প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার বিরোধী দলের নেতা বা বৃহত্তম বিরোধী দলের নেতা এবং ভারতের প্রধান বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত কমিটির পরামর্শেই নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ করা হবে। এমনই আদেশ দিল সুপ্রিম কোর্টের এক সাংবিধানিক বেঞ্চ। একইভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনারও নিযুক্ত হবেন।
বিচারপতি কে এম জোসেফ বলেন, সংসদে এ বিষয়ে ভিন্ন আইন প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত এ প্রথাই বলবৎ থাকবে। বিচারপতি কে এম জোসেফ, অজয়রাস্তোগী, অনিরুদ্ধ বোস, হৃষিকেশ রায় এবং সিটি রবিকুমারের সমন্বয়ে গঠিত সাংবিধানিক বেঞ্চ এ সিদ্ধান্ত নেন। ভারতের নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের নিয়োগের প্রক্রিয়ায় সংস্কারের সুপারিশ করে এক পিটিশন জমা পড়েছিল। তার পর্যালোচনার পরেই এ রায়। বেঞ্চ জানিয়েছে, ‘আদালত আগামী দিনের নির্বাচন প্রক্রিয়া আরো উন্নত করতে চায়। সেটা করতে সাহায্য করবে, এমন যেকোনও নীতির বিষয়ে অবশ্যই বিবেচনা করা উচিত’।
বেঞ্চ জানিয়েছে, অনেক রাজনৈতিক দলই ক্ষমতায় এসেছে। তবে তাদের কেউই নির্বাচন কমিশনের নিয়োগের জন্য আইন/প্রক্রিয়া তৈরি করেনি। সংবিধানের ৩২৪ নম্বর অনুচ্ছেদের অধীনে এ বিষয়ে আইন প্রণয়ন করা ‘অনিবার্য প্রয়োজনীয়তা’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বেঞ্চ আরো জোর দিয়ে জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ও আইনানুগ কাজ করতে এবং সংবিধানের নীতি এবং আদালতের নির্দেশ মেনে চলতে বাধ্য। বেঞ্চ বলে, ‘গণতন্ত্র জনগণের ক্ষমতার সঙ্গে ওৎপ্রতভাবে জড়িত... গণতন্ত্র সাধারণ মানুষের হাতে শান্তিপূর্ণ বিপ্লবকে সহজতর করে তুলবে। তবে তার জন্য নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হতে হবে। কোনো দুর্বল নির্বাচন কমিশন প্রতারণামূলক পরিস্থিতিতে পড়বে এবং তার আসল দায়িত্ব থেকে বিরত থাকবে’।
এ নিয়ম অনুসারে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী নেতা ও সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি নাম ঠিক করবেন নির্বাচন কমিশনারের। এ পদ্ধতিতেই বর্তমান সিবিআই, সিভিসিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য বাছাই করা হয়। সেই পথই অনুসরণ করবে নির্বাচন কমিশন যতদিন না সংসদে আইন পাশ হয়।
বেঞ্চ জানায়, ক্ষমতা দখলই অনেক সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু গণতন্ত্রে সরকারের কার্যক্রম ন্যায়পরায়ণ হওয়া উচিৎ।
এদিকে নির্বাচন কমিশনার ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইটে তিনি বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের যুগান্তকারী রায়ে গণতন্ত্রের জয় হল। তৃণমূল নেত্রীর মতে, অত্যাচারী শক্তির অপচেষ্টার বিরুদ্ধে জনগণের ইচ্ছাই বিরাজ করছে!
ভারতের শীর্ষ আদালত বলেছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং নির্বাচন কমিশনারদের (ইসি) নিয়োগে আর কেন্দ্রীয় সরকার শেষ কথা বলবে না। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা এবং ভারতের প্রধান বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত কমিটি এ পদের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিদের বেছে নেবে। কমিটির সুপারিশ মেনে নিয়োগের নির্দেশ জারি করবেন প্রেসিডেন্ট।
সাংবিধানিক বেঞ্চ বলেছে, যদি লোকসভায় বিরোধী দলনেতার পদ শূন্য থাকে তাহলে একক বৃহত্তম বিরোধী দলের নেতা ইসি এবং সিইসি নিয়োগের কমিটিতে থাকবেন। বর্তমানে লোকসভায় প্রধান বিরোধী দলের স্বীকৃতি নেই কোনো দলের। বিরোধী দলগুলোর মধ্যে শীর্ষে আছে কংগ্রেস। সুপ্রিম কোর্টের রায় নরেন্দ্র মোদির সরকার কার্যকর করলে লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী হবেন সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্য।
অনেকেই মনে করছেন, সুপ্রিম কোর্টের বৃহস্পতিবারের রায় এক মোড় ঘোরানো পদক্ষেপ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়াতেও সেই ভাবনাই প্রকাশ পেয়েছে। দেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় সংস্কার চেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দীর্ঘ আন্দোলনের কথা গোটা দেশ জানে। ভুয়া ভোটার আটকাতে সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্রের দাবিতে দীর্ঘ দিন লড়াই করেছেন আদালতে এবং জনতার দরবারে। ১৯৯৩-এর ২১ জুলাই তৎকালীন যুব কংগ্রেসনেত্রী মমতার মহাকরণ অভিযানের প্রধান দাবি ছিল সচিত্র পরিচয় পত্র। সেই অভিযানে পুলিশে গুলিতে ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মী নিহত হন। সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস, দ্য ওয়াল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন