দেশে শব্দদূষণ রোধে ও মানুষের স্বাভাবিক শ্রবণ ক্ষমতা রক্ষায় ১৪টি সুপারিশ করেছে স্পিচ অ্যান্ড হিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। বিশ্ব শ্রবণ দিবস উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব সুপারিশ করায়।
সংগঠনটির সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত সুপারিশগুলো হলো হাইড্রলিক হর্ন বন্ধ করা; বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদ- অনুসারে আবাসিক এলাকার জন্য শব্দের গ্রহণযোগ্য সর্বোচ্চ মাত্রা ৫৫ ডেসিবেল, বাণিজ্যিক এলাকার জন্য ৭০ ডেসিবেল বাস্তবায়ন করা; উচ্চ শব্দে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ক্ষেত্রে ইয়ার প্লাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা; পেশাগত কারণে কাউকে উচ্চ শব্দে থাকতে হলেও তা যেন দৈনিক ছয় থেকে সাত ঘণ্টার বেশি না হয়; সকল পাঠ্যসূচিতে শব্দদূষণ রোধের সচেতনতা আওতাভুক্ত করা; পাবলিক প্লেসে মাইক কিংবা স্পিকার ব্যবহারে শব্দের মাত্রা ৫৩ ডেসিবেলের মধ্যে রাখার জন্য আইন প্রণয়ন করা; শব্দদূষণ রোধে ট্রাফিক পুলিশকে ক্ষমতা দেওয়া; আবাসিক এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণা করে তা বাস্তাবায়নে পুলিশকে ক্ষমতা দেওয়া।
এছাড়াও আবাসিক এলাকায় কনস্ট্রাকশান কাজের শব্দদূষণ বন্ধে আইন পাস করা; স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, উপাসনালয়ের আশেপাশে শব্দদূষণ রোধ বাস্তবায়ন করা; শিল্প কারখানায় তীব্র শব্দ উৎপাদনকারী যন্ত্রপাতির প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ঘটিয়ে শব্দদূষণ উৎসস্থলেই নিয়ন্ত্রণ বাস্তবায়ন করা; বিভিন্ন উৎসবে আতশবাজির ব্যবহার নিষিদ্ধ করে আইন করা এবং আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা; দেশের বিভিন্ন প্রান্তিকে অবস্থানকারী বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে শব্দ সচেতনামূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা; সরকারিভাবে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমগুলোতে শব্দদূষণের কারণ ও ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে গণ-বিজ্ঞপ্তি দেওয়া; দেশের প্রতিটি উপজেলায় প্রত্যেক মানুষের শ্রবণ শক্তি পরীক্ষা করে সঠিক চিকিৎসা দেওয়া।
সংবাদ সম্মেলনে শব্দদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন স্পিচ অ্যান্ড হিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মীর মোশারফ হোসেন। তিনি বলেন, বায়ুম-লীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) জরিপ অনুসারে, রাজধানী ঢাকার ১০টি স্থানের নীরব এলাকায় ৯৬ দশমিক ৭ শতাংশ সময় শব্দের আদর্শ মান (৫০ ডেসিবেল) অতিক্রম করেছে। আবাসিক এলাকায় ৯১ দশমিক ২ শতাংশ সময় আদর্শ মান (৫৫ ডেসিবেল) অতিক্রম করেছে। মিশ্র এলাকায় আদর্শ মান (৬০ ডেসিবল) অতিক্রম করেছে ৮৩ দশমিক ২ শতাংশ সময়। বাণিজ্যিক এলাকায় আদর্শ মান (৭০ ডেসিবেল) অতিক্রম করেছে ৬১ শতাংশ সময় এবং শিল্প এলাকায় ১৮ দশমিক ২ শতাংশ সময় আদর্শ মান (৭৫ ডেসিবেল) অতিক্রম করেছে। এছাড়া সমগ্র ঢাকার ১০টি স্থানে ৮২ শতাংশ সময় ৬০ ডেসিবলের উপর শব্দের মাত্রা পাওয়া গেছে। ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত ঢাকা শহরের ১০টি স্থানের শব্দের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া যায় বলে জানান মীর মোশারফ হোসেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের জরিপ তুলে ধরে স্পিচ অ্যান্ড হিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, উচ্চ শব্দ জনসাধারণের মানসিক ও শারীরিক অসুস্থতার অন্যতম কারণ। এটি উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ হৃদস্পন্দন, মাথা ব্যাথা, বদহজম ও পেপটিক আলসার সৃষ্টির কারণ। এমনকি শব্দদূষণ ঘুমেরও ব্যাঘাত ঘটায়। যেকোনো ব্যক্তি আধা ঘণ্টা বা এর অধিক সময় ধরে ১০০ ডেসিবেল বা তার অধিক শব্দদূষণের মধ্যে থাকলে তার বধির হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নাক কান গলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. জাকারিয়া সরকার, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক, কান, গলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মনি লাল আইচ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. জহুরুল হক বক্তৃতা করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন