শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ইউক্রেনে যুদ্ধের মধ্যে প্রথমবারের মতো বৈঠকে ব্লিঙ্কেন-ল্যাভরভ

জি-২০তে বিভক্তি বেড়েছে

ইনকিলাব ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ৩ মার্চ, ২০২৩, ১২:০০ এএম

গতকাল দিল্লিতে মিলিত হয়েছেন জি-২০ ভূক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। সেখানে এমনকি ভারতের প্রধানমন্ত্রী তাদের বিভাজনগুলোকে দূরে রাখতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের প্রতি আহ্বান জানানোর পরেও ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ নিয়ে উত্তেজনা আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, বৈঠকটি রাশিয়ার ‘উস্কানিবিহীন এবং অন্যায় যুদ্ধ’ দ্বারা বিঘিœত হয়েছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ইউক্রেনের কিছু শস্য রপ্তানির অনুমতি দেয়ার জন্য করা চুক্তি ‘বাতিলের’ জন্য পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। এর আগে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সাহায্যের আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন যে, তাদের প্রতি জি ২০ দেশগুলোর দায়িত্ব রয়েছে।

এটি ছিল মোদির ইংরেজিতে একটি বিরল ভাষণ - তিনি তার বার্তাটি কতটা গুরুত্ব সহকারে নিতে চেয়েছিলেন তার একটি প্রমাণ। তিনি ইউক্রেনের যুদ্ধের সরাসরি কোন উল্লেখ করেননি কিন্তু স্বীকার করেছেন যে, আলোচনা ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা দ্বারা প্রভাবিত হবে। জি ২০-এর জন্য ভারতের সেøাগান হল ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যত’। মোদি প্রতিনিধিদের এটিকে উপলব্ধ করার এবং তাদের একত্রিত করে এমন বিষয়গুলোতে ফোকাস করার আহ্বান জানান।

গতকালকের আলোচনাসূচীতে খাদ্য নিরাপত্তা, উন্নয়ন সহযোগিতা, সন্ত্রাসবাদ এবং মানবিক সহায়তা সংক্রান্ত ষিয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে - এটি জি ২০ সভাপতি থাকাকালীন ভারতের অগ্রাধিকারের প্রতিফলন। তবে ইভেন্টটিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ এবং আমেরিকা ও চীনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘাতের (তিনটি বড় শক্তির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন) নিয়ে বিভক্তি দেখা গিয়েছে। গত সপ্তাহে ব্যাঙ্গালোরে এ জি-টোয়েন্টিভুক্ত দেশগুলোর অর্থমন্ত্রীদের মধ্যেকার বৈঠক শেষ হয়েছে, কিন্তু সেখানেও ইউক্রেন সঙ্কট নিয়ে মতবিরোধের জেরে কোনও যৌথ ঘোষণাপত্র জারি করা যায়নি।

ব্যাঙ্গালোরের খসড়া ঘোষণাপত্রে ইউক্রেন সংঘাতের কথা উল্লেখ করা হলে চীন ও রাশিয়া একযোগে তার তীব্র প্রতিবাদ জানায়। সদস্য দেশগুলো শেষ পর্যন্ত এই প্রশ্নে একমত হতে না-পারায় কোনও ঘোষণাপত্রও আসেনি। ব্যাঙ্গালোর বৈঠকের পর ভারতের তরফ থেকে যে ‘চেয়ারম্যানস সামারি’ (সারাংশ) জারি করা হয় তাতে শুধু জানানো হয়েছিল বেশির ভাগ সদস্য দেশ ইউক্রেন যুদ্ধের তীব্র নিন্দা জানালেও যে প্যারাগ্রাফগুলোতে ইউক্রেনের উল্লেখ ছিল তাতে রাশিয়া ও চীন স্বাক্ষর করেনি।

পরে পশ্চিমা নেতারা গঠনমূলক আলোচনার অভাবে হতাশা প্রকাশ করেন; রাশিয়া পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে এ ফোরামকে ব্যবহার করে রাশিয়া বিরোধী ‘প্রচারণা’ চালানোর অভিযোগ করেছে। চীনের সাথে ভারতের দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধ অতিরিক্ত সংঘর্ষের কারণ হতে পারে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্কর একটি কঠিন পরিস্থিতিতে সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন।

এদিকে, ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানের পর প্রথমবারের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার শীর্ষ কূটনীতিকরা মুখোমুখি কথা বলেছেন। তারা গতকাল দিল্লিতি জি ২০ সম্মেলনের ফাঁকে একটি সংক্ষিপ্ত বৈঠকে মিলিত হন। মার্কিন সেক্রেটারি অফ স্টেট এন্টনি ব্লিঙ্কেন এবং রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ভি ল্যাভরভের মধ্যে বৈঠকটি অপ্রত্যাশিত ছিল। রাশিয়ার যুদ্ধ এখন তার দ্বিতীয় বছরে, অনেক দেশ এর অর্থনৈতিক প্রভাব, বিশেষত খাদ্য এবং জ্বালানির দাম সম্পর্কে আরও উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছে।

ব্লিঙ্কেন ল্যাভরভের কাছে তিনটি পয়েন্ট তুলে ধরেছেন বলে স্টেট ডিপার্টমেন্টের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেছেন। সেগুলো হচ্ছে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে তার প্রতিরক্ষায় ‘যতদিন সময় লাগবে’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন অব্যাহত রাখবে; রাশিয়ার ‘নিউ স্টার্ট’ পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তিতে পুনরায় যোগদান করা উচিত যা থেকে তারা সম্প্রতি বেরিয়ে এসেছে এবং রাশিয়ার উচিত বন্দী মার্কিন নাগরিক পল হুইলানকে মুক্তি দেয়া।

ব্লিঙ্কেন নিজেই ল্যাভরভের সাথে সাক্ষাতের অনুরোধ করেছিলেন, রাশিয়ান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে। যা পরামর্শ দেয় যে, বাইডেন প্রশাসন ইউক্রেনের যুদ্ধের বিরোধী পক্ষ থাকা সত্ত্বেও রাশিয়ার সাথে যোগাযোগের লাইন খোলা রাখতে চায়। এর আগে বৃহস্পতিবার জি ২০ বৈঠকে ব্লিঙ্কেন কিয়েভের জন্য বৃহত্তর সমর্থন জোগাড় করতে চেয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার বিনা উসকানি ও অযৌক্তিক যুদ্ধের কারণে এই বৈঠক আবারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’ ল্যাভরভ বলেছেন যে, জি-২০ বৈঠক, যা বৃহস্পতিবার শেষ হবে, যুদ্ধ নিয়ে মতবিরোধের কারণে যৌথ বিবৃতি দেবে না। তিনি পশ্চিমা দেশগুলোকে অভিযুক্ত করেছেন সংঘাতে উসকানি দেয়ার জন্য এবং ইউক্রেনকে অস্ত্র দিয়ে তাতে তারা ইন্ধন জোগাচ্ছে। সূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস, দ্য ইকোনমিস্ট, বিবিসি নিউজ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন