ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় চলছে। এই ঘটনায় গঠিত পৃথক চার তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে কাজ শেষ করেছেন।
রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় রেজিস্ট্রার দপ্তরে সিলগালা করে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি। যার স্মারক নং-৫০০৯। ওইদিনই তদন্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে পাঠাই প্রশাসন।
এদিকে গত ২৩শে ফেব্রুয়ারি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। আগামী ৩ মার্চ পর্যন্ত তিনি ছুটিতে থাকবেন বলে জানা গেছে। ছুটিতে থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত কমিটির রিপোর্ট সিলগালা অবস্থায় পড়ে আছে। তিনি না ফেরা পর্যন্ত এই প্রতিবেদনটি সিলগালা অবস্থায় থাকবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. শাহাদাৎ হোসেন আজাদ তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন। তিনি গণমাধ্যমকে জানান, তদন্ত প্রতিবেদন গোপনীয়। ইতোমধ্যে একটা কপি হাইকোর্টে পাঠানো হয়েছে। ভিসি স্যার এখন ঢাকাতে আছেন। আগামী শনিবার (৪ মার্চ) তিনি ক্যাম্পাসে আসবেন। উনি ক্যাম্পাসে এসে লিগ্যাল এডভাইজারদের সঙ্গে বসে ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলেছেন।
এই বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়সারা কাজ এগুলো। ভিসির অনুপস্থিততে প্রো-ভিসি রুটিন দায়িত্বে আছেন। চাইলে তিনিও কাজটি করতে পারেন। কিন্তু তারা তাকিয়ে আছেন হাইকোর্টের দিকে। যেটা লজ্জাজনক।
গোপন সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিজেদের দায় এড়াতে হাইকোর্টের দিকে তাকিয়ে আছে। হাইকোর্ট আদেশ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিষয়টি নিয়ে একাধিক শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আইন আছে। সে মোতাবেক এই ঘটনার তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত ছিল। হল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত ব্যর্থ।
এদিকে সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত পাঁচজনের স্থায়ীভাবে আবাসিকতা বাতিল করেছে হল কর্তৃপক্ষ। হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, ঘটনার সত্যতা মিলেছে। ওই ঘটনায় অভিযুক্তদের সিট বাতিল করা হয়েছে। একইসঙ্গে স্থায়ীভাবে আবাসিকতা বাতিল করা হয়েছে। আগামী ১ মার্চের মধ্যে তাদের বেলা ১২টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন, শাখা ছাত্রলীগ সহসভাপতি ও পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স এ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মীম, চারুকলা বিভাগের হালিমা আক্তার ঊর্মি ও ফিন্যান্স বিভাগের মুয়াবিয়া জাহান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি রোববার তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। পরে নির্দেশনা মোতাবেক সেই প্রতিবেদন হাইকোর্টে পাঠানো হয়েছে। ভিসি মহোদয় ঢাকাতে অবস্থান করছেন। উনার সঙ্গে কথা হয়েছে। উনি ঢাকা থেকে ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গত ১১ ও ১২ই ফেব্রুয়ারি দুই দফায় হলের গণরুমে এক নবীন ছাত্রীকে রাতভর র্যাগিং, শারীরিকভাবে নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করার অভিযোগ উঠে ছাত্রলীগ নেত্রী অন্তরাসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী ফুলপরী খাতুন ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১৫ ফেব্রুয়ারি পৃথকভাবে তিনটি তদন্ত কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সংশ্লিষ্ট হল কর্তৃপক্ষ ও শাখা ছাত্রলীগ। এছাড়া হাইকোর্টের নির্দেশেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন