কর্পোরেট রিপোর্ট : তিন মাসের ব্যবধানে প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে দ্বিগুণ। ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমলেও প্রভিশন ঘাটতি বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি লাগামহীন। যদিও এ সময়ে খেলাপি ঋণ ৩ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা কমেছে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর শেষে সার্বিক ব্যাংকিং খাত ৪ হাজার ২৮৪ কোটি টাকার প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে। এর আগে ২০১৪ সাল শেষে এর পরিমাণ ছিল ৭৯৭ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে ঘাটতি বেড়েছে ৩ হাজার ৪৮৮ কোটি টাকা বা ৪৩৮ শতাংশ। ২০১৩ সাল শেষে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ছিল মাত্র ২৯৬ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ তালিকায় চার ব্যাংকের নাম উঠে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোর ৩০ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা প্রভিশন রাখার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এর বিপরীতে ব্যাংকগুলো সংরক্ষণ করেছে ২৬ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। এতে ঘাটতি দেখা দিয়েছে ৪ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ৩০ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা প্রয়োজনীয়তার বিপরীতে ব্যাংকগুলো রেখেছিল ২৮ হাজার ৫২২ কোটি টাকা। তখন ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৪ সাল শেষে ২৮ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা প্রয়োজনের বিপরীতে ব্যাংকগুলো ২৮ হাজার ১৬৫ কোটি টাকা সংরক্ষণ করতে সক্ষম হয়। ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। এ পরিমাণ খেলাপি মোট ঋণের ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ। তিন মাস আগে খেলাপি ঋণ ছিল ৫৪ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা যা ছিল মোট ঋণের ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এ হিসাবে আগের প্রান্তিকের তুলনায় সামগ্রিক ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমেছে ৩ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ পুনঃতফসিলিকরণ নিয়মনীতি শিথিল করার পরেও রাষ্ট্রীয় মালিকানা ব্যাংকের প্রভিশন সংরক্ষণে উন্নতি না হওয়ায় সামগ্রিক ব্যাংক খাতে এর প্রভাব দেখা দিয়েছে। পুনঃতফসিলের নির্ধারিত সময় শেষ হলেও দেশের রাজনৈতিক অবস্থার তেমন পরিবর্তন হয়নি। ফলে ব্যবসায়ীরা সঠিক সময়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় আবারো খেলাপি হয়েছে। নিয়মানুযায়ী, ব্যাংকের অশ্রেণিকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে পাঁচ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্নমান বা সাব স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা খেলাপি ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের মার্চ প্রান্তিকে সমগ্র ব্যাংক খাতে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা। জুন প্রান্তিকে ঘাটতি কমে হয় ১ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা। কিন্তু সেপ্টেম্বরে সেটা আরো বেড়ে হয় ২ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা। আর বছর শেষে ব্যাংকগুলোর ৩০ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল। এ সময়ে ব্যাংকগুলো ২৬ হাজার ৬১০ কোটি টাকা প্রভিশন সংরক্ষণ করতে সক্ষম হয়। সমগ্র ব্যাংক খাতে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণের ঝুঁকি বিবেচনা করে তার বিপরীতে বিভিন্ন হারে প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয়। ২০১২ সালের জুনের মাঝামাঝি সময়ে এক প্রজ্ঞাপনে ঋণ শ্রেণিকরণের সময়সীমা তিন মাস করে কমিয়ে আনা হয়েছে। তবে প্রভিশনে তেমন পরিবর্তন হয়নি। ব্যাংকগুলোর ঋণের ঝুঁকি বিবেচনা করে তার বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। খেলাপি ঋণ বাড়লে ব্যাংকের প্রভিশন রাখার প্রয়োজনীয়তা বাড়ে। আর প্রভিশন ঘাটতি রেখে কোনো ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না। এক সময় কোনো ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি থাকলে শুধু সতর্ক ও ঘাটতি মেটাতে দিকনির্দেশনা দিত কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইনে কোনো ব্যাংকে টানা দুবছর ঘাটতি থাকলে তার বড় অঙ্কের জরিমানাসহ লাইসেন্স বাতিলের কথা বলা হয়েছে। এসব কারণে নানা উপায়ে প্রভিশন ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা করে ব্যাংকগুলো।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন