শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ধানের শীষের মনোনয়ন বিতরণ শুরু : প্রার্থীরা আনন্দিত ও আতঙ্কিত

প্রকাশের সময় : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আফজাল বারী : দলের মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু করেছে বিএনপি। দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্তরা আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তাদের প্রতীক হবে ধানের শীষ। লবিং তদবির করে ঢাকা থেকে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ মিলেছে। কিন্তু প্রার্থীদের সামনে হুমকি-ধমকিসহ নানামুখী বাধা। অনেকেই এলাকায় যেতে পারছেন না। গত পৌরসভা নির্বাচনের চিত্রের পুনরাবৃত্তি ঘটছে।
তফসিল ঘোষণার আগে-পরে অনেক সম্ভাব্য প্রার্থী এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। পুরনো মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা এবং নতুন নতুন মামলার জালে আটকা পড়ছে অনেকে। কোথাও কোথাও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করাও সম্ভব হচ্ছে না। প্রার্থীরা প্রশাসনসহ ক্ষমতাসীন দলের বাধার মুখে পড়ছেন বলে দাবি বিএনপির।
গতকাল সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে দল সমর্থিত প্রার্থীদের হাতে মনোনয়নপত্র তুলে দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার আগে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আন্দোলনের অংশ হিসেবেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যয়নপত্র বিতরণ করা হয় গুলশান কার্যালয় থেকে। হাজারো নেতা-কর্মীর সমাগম সেখানে। প্রায় তিন শতাধিক মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হয়েছে, তাতে একক প্রার্থীর সংখ্যাই বেশি।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্টের জন্মস্থান বগুড়া জেলার ধুপচাচিয়ার তালুড়া ইউনিয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মোজাফ্ফর হোসেনের হাতে প্রথম প্রত্যয়নপত্র তোলে দেয়া হয়। দলীয় সমর্থন পেয়ে যারপরনাই খুশি মোজাফ্ফর। কিন্তু পরক্ষণেই আতঙ্কের কথা জানালেন তিনি। বললেন, ধানের শীষ তো পেলাম এবার এলাকায় টিকে থাকাল লড়াইয়ে নামতে হবে। আবার কেন্দ্র দখল, ক্যাডারদের আধিপত্য, আগের রাতেই সীল মারার দৃশ্য দেখতে হবে।
দৃশ্য এমনটি হবে বিষয়টি আগে থেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছেন বিএনপির নীতি নির্ধারকরা। তাই দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত করে নির্বাচনকেই গুরুত্ব দিচ্ছে। অবশ্য দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই নির্বাচনকে ‘সরকারের নির্বাচন প্রকল্প’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে কয়েকদিন আগেই গণমাধ্যমে বলেছেন, প্রতীক দিয়ে স্থানীয় নির্বাচন করা হচ্ছে। আগের রাতেই সিল মারবে। সমস্ত কিছু দখল করে নিয়ে যাবে। তারা বলবে নৌকা জিতেছে, আওয়ামী লীগ জনপ্রিয়।

দলটির যুগ্মমহাসচিব রিজভী আহম্মেদ বলেছেন, বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা এখন বাড়ি-ঘর ছাড়া, যাতে ধানের শীষের প্রার্থীরা ভালো করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না পারে। শুধু ভয়ভীতি নয়, মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রামের নাম ধরে তালিকা করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হয়রানি করছে। শুধু নেতাই নয় বিএনপির সমর্থকরাও নতুন-পুরনো মামলা থেকে রেহাই পায়নি। বিএনপি তিন স্তরের প্রার্থী বাছাই করলেও সরকার চার স্তরের নেতাদের নামে মামলা দিয়েছে।
বাছাই কমিটিকে সহযোগীতাদানকারী মৎসজীবী দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল ইনকিলাবকে জানান, সাতক্ষীরায় প্রার্থী দেয়াই কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে। নোয়াখালী, লক্ষীপুর, বরিশালসহ বিভিন্ন এলাকার সম্ভাব্য প্রার্থীরা আগে থেকেই বিভিন্ন মামলা, ভয়-ভীতির কারণে এলাকা ছাড়া আছেন। তফসীল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন কমিশনে বিভিন্ন পদে মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হলেও বিএনপির প্রার্থীরা ক্ষমতাসীনদের বাধারমুখে তা সংগ্রহ করতে পারছেন না।  
গত ১১ ফেব্রুয়ারি প্রথম ধাপে তফসীল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এ ধাপে ৭৩৯ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সাধারণ ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ভোট গ্রহণ করা হবে। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২২ ফেব্রুয়ারি, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি, আপিল দাখিল ২৫-২৭ ফেব্রুয়ারি, নিষ্পত্তি ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মার্চ, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২ মার্চ এবং প্রতীক বরাদ্দ ৩ মার্চ। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে প্রচারণা চালাতে পারবেন প্রার্থীরা ২১ মার্চ পর্যন্ত। ২২ মার্চ ভোট গ্রহণ।
গত বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় ধাপের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। তফসীল অনুযায়ী দ্বিতীয় ধাপের ৬৮৪ ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান, সাধারণ ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ২ মার্চ পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২ মার্চ, বাছাই ৫ ও ৬ মার্চ, প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৩ মার্চ এবং ভোট গ্রহণ ৩১ মার্চ।
সাবেক এমপি ফেনীর রেহানা আক্তার রানু ইনকিলাবকে জানান, তাদের এলাকায় আগামী ৩১ মার্চ ভোট। এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়নি। কিন্তু তার আগেই হয়রানির শিকার হচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। সেখানের বিএনপি নেতা-কর্মী সবাই মামলার আসামী। নির্বাচনে ইচ্ছুক নেতারা জামিন নিয়ে প্রস্তুতি নিয়েছেন। ক্ষমতাসীনরা প্রাথমিক প্রস্তুতি গ্রহণকারী ব্যক্তিকেই নানানভাবে হয়রানি করছেন। মুক্ত অবস্থায় নির্বাচন করতে হলে প্রার্থীকে এলাকার বাইরে অবস্থান করতে হবে বলে তার মন্তব্য।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন