শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বিমান প্রতিমন্ত্রীকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চিঠি

সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে বহুমুখী সমস্যা বিমানে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে অভ্যন্তরীণ যাত্রী পরিবহন চালু হ লন্ডন-ঢাকা-সিলেট রুটে ভাড়ার বৈষম্য দূরীকরণ হ অপেক্ষমাণ কক্ষ নির্মাণ হ পচনশীল পণ্

ফয়সাল আমীন | প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট। সিলেটের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে তাদের ভূমিকা প্রশংসনীয়। দুর্যোগে সংকটে তারা এসেছেন এগিয়ে। স্বাধীনতা সংগ্রামে তারাই ছিলেন প্রবাসী সংগঠক। স্বাধীনতার দাবি তুলে বিশ^জনমত আদায়ে সোচ্চার হয়েছিলেন তারা। বেকার সমস্যা দূরীকরণে বিশে^র শ্রমবাজারের এখন সিলেটি প্রবাসীদের বিপুল অবস্থান। নিজদের পাশাপাশি দেশকে সুসংহত করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন দিবানিশী। ফলে তারা পরিচিতি পেয়েছেন রেমিটেন্স যোদ্ধার। সেই যোদ্ধারা দেশে ফিরে প্রতিনিয়ম বিড়ম্বনার শিকার হন বিমানবন্দরে। বিমানবন্দরে অনৈতিক আচরণে পড়ে কত প্রবাসী দেশবিমূখ হয়েছেন, হচ্ছেন তার কোনো ইয়ত্তা নেই। সেই সাথে রয়েছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পড়ে প্রবাসীদের অধিকার হরণের নানা কাহিনী। এ নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। কিন্তু সবই প্রতিকারহীন। সম্প্রতি বিমানবন্দরে প্রবাসীদের হয়রানি বন্ধে ১২ মার্চ তিন মন্ত্রীকে স্মারকলিপি প্রদান করবে বলে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে প্রবাসীদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার অরাজনৈতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জালালাবাদ প্রবাসী কল্যাণ পরিষদ (জেপিকেপি)। এছাড়া বৈষম্যপূর্ণ বিমান ভাড়া, টিকিট সংকট, যাত্রী দুর্ভোগ, কার্গো ফ্লাইট পরিচালনার অভাবসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এ নিয়ে ভুক্তভোগীদের একের পর এক অভিযোগের প্রেক্ষাপটে নাখোশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ অবস্থায় সিলেট বিমানবন্দরের সমস্যা নিরসনে ব্যবস্থা নিতে বিমান প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীকে একটি চিঠি দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন।

সূত্র মতে, সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করা আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ উভয় রুটের যাত্রীরাই তুলনামূলকভাবে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এ ছাড়া সার্বিক যাত্রীসেবায়ও তলানিতে নেমেছে সিলেট বিমানবন্দর। এর ফলে একদিকে মালামাল পরিবহন ও যাত্রীসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে, অন্যদিকে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বিদেশিদের কাছে। বিশেষ করে সিলেট থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রী পরিবহন বন্ধ করার সুযোগে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে বেসরকারি এয়ালাইনগুলো। এ অবস্থায় গত ২৯ জানুয়ারি ছয়টি সুপারিশ করে বিমান প্রতিমন্ত্রীকে চিঠি দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বেসামরিক বিমান চলাচল (বেবিচক) কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে নির্দেশ দিয়ে একটি চিঠি দিয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।
গত বৃহস্পতিবার বেবিচক চেয়ারম্যান এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এমডি ও সিইওকে এ চিঠি দেওয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের পক্ষে চিঠিতে সই করেন উপসচিব মো. আব্দুল আউয়াল। চিঠিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ব্যবস্থা গ্রহণের পর তা মন্ত্রণালয়কে জানাতে বলা হয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার চিঠিতে উল্লেখ করেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশক্রমে গত ১ ডিসেম্বর থেকে সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রীদের পরিবহন বন্ধ আছে। এ কারণে সিলেট থেকে ঢাকা রুটে সঙ্কট দেখা দিয়েছে টিকিটের। একই সঙ্গে যাত্রীদের গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। এতে আরো লিখেন, আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে সিলেট থেকে অভ্যন্তরীণ যাত্রী পরিবহন বন্ধসহ বেশকিছু সমস্যা পরিলক্ষিত হচ্ছে। যেমন, লন্ডন থেকে ঢাকায় আসতে খরচ হয় আনুমানিক ৮০০ পাউন্ড, যেখানে লন্ডন থেকে সিলেট আসতে খরচ হয় ১০০০ পাউন্ড। অথচ ঢাকা থেকে সিলেটের দূরত্ব কম। এরপরও যাত্রীদের অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে লন্ডন থেকে সিলেট আসতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দূরত্ব বিবেচনায় ভাড়ার বৈষম্য দূর করতে পারলে যাত্রীরা সরাসরি সিলেট পর্যন্ত অনায়াসে ভ্রমণ করতে পারবে এবং বিড়ম্বনার হাত থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব হবে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলোর বেশির ভাগ প্যাসেঞ্জার সিলেট নেমে গেলেও ওই ফ্লাইটে অভ্যন্তরীণ যাত্রীদের পরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে একদিকে যেমন বিমান রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ যাত্রীরা টিকিট সঙ্কটের কারণে চড়া মূল্যে সংগ্রহ করছেন বেসরকারি বিমানের টিকিট।

চিঠিতে আরো বলা হয়, এই বিমানবন্দর দিয়ে প্রতিদিন সিলেট বিভাগের চারটি জেলা হতে বিপুলসংখ্যক যাত্রী অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে যাতায়াত করে থাকেন। এ সময় তাদের সঙ্গে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবসহ অনেকে বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকেন। বিমানবন্দর এবং আশপাশে অনেক জায়গা থাকা সত্ত্বেও অপেক্ষমাণ দর্শনার্থীদের জন্য উন্নতমানের কোনো আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত অপেক্ষমাণ কক্ষ নেই। যার দরুন যাত্রীদের সঙ্গে আসা এসব দর্শনার্থীদের ভোগান্তির শিকার হতে হয়। অচিরেই এখানে উন্নতমানের আধুনিক সুবিধা সংবলিত অপেক্ষমাণ কক্ষ নির্মাণ করা প্রয়োজন। এছাড়া সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ সিলেটে এক্সপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স নির্মাণ করেছে। ফলে সিলেট ও আশপাশের জেলা হতে বহির্বিশ্বে সবজি রফতানি করার নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে পচনশীল পণ্য রফতানির লক্ষ্যে ঢাকার শ্যামপুরে যেমন পচনশীল পণ্য প্যাকেজিং হাউস রয়েছে, অনুরূপভাবে সিলেটেও পচনশীল পণ্য প্যাকেজিং হাউস নির্মাণ করা দরকার। তাহলে সিলেট ও আশপাশের জেলাগুলো হতে বহির্বিশ্বে এসব পণ্য রফতানির নতুন দুয়ার উন্মোচিত হবে।

বিমানবন্দর থেকে কার্গোতে মালামাল রফতানি করা গেলেও মালামাল সরাসরি আমদানি করা যাচ্ছে না। আমদানীকৃত পণ্য ঢাকা থেকে সিলেটে যায়। সিলেটে কার্গো হ্যান্ডলিং আনুষঙ্গিক সুযোগ সুবিধা বিদ্যমান থাকায় সরাসরি লন্ডন থেকে সিলেটে কার্গো ইমপোর্ট চালু করা প্রয়োজন। যদিও আগে এই সেবা চালু ছিল।

চিঠিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন, চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু রয়েছে। কিন্তু সিলেটে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থাকা সত্ত্বেও লন্ডন ছাড়া অন্যান্য দেশ থেকে সরাসরি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সিলেটে আসে না। অতীতে সরাসরি চলাচল করলেও বর্তমানে তা বন্ধ আছে। পুনরায় এ ধরনের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু করা হলে রাষ্ট্রের জন্য লাভজনক হবে এবং যাত্রীরাও বিশেষভাবে উপকৃত হবেন। সে কারনে বিমানে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে অভ্যন্তরীণ যাত্রী পরিবহন পুনরায় চালু করা, লন্ডন-ঢাকা-সিলেট রুটে ভাড়ার বৈষম্য দূরীকরণ, অপেক্ষমাণ কক্ষ নির্মাণ, পচনশীল পণ্য প্যাকেজিং হাউস নির্মাণ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পুনরায় চালুকরণসহ বর্ণিত বিষয়সমূহে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বিমানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন