শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

রমজানের নাজাত লাভে শাবান মাসেই প্রস্তুতি : জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ মার্চ, ২০২৩, ১২:০১ এএম

আসন্ন মাহে রমজানের রহমত, বরকত ও নাজাত লাভের জন্য শাবান মাসেই প্রস্তুতি নিতে হবে। বিশ্বব্যাপী বালা-মুসিবত বিরাজমান। এ থেকে পরিত্রাণের সুবর্ণ সুযোগ আসন্ন লাইলাতুল বরাত ও পবিত্র মাহে রমাদান। গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি মো. রুহুল আমিন গতকাল জুমার বয়ানে বলেন, রাসূল (সা.) কে আল্লাহ সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়েছেন। আল্লাহর নিদের্শ আমার রাসূল যা বলে তা গ্রহণ করো। পরকালে যদি কল্যাণ চাও তাহলে রাসূল (সা.) কে পরিপূর্ণ অনুসরণ করতে হবে। খতিব বলেন, রমজানের দু’মাস আগ থেকেই রমজান পর্যন্ত হায়াত পাওয়ার জন্য রাসূল (সা.) দোয়া করতেন। খতিব বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমরা আমাকে যেভাবে নামাজ পড়তে দেখো সেভাবেই নামাজ আদায় করো। মানুষ আল্লাহর গোলাম জিবরাইল (আ.) রাসূলকে অযু ও নামাজ শিক্ষা দিয়েছেন। নামাজে বাড়ানো-কমানোর কোনো অধিকার কাউকে দেয়া হয়নি। খতিব বলেন, মানুষকে সত্যের পথ দেখাবার জন্য আল্লাহ ২৩ বছরে পবিত্র কোরআন নাজিল করেছেন। এরপর আর কোনো নবী রাসূল দুনিয়াতে আসবে না। কোরআন-হাদিসের ব্যাখ্যা সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। দ্বীনের ভেতরে কোনো সংযোজন করা যাবে না। খতিব বলেন, ফজিলতময় লাইলাতুল বরাত আসছে। মাহে রমজানের সকল প্রস্তুতি এখন থেকেই নিতে হবে। তিনি বলেন, জামাতের সাথে নামাজ পড়তে হবে। একাকী নামাজ পড়া ইসলাম সমর্থন করে না।

মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমের খতিব মাওলানা কবি রূহুল আমীন খান গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন শাবানের মধ্য দিবস আসবে, তখন তোমরা রাতে নফল ইবাদত করবে ও দিনে রোজা পালন করবে। (ইবনে মাজাহ)। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ১৪ শাবান দিবাগত রাত যখন আসে, তখন তোমরা এ রাত ইবাদতবন্দেগীতে কাটাও এবং দিনের বেলায় রোজা রাখো। কেননা, এদিন সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং আহŸান করেন, ‘কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছো কি? আমি ক্ষমা করব; কোনো রিজিক প্রার্থী আছ কি? আমি রিজিক দেব; আছ কি কোনো বিপদগ্রস্ত? আমি উদ্ধার করব’। এভাবে ভোর পর্যন্ত আল্লাহ মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে আহŸান করতে থাকেন। (ইবনে মাজাহ: ১৩৮৪)। এখন থেকেই পবিত্র রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।

খতিব বলেন, ফসল ঘরে তোলার জন্য যেমনিভাবে পূর্ব প্রস্তুতির প্রয়োজন হয় অন্যথায় ফসল আশা করা বোকামি, ঠিক তেমনি রমজানের রহমত, বরকত ও নাজাত লাভের জন্য রজব ও শাবান মাসে প্রস্তুতি নিতে হয়। তাই এখন থেকেই পবিত্র রমজানের ফজিলত প্রাপ্তির জন্য আমাদের ফরজ, সুন্নত ও ওয়াজিবের পাশাপাশি বেশি বেশি নফল ইবাদাত-বন্দেগীতে সময় অতিবাহিত করতে হবে। সকল মন্দ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। পরিবারের সদস্যদের আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের প্রদর্শিত পথে পরিচালনা করতে হবে। পরিবার থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সকল স্তরে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের মাধ্যমে রাব্বুল আলামিনের রহমতের সুশীতল ছায়ায় স্থান করে নিতে হবে। রাসূল (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি মাহে রমাদান পেলো অথচ নিজেকে গুনাহমুক্ত, নিষ্পাপ জান্নাতী হিসেবে গড়ে তুলতে পারল না তার থেকে দূর্ভাগা আর কে হতে পারে।

তাই আসুন আসন্ন লাইলাতুল বরাতকে ইবাদাত-বন্দেগী দ্বারা সুসজ্জিত করি। সেই সাথে পবিত্র মাহে রমাদানে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদেয় সকল পুরস্কারসমূহ প্রাপ্তির মাধ্যমে উৎকৃষ্ট জান্নাতী মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি এবং পরিবার, সমজ, রাষ্ট্রকে আল্লাহর রহমত দ্বারা ভরপুর করে তুলি। মনে রাখবেন আপনার আমার সকল জ্ঞান, চতুরতা, বুদ্ধি, হিসেব, শক্তি, ক্ষমতা কখনই কাজে আসবে না যদি আল্লাহ রহমতের দৃষ্টি না দেন।
মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, শাবান মাস মুমিনের কাক্সিক্ষত রমজান মাসের পূর্ববর্তী মাস এটি। ধর্মীয় বিবেচনায় এই মাসটি অনেক ফজিলতপূর্ণ। হাদিস শরীফে এ মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বা শাবানের মধ্য রজনী বলা হয়েছে। আমরা যাকে ‘শবে বরাত’ বলি। এটি ফারসি শব্দ। শব মানে রাত, বারাআত মানে মুক্তি। শবে বরাত অর্থ মুক্তির রাত। বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত বহু হাদিসে এ রাতের ফজিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে। হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অর্ধ শাবানের রাতে আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টির প্রতি রহমতের বিশেষ দৃষ্টি দেন। অতঃপর শিরককারী ও বিদ্বেষপোষণকারী ছাড়া সমগ্র সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং-৫৬৬৫)।

খতিব বলেন, হযরত আলী ইবনে আবি তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, পনেরো শাবানের রাত (চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত) যখন আসে তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত-বন্দেগীতে কাটাও এবং দিনের বেলা রোজা রাখ। কেননা, এ রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তায়ালা প্রথম আসমানে আসেন এবং বলেন, আছে কি কোনো ক্ষমাপ্রার্থী? আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো। আছে কি কোনো রিজিকপ্রার্থী? আমি তাকে রিজিক দিবো। আছে কি কোনো বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি? আমি তাকে বিপদ ও সমস্যা থেকে মুক্তি দিব। এভাবে সুবহে-সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা মানুষের প্রয়োজনের কথা বলে তাদেরকে ডাকতে থাকেন। (সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস নং- ১৩৮৮)। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেছেন, শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতের ফজিলত সম্পর্কে একাধিক মারফু হাদিস ও আসারে সাহাবা বর্ণিত আছে। যা দ্বারা ওই রাতের ফজিলত ও মর্যাদা প্রমাণিত হয়।

খতিব আরও বলেন, শবে বরাতকে ঘিরে আমাদের সমাজে রয়েছে দ্বিমুখী প্রান্তিকতা। কেউ কেউ শবে বরাতের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করতে চান, যা একদমই অনুচিত। আশা করি তাদের জন্য উপরোক্ত হাদিসের বিবরণ যথেষ্ট হবে। আর কেউ কেউ এ রাতকে ঘিরে পালন করেন এমন সব রুসুম-রেওয়াজ, যা শরীয়ত বিবর্জিত এবং গুনাহের কাজ। শবে বরাত উপলক্ষে খিচুড়ি, হালুয়া-রুটি, পটকা ও আতসবাজি ফুটানো, দোকান-পাট, ঘর-বাড়ি এমনকি মসজিদ আলোকসজ্জা করা, মেলার আয়োজন করা, কবরস্থান ও মাজারে ভিড় করা, কিশোর ও যুবকদের দলবেঁধে ঘোরাঘুরি করা, নারীদের মাজারে যাওয়া ইত্যাদির যে প্রচলন রয়েছে যা অত্যন্ত আপত্তিকর। এগুলোর কিছু কিছু তো সম্পূর্ণ হারাম এবং না-জায়েজ। আর কিছু কিছু তো এমন যা সাধারণ অবস্থায় বৈধ হলেও (যেমন হালুয়া-রুটি খাওয়া এবং খাওয়ানো) শবে বরাতের আমল মনে করা বিদয়াত। এগুলোতে সময় নষ্ট না করে যথাসম্ভব ইবাদত-বন্দেগী করা চাই। বিশেষভাবে তওবা-ইস্তিগফার, দোয়া-কান্নাকাটি, সালাতুত তাসবীহ আদায়, কোরআন তেলাওয়াত এবং নফল ইবাদতে মশগুল থাকা উচিত। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমল করার তৌফিক দান করেন, আমীন।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন