রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ভবনটিতে ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবন’ লেখা সাইনবোর্ড ঝুলনো হয়। এদিকে গতকাল সোমবার ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এছাড়া ভবনের চারপাশে নিরাপত্তায় রয়েছে পুলিশ। অপরদিকে বিস্ফোরণের ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত তিনজনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এরপর ওই তিনজনের লাশ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে তাদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। যাদের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে তারা হলেন- শফিকুজ্জামান (৪৫), আব্দুল মান্নান (৬৫) ও তুষার (৩৫)।
অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেছেন, সায়েন্সল্যাবে বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো নাশকতার আলামত মেলেনি। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা কা হচ্ছে, দীর্ঘদিন জমে থাকা গ্যাস বিস্ফোরণে এমনটি হয়ে থাকতে পারে। বিষয়টি নিশ্চিত হতে তদন্ত করছে ফায়ার সার্ভিস। অন্য কারণও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
নিউমার্কেট থানার এসআই আব্দুর রহমান বলেন, নিহত শফিকুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরে। তিনি নিউ জেনারেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আর আব্দুল মান্নান একই প্রতিষ্ঠানে পিয়ন হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি রাজধানীর লালবাগের বাসিন্দা। নিহত তুষারের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীতে। তিনিও সেখানে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. ফাহমিদা আখতার জানিয়েছেন, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণেই তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যু সঠিক কারণ জানা যাবে।
সায়েন্সল্যাব এলাকায় যে ভবনে বিস্ফোরণ ঘটে তার আশপাশে পান-সিগারেট হকারি করতেন ছলিম মিয়া। তিনি বলেন, এই মার্কেটের নীচতলার দোকানগুলোতে সবসময় ক্রেতার ভিড় লেগে থাকতো। কিন্তু আজ তা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
বিস্ফোরণের দুঃসহ স্মৃতি মনে করে তিনি বলেন, হঠাৎ বিকট শব্দ। কিছুক্ষণ পরই দেখি ধুলা উড়ছে। গলির দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখি রাস্তায় রক্তাক্ত তিনজন মানুষ আছেন। আতঙ্ক কেটে গেলে আশপাশের সবাই মিলে আহতের হাসপাতালে পাঠিয়ে দেই। তিনতলা থেকে যে তিনজন ছিটকে পড়েছিলেন মনে হচ্ছিলো তারা ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। তারা সবাই নিউ জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডে কর্মরত ছিলেন।
সীতাকুণ্ড বিস্ফোরণ, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ড, এরমধ্যে রাজধানীর সায়েন্সল্যাবেও বিস্ফোরণ। এসি বিস্ফোরণ না অন্য কিছু থেকে সায়েন্সল্যাবের বিস্ফোরণ? জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস ডিজি বলেন, দুর্ঘটনা না কি অন্য কারণে সায়েন্সল্যাবের ঘটনা, তা জানতে আমি নিজে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছিলাম। তারা একটি টিম পাঠিয়েছিলেন। তারা সেখানে কাজ করেছেন। তাদের বোম্ব ডিসপোজাল টিম জানিয়েছে, সেখানে নাশকতা বা বিস্ফোরক জাতীয় কিছু থেকে বিস্ফোরণের আলামত পাওয়া যায়নি। এটা এখন পর্যন্ত তদন্তাধীন। এটা দুর্ঘটনা ছাড়া আমার মনে হয় অন্য কিছু নয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন