শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হুমকির মুখে

দ্য ইকোনোমিস্ট | প্রকাশের সময় : ৪ মার্চ, ২০২৩, ১২:০১ এএম

১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি করেছে। ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধির একটি নতুন ধাপ শুরু করতে চেয়েছিলেন, যার সূত্র ধরে গত বছর বাংলাদেশের প্রধান নদী পথের ওপর দিয়ে একটি বিশাল পদ্মা সেতু উন্মুক্ত করা হয়েছে, যা দেশের অর্থনৈতিক ভূগোলকে বদলে দিয়েছে। ঢাকায়, জাপানের সহায়তায় একটি নতুন বিমানবন্দর টার্মিনালসহ একটি মেট্রোরেল চলছে। দেশের সর্বত্র বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এত দৃশ্যমান অগ্রগতি সত্ত্বেও বিদেশী কূটনীতিকরা, স্বতন্ত্র বিশ্লেষক এবং এমনকি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চিন্তাশীল সদস্যরাও ব্যক্তিগতভাবে, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন খাতের পরিস্থিতি সম্পর্কে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শাসক দলের দখলদারিত্ব ও অবক্ষয়ের জাল ছড়িয়ে পড়েছে। এসব দুর্বলতা এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ উন্নয়নশীল বিশ্বের ওপর প্রভাব ফেলায় বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে জ্বালানি ও খাদ্যের মূল্যস্ফীতি এবং মূলধন হ্রাসসহ বিভিন্ন সমস্যা উন্মোচন করেছে। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতি ৩ হাজার কোটি ডলারের নিচে নেমে এসেছে। গত বছর সরকার সতর্ক পদক্ষেপ হিসেবে আইএমএফ-এর শরণাপন্ন হয়েছিল। সংস্থাটি জানুয়ারিতে ৪শ’ ৭০ কোটি ডলার ঋণ সম্মত হয়েছে। তবু টাকার মান পড়তির দিকে রয়েছে এবং সরকার যেহেতু চাহিদার তদন্ত এবং অনুমোদনগুলোকে দ্বিগুণ কঠিন করে আমদানিতে লাগাম দিচ্ছে, রফতানিকারকদের জন্য তাদের প্রয়োজনীয় বিদেশি কাঁচামালের আমদানি কঠিনতর হয়ে যাচ্ছে। তারা ঋণ এবং নগদ টাকা পেতে সংগ্রাম করছে, এগুলো ছাড়া তারা ব্যবসা করতে পারছে না।

বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশের তকমা খুলে ফেলা মানে এটি পশ্চিমা বাজারে কিছু শুল্ক ছাড় হারাবে। কম্বোডিয়া এবং ইথিওপিয়ার মতো কম খরচে উৎপাদকরা বাংলাদেশের রফতানি বাজার দখলের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের অন্যান্য রফতানি শিল্প উন্নয়নের জন্য সংগ্রাম করছে। বাংলাদেশ কোনো বড় আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তির সদস্যও নয়। এটি চীনের বাইরে যেয়ে অন্য ধরনের উৎপাদন শিল্প খুব কম আকৃষ্ট করতে পেরেছে। যদিও কিছু দেশীয় খাত, যেমন ওষুধ শিল্প এবং ইলেকট্রনিক্সের সম্ভাবনা রয়েছে, কিন্তু ভয়ঙ্কর আমলাতন্ত্র এবং অসম শুল্কনীতি সেগুলোর বিকাশে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্য ইকোনমিস্টের অঙ্গ সংস্থা ইআইউ এশিয়ার ১৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক পরিবেশকে ১৫তম স্থান দিয়েছে। এটি দেশের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কথা বলছে।

বাংলাদেশের ভয়ঙ্কর শাসনব্যবস্থা দেশের আনাচে-কানাচের, এমনকি বিদেশকেও স্পর্শ করেছে। দেশের ধনী ও দুর্নীতিবাজরা একে মানি লন্ডারিংয়ের বিশ্বসেরা করে তুলেছে। কানাডার টরন্টো এবং অন্যান্য পশ্চিমা শহরগুলোর উচ্চতর রাজ্যগুলোতে বসবাসরত বাংলাদেশিদের ওপর একটি অপবাদ রয়েছে যে, সেখানে বাংলাদেশের ধনীরা টাকা পাচার করে বেগমপাড়া বানিয়েছে। যদি উপসাগরীয় এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দরিদ্র প্রবাসী বাংলাদেশিদের একটি শক্তিশালী বাহিনী পরিশ্রম করে দেশে অর্থ প্রেরণ না করত, তাহলে দেশের অর্থপ্রদানের ভারসাম্য আরো খারাপ হয়ে যেত। বাংলাদেশে এখন ব্যবসা এবং রাজনীতি মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। দেশের অনাদায়ী ঋণ বেড়েছে, ব্যাংকগুলোকে ধন্যবাদ যে, তারা রাজনৈতিকভাবে জড়িতদের ঋণ দেয়, যারা পরিশোধ করে না।

রাজনীতিবিদ ও আমলাদের দ্বারা পরিচালিত একটি শক্তিশালী লাইসেন্স রাজত্ব এবং নিরাপত্তা পরিষেবা ট্রাফিক জরিমানা বন্ধ, সরকারি চুক্তি জেতা, কোস্টগার্ডে যোগদান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের আবেদন থেকে শুরু করে যেকোনো কিছু সম্পন্ন করার জন্য ঘুষ নেয় এবং অন্যান্য চাঁদাবাজি করে। প্রবাসী শ্রমিকরা অবদানের মূল্যায়ন করা তো অনেক দূর, বিমান বন্দরে নিয়মিতভাবে তাদের হেনস্থা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন যে, তিনি দুর্নীতি দমন করছেন। অথচ, তার মরহুম পিতা বাংলাদেশের স্বাধীনতার নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ঘিরে এবং নিজের চারপাশে একটি ব্যক্তিভিত্তিক সংস্কৃতি গড়ে তুলেছেন। ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে তার পৃষ্ঠপোষকতার ব্যবস্থা এবং আনুগত্যের শর্ত স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।

পুলিশ এবং আদালত আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগীদের সেবায় ব্যস্ত। গণমাধ্যমের বাক-স্বাধীনতা নেই। ভিন্নমতাবলম্বীরা অন্তরীণ; কয়েকজনকে হত্যা করা হয়েছে। এমনকি বরেণ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আওয়ামী লীগ তার উদ্ধ্যত, কখনও কখনও হিংস্র ছাত্র সংগঠনের মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। এর আগে, শেখ মুজিব বাংলাদেশকে একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করেছিলেন। ১৯৭৫ সালে তাকে এবং তার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছিল। তার কন্যা তার সব স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন এবং এটা এখন আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষাপট। শেখ হাসিনা অনেক আগেই নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রথা বিলোপ করেছেন। এভাবে, আওয়ামী লীগ আরো সহজে নির্বাচনী ফলাফল নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।

বাংলাদেশের বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দি করে রাখায় এবং তার দল বিএনপিকে তাড়িয়ে বেড়ানোর ঘটনায় জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল ইতোমধ্যেই জানা হয়ে গেছে। তবু বিএনপি এখন কম শক্তিশালী নয়। তারা সম্প্রতি ঢাকায় গণবিক্ষোভ শুরু করার জন্য যথেষ্টভাবে পুনর্গঠিত হয়েছে। এতে রাজনৈতিক বিভাজন আরো গভীর হয়েছে এবং জনগণের প্রতি সহিংসতার ঝুঁকি বাড়িয়েছে। এটি বেশ কয়েকটি উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মধ্যে মাত্র একটি। শেখ হাসিনার বয়স ৭৫ এবং তিনি উত্তরসূরি হিসেবে কাউকে অভিষিক্ত করেননি। তার পরিবারের অল্পবয়সী সদস্যদের দায়িত্ব নেয়ার অভিজ্ঞতা নেই বা ইচ্ছার অভাব রয়েছে। যেকোনো সময় প্রধানমন্ত্রী শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়লে দেশ বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়তে পারে। জনগণ একটি উন্নত ও আরো প্রতিনিধিত্বশীল বাংলাদেশের জন্য তাদের প্রত্যাশার কথা বলে, যা তাদের সুযোগগুলো কেড়ে নেয় না দেয় না বরং দেয়। এ মুহূর্তে, সেই ভবিষ্যতের পথে প্রধান বাধা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে নষ্ট হওয়া সম্ভবনাগুলো।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
আমু ৩ মার্চ, ২০২৩, ২:১০ এএম says : 0
অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার জন্য রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধান হতে হবে। নয়তো এর সমাধান মনে হয় হবে না।
Total Reply(0)
আলিফ ৩ মার্চ, ২০২৩, ২:০৭ এএম says : 0
অর্থনৈতিক সঙ্কটের মূল বাধা রাজনৈতিক সঙ্কট। রাজনৈতিক সঙ্কট দূর হলে অর্থনৈতিক সঙ্কট ভালো হতো
Total Reply(0)
আসলাম ৩ মার্চ, ২০২৩, ২:০৫ এএম says : 0
যেভাবে সবকিছুর দাম বাড়ছে এই অবস্থা হলে তো অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়বেই
Total Reply(0)
আরিফ ৩ মার্চ, ২০২৩, ২:১৭ এএম says : 0
সরকার দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকায় তাদের দলের লোকেরা যেভাবে চাদাবাজি ও হিংস্র হয়েছে এর ফলে তারা দেশে তারা একনায়কতন্ত্রভাবে দেশ চালাচ্ছে। অন্যদের সিদ্ধান্ত তারা আগ্রাহ্য করছে। যার কারণে দুর্নীতি ও লুটপাট বেড়ে যাওয়াতে অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়েছে
Total Reply(0)
IogZXMV ৩ মার্চ, ২০২৩, ২:১২ এএম says : 0
Drugs information leaflet. Drug Class. valtrex cheap Actual what you want to know about meds. Read information now.
Total Reply(0)
কামাল উদ্দিন ৩ মার্চ, ২০২৩, ৯:০৪ এএম says : 0
১৪/১৫ বছর অনৈতিকভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে এই সোনার দেশটাকে যারা সর্বনাশ করেছে জাতি তাদেরকে কখনো ক্ষমা করবেনা। যদি গত ১৫ বছর দেশপ্রেমিক কলুষমুক্ত বৈধ জবাবদিহি মূলক সরকার দেশ পরিচালনা করতো তাহলে এদেশ অন্তত মালয়েশিয়ার অবস্থানে থাকতো।এঅবস্থআ থেকে উদ্ধারের একটিই পথ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সঠিকভাবে নির্বাচন।
Total Reply(0)
কামাল উদ্দিন ৩ মার্চ, ২০২৩, ৯:০৫ এএম says : 0
১৪/১৫ বছর অনৈতিকভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে এই সোনার দেশটাকে যারা সর্বনাশ করেছে জাতি তাদেরকে কখনো ক্ষমা করবেনা। যদি গত ১৫ বছর দেশপ্রেমিক কলুষমুক্ত বৈধ জবাবদিহি মূলক সরকার দেশ পরিচালনা করতো তাহলে এদেশ অন্তত মালয়েশিয়ার অবস্থানে থাকতো।এঅবস্থআ থেকে উদ্ধারের একটিই পথ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সঠিকভাবে নির্বাচন।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন