আজ ৪ মার্চ। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ঘোষিত ইশতেহারের ভিত্তিতে একাত্তরের এদিনে স্বাধীনতার দাবিতে সারাদেশে গণজোয়ার তৈরি হয়। দেশব্যাপী লাগাতার হরতালের ছিল তৃতীয় দিন। তবে এই দিন হরতাল ছিল আট ঘণ্টার। দ্রোহ-ক্ষোভে বঞ্চিত শোষিত বাঙালি তখন ক্রমেই ফুঁসে উঠছিল ঔপনিবেশিক পাকিস্তানী শাসক-শোষকদের বিরুদ্ধে।
সর্বত্র চলতে থাকে যুদ্ধের প্রস্তুতি। হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট, সচিবালয়, স্টেট ব্যাংক, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের সব অফিস, ব্যাংক, শিল্পকারখানাসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বন্ধ হয়ে যায়। গোটা দেশে অসহযোগ আন্দোলনের পাশাপাশি পালন হয় সর্বাত্মক হরতাল। সামরিক জান্তার সান্ধ্য আইন ভঙ্গ করে রাস্তায় নেমে আসে সাধারণ মানুষ। এক্ষেত্রে বসে থাকেনি কুখ্যাত পাকিস্তানী বাহিনীও। কার্ফু দিয়েও সামরিক জান্তারা সাহসী বীর বাঙালিদের ঘরে আটকে রাখতে না পেরে গোপনে আটতে থাকে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে বাঙালী নিধনের পরিকল্পনা। এই দিন খুলনায় বাঙালি অবাঙালিদের মাঝে সংঘর্ষ হয়। হরতাল চলাকালে খুলনায় সেনাবাহিনীর গুলিতে ৬ জন শহীদ হন। চট্টগ্রামে দু’দিনে প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়ায় ১২১ জনে।
ঢাকায় আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় হরতালে দমন পীড়নের নিন্দা জানানো হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ঘোষিত কর্মসূচির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেন, দেশের বরেণ্য লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীরা।
আন্দোলনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা দফায় দফায় বৈঠকে বসেন ৭ মার্চের জনসভা সফল করার জন্য। তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) চলতে থাকে জনসভার প্রস্তুতি। পাশাপাশি ঢাকাসহ সারাদেশেই গঠন হতে থাকে সংগ্রাম কমিটি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের যুব ও ছাত্র নেতারা গোপনে নানা স্থান থেকে অস্ত্র সংগ্রহ অভিযান চালাতে থাকেন বেশ জোরেশোরেই।
একাত্তরের উত্তাল, ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ এই দিনটিতে সারাদেশের সকল পাড়া, গ্রাম, মহল্লায় সংগ্রাম কমিটির পাশাপাশি শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি এবং স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠনের আহŸান জানানো হয়। এর উদ্যোক্তা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ইকবাল হলের (বর্তমান সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ক্যান্টিনে স্থাপন করা হয় ছাত্রদের যোগাযোগ কেন্দ্র।
এই দিনে ঘটে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই দিনে রেডিও পাকিস্তান ঢাকা’র নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘ঢাকা বেতার কেন্দ্র’। সে দিনের সেই ঘটনা চলমান আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করে। যা আমাদের মুক্তির পথকে এগিয়ে নেয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন