শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

খুলনায় চিকিৎসকদের ৪ দিনের কর্মবিরতিতে ৮০ রোগীর মৃত্যু

খুলনা ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৬ মার্চ, ২০২৩, ১২:০১ এএম

খুলনায় চিকিৎসককে লাঞ্ছনার ঘটনায় গত বুধবার থেকে ৪ দিনের কর্মবিরতি চলাকালীন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ৮০ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। চিকিৎসকদের সংগঠন বিএমএ এবং খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, রোগী মৃত্যু খুব স্বাভাবিক ঘটনা এবং গড়ে প্রতিদিন হাসপাতালগুলোতে ১৫ থেকে ২০ জন রোগি মারা যায়। রোগী মৃত্যুর সাথে চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কোনো সম্পর্ক নেই।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. রবিউল হাসান জানিয়েছেন, গত ৪ দিনে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৭৩ জন রোগী মারা গেছেন। চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কারণে তারা কেউই বিনা চিকিৎসায় মারা যাননি। প্রত্যেকদিন হাসপাতালে সাধারণত ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ রোগী থাকছে। নরমালি ১৫ থেকে ২০ জন রোগী প্রত্যেকদিনই মারা যায়। এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।

তিনি হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা ও রোগী মৃত্যুর পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে ১৪০০ রোগী ছিলেন। এরমধ্যে মারা গেছেন ২০ জন। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রোগী ছিলেন ১৩৪৫ জন, ১৭ জন মারা গেছেন। গত ১ মার্চ রোগী ছিলো ১৪১৮ জন, মারা গেছে ২০ জন। গত ২ মার্চ রোগী ছিল ১৩১০ জন, ১৬ জন মারা গেছে। এর মানে আমরা দেখছি যে ধারাবাহিকতা একভাবেই আছে। যেমন মারা যায় তেমনই আছে। আমাদের জরুরি সেবা সবসময় চালু ছিল। হাসপাতালের ভেতরের সেবাও চালু ছিল। চিকিৎসকরা সবসময় রাউন্ড দিয়েছেন। খুলনার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, হাসপাতাল ও ক্লিনিক সূত্রে জানা গেছে, গত চার দিনে কমপক্ষে ৭ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে একজন দুর্ঘটনার রোগী ছিলেন।

সাধারণ মানুষের অভিযোগ, হাসপাতালে রোগীদের মৃত্যু হতেই পারে। কিন্তু কতটুকু চিকিৎসা রোগী পেয়েছে নাকি অদৌ চিকিৎসা পায়নি, তা দেখার বিষয়। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লাকি বেগম নামে এক গৃহবধূকে বিষ খাওয়া অবস্থায় খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন তার স্বজনরা। গত শুক্রবার সকালে তার মৃত্যু হয়। লাকি বেগম নগরীর গোবরচাকা এলাকার রাজু আহমেদের স্ত্রী। তার স্বজনরা অভিযোগ করেন, চিকিৎসকদের ধর্মঘটের কারণে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা না পেয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার ডা. মেহনাজ মোশাররফ রোগী লাকি বেগমের স্বজনদের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রোগীর পয়জনিং অনেক বেশি ছিলো। রোগীকে হাসপাতালে আনতে রোগীর স্বজনরা অনেক দেরি করেছে। ওই রোগীর মৃত্যুতে চিকিৎসকদের কোনো অবহেলা ছিলো না।

এদিকে, সরেজমিনে গত চার দিন খুলনার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীরা চিকিৎসা না পেয়েই ফিরে গেছেন। গত বুধবার সকালে জেলার ডুমুরিয়া থেকে আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে আসা রোগী আলিমুল ইসলাম চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যান। তিনি একজন কিডনী রোগী। একই হাসপাতাল থেকে ফিরে যান খুলনা মহানগরীর খালিশপুর হাউজিং এস্টেটের বাসিন্দা ফেরদৌস আরা বেগম। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মস্তিষ্কে রক্ষক্ষরণ জনিত রোগে আক্রান্ত একজন রোগী। গতকাল শনিবার সকালে খুলনা সদর হাসপাতাল থেকে ফিরে যান দাকোপ উপজেলা থেকে আসা রোগী নারায়ন চন্দ্র ও গীতা দাসসহ বেশ কিছু রোগী। নগরীর ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা না পেয়ে অনেক রোগী ফিরে গেছেন।

রোগীর স্বজন শেখ মো. ফরিদুল ইসলাম জানান, নড়াইলের কালিয়া থেকে ডেলিভারি রোগী নিয়ে খালিশপুর ক্লিনিকে গিয়েছিলাম। সেখানে ডাক্তার না থাকায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানেও বড় ডাক্তার ছিলেন না। নার্সরা দেখাশোনা করেছেন। আমরা যথাযথ চিকিৎসা পাইনি।

প্রসঙ্গত, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি নগরীর হক নার্সিংহোমে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ এনে রোগীর স্বজনরা চিকিৎসক ডা. নিশাত আব্দুল্লাহর ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে হামলার অভিযোগে রোগী অথৈর বাবা সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের এএসআই নাঈমুজ্জামান শেখকে আসামি করে মামলা করেন।

অপরদিকে, ভুল চিকিৎসা ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে ডা. নিশাত আব্দুল্লাহ ও হক নার্সিংহোম এর মালিক ডা. নুরুল হক ফকিরকে আসামি করে পাল্টা মামলা দায়ের করেন নাঈমুজ্জামানের স্ত্রী নুসরাত আরা ময়না। বিএমএ এই ঘটনার প্রতিবাদে গত বুধবার থেকে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করে। শনিবার সকালে কেসিসি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের হস্তক্ষেপে ৭ দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে কর্মসূচি স্থগিত করা হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন