স্টাফ রিপোর্টার : দশম সংসদ নির্বাচনের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রাজপথে বিএনপিকে কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের সমাবেশকে সামনে রেখে এক যৌথসভায় দেয়া বক্তব্যে তিনি বিএনপিকে এ হুঁশিয়ারি দেন। যৌথসভার আয়োজন করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ।
মাহবুব-উল আলম হানিফ বিএনপিকে জানিয়ে দেন, ওই দিন অর্থাৎ ৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ পালন করবে।
তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চায় না। জন্ম যাদের অবৈধ, তারা সবসময় অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসতে চায়। তাই তারা অসংবিধানিকভাবে ক্ষমতায় আসতে চায়। আমরা মনে করি, ৫ জানুয়ারি বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিয়ে ভুল করেছে। তাছাড়া ওইদিন যদি গণতন্ত্রের হত্যা চেষ্টা হয়ে থাকে, তবে এটা করেছে বিএনপি। কারণ ওই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। তারা মানুষকে শান্তিতে ভোট দিতে দেয়নি। ভোটকেন্দ্র জ্বালিয়ে দিয়েছে। প্রিজাইডিং অফিসারকে হত্যা করেছে। আমরা গণতন্ত্র রক্ষা করেছি আর বিএনপি জ্বালাও-পোড়াওয়ের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যর চেষ্টা করেছে।
হানিফ বলেন, ৫ জানুয়ারিতে বিএনপি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পলন করবে আর বাংলার মানুষ বসে থাকবে না। বাংলার জনগণ এটা মেনে নেবে না। দেশের জনগণ ৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে বিএনপিকে রাস্তায় নামতে দেবে না। বিএনপিকে এই দিবস নিয়ে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে দেয়া হবে না।
বিএনপি রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে দাবি করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন নিয়ে বিএনপির বক্তব্য রাজনৈতিকভাবে চরম দেউলিয়াত্বের পরিচয়। রাজনৈতিকভাবে কতটুকু দেউলিয়া হয়ে গেলে আজকে তারা নারায়ণগঞ্জ নিয়ে কথা বলেন।
বিএনপির স্থায়ী সদস্য মওদুদ আহমদের বক্তব্যের সমালোচনা করে হানিফ বলেন, মওদুদ সাহেব বলেছেনÑ জাতি আজ গভীর সঙ্কটে। আসলে সঙ্কটে আছে বিএনপি, জাতি সঙ্কটে নেই। বিএনপির মধ্যে রাজনৈতিক সঙ্কট, নেতৃত্বের সঙ্কট, নেতাকর্মীর সঙ্কট চরম আকার ধারণ করেছে। আপনারা সঙ্কটে থাকেন সেটা আমরাও জানি। আপনাদের এই সঙ্কট সহসা দূর হবে না।
বিএনপিকে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার পরামর্শ দিয়ে হানিফ বলেন, নির্বাচন বয়কট কোনো রাজনৈতিক সমাধান নয়। সামনের জাতীয় নির্বাচনে অংশ গ্রহণের প্রস্তুতি নিন।
জঙ্গিদের জন্য বিএনপির মায়াকান্না কেন জানতে চেয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হানিফ বলেন, আজকে আমরা দেখি জঙ্গির জন্য বিএনপির মায়া কান্না। আশকোনায় জঙ্গি অভিযানের পর বিএনপি নেতাদের মুখে বিবেকের কথা, মনে কষ্ট। এই বিবেক, এই মনোকষ্ট ২০১৩, ১৪, ১৫ সালে কোথায় ছিল। যখন নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছিলেন? কোলের শিশুকে ঝলসে দিয়েছিলেন, ট্রাকের ড্রাইবারকে পুড়িয়ে হত্যা করেছিলেন?
তিনি বলেন, আজকে জঙ্গিদের জন্য বিএনপির আহাজারি প্রমাণ করে, বিএনপির সঙ্গে জঙ্গিদের নিবিড় সম্পর্ক আছে।
উল্লেখ্য, নির্দলীয় সরকারের অধীনে ভোটের দাবিতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি ও তার শরিকরা। ওই নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। গতবছর নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে বিএনপি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ এবং আওয়ামী লীগ ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ পালনের ঘোষণা দিয়ে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিলে তৈরি হয় উত্তেজনা। পুলিশ ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে সমাবেশের পথ বন্ধ করে দিলে খালেদা টানা অবরোধের ঘোষণা দেন। এরপর তিনমাসে নজিরবিহীন সহিংসতা ও নাশকতায় দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়, যার পেছনে বিএনপিকেই দায়ী করে আসছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। যৌথসভায় সভাপতিত্ব করেন মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত। এতে আরো বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন