্রায় ২০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি থাকতে পারে বলে জানিয়েছে পেট্রোবাংলা।
আগামী জুন পর্যন্ত ১৬১ কোটি ডলারে ৩৬ কার্গো এলএনজি আনতে চায় পেট্রোবাংলা। অর্থ সঙ্কটে এলএনজি টার্মিনাল ও এলএনজি আমদানির বিল বকেয়া পড়েছে বলে জানা গেছে। বঙ্গোপসাগরে স্থাপিত এলএনজি টার্মিনাল দুটির পেছনে মাসে পেট্রোবাংলার খরচ দেড় লাখ ডলার। দেশে কর্মরত বহুজাতিক গ্যাস কোম্পানিগুলোর গ্যাস কেনা বাবদ মাসে পেট্রোবাংলাকে ৫ কোটি ডলার দিতে হয়। সব মিলিয়ে আগামী মে পর্যন্ত ১৯৪ কোটি ডলার লাগবে পেট্রোবাংলার। এই চাহিদা মেটাতে টাকা চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি।
সেচ ও গরম মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে সরকারের বড় ভরসার জায়গা রামপাল, পায়রা ও ভারতে আদানির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এর বাইরে মে-জুনে চট্টগ্রামে এস আলমের বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং বরগুনার বরিশাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ পাওয়ার আশা করছে সরকার। আদানি ছাড়াই কয়লা দিয়ে আগামী মে-জুনে ২ হাজার ৮৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। এর মধ্যে বড়পুকুরিয়া থেকে ৩২৫ মেগাওয়াট আসবে। আমদানি করা কয়লা থেকে হবে ২ হাজার ৫৪০ মেগাওয়াট। এর বাইরে আগামী ২৬ মার্চ থেকে আদানির কড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে দিনে ৭৫০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ পাওয়ার কথা।
বাগেরহাটের রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র কয়লা সঙ্কটে এক মাস বন্ধ থাকার পর গত বুধবার ফের উৎপাদনে যায়। এখান থেকে ৫০০-৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ মিলতে পারে। তবে বর্তমানে যে পরিমাণ কয়লা মজুত আছে এবং পাইপলাইনে রয়েছে, তা দিয়ে আগামী এপ্রিল পর্যন্ত কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। এর মধ্যে এলসি (ঋণপত্র খোলা) জটিলতা না কাটলে কয়লা আমদানি সম্ভব হবে না।
পায়রা থেকে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। বকেয়া পরিশোধ না করায় ১ জানুয়ারি থেকে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা আমদানি বন্ধ রয়েছে। মজুত কয়লা দিয়ে মার্চের ২০-২২ তারিখ পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি-বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএম খোরশেদুল আলম। তিনি জানান, গত ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত কয়লার বিল বাকি রয়েছে ৪৮ কোটি ডলার। কয়লা আমদানির ৬ মাস পর বিল পরিশোধের সুযোগ পায় বিসিপিসিএল। এর পরও সময়মতো বিল দেওয়া সম্ভব হয়নি ডলার সংকটে। পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা আমদানির জন্য ৭৫০ মিলিয়ন ডলার চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
গ্যাসের বাইরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বড় ভূমিকা রাখছে ফার্নেস অয়েলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো। এর বড় অংশই বেসরকারি খাতের। বেকায়দায় বেসরকারি খাতও। এপ্রিল-মে মাসে পিডিবি ফার্নেস অয়েল থেকে ৩ হাজার ৮৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে। এ জন্য মাসে ৫ লাখ ৪ হাজার ৮৫২ টন ফার্নেস অয়েল আমদানি করতে হবে। এই ফার্নেস অয়েল আমদানিতে মাসে লাগবে প্রায় ২৩ কোটি ডলার। ডলার সংকটে জ্বালানি তেল আমদানির এলসি খুলতে সমস্যায় পড়ছেন বেসরকারি উদ্যোক্তারা। পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, চাহিদা অনুসারে জ্বালানি পাওয়া যাবে। ফলে সেচ ও গরম মৌসুমে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়বে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন