শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ছুটির দিনে কানায় কানায় পূর্ণ অমর একুশে গ্রন্থমেলা

অমর একুশে বইমেলা : মেলায় ফাগুনের আগুন সর্বত্র বই প্রেমীদের ভিড়

প্রকাশের সময় : ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইখতিয়ার উদ্দিন সাগর : মাত্র ৭ দিনেই আগুন ঝরাচ্ছে ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম মাস ফাল্গুন। সকাল থেকেই ছিল তীব্র রোদের একচ্ছত্র আধিপত্য। দুপুর হতে না হতেই কাঠফাটা রোদ। যেন অল্পতেই তৃষ্ণায় কাতর করিয়ে দেয়। প্রচ- তৃষ্ণা আর তীব্র গরমও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি বইপ্রিয় মানুষদের। টানা তিনদিন ছুটির গতকাল শুক্রবার প্রথম দিনে অমর একুশে গ্রন্থমেলার চিত্রটাই ছিল এমন। ছুটির দিনে গরম-ভিড়ে বইপ্রেমীরা যেন বইয়ের নেশায় বিভোর হয়ে গিয়েছিল।  
মেলায় সরেজমিন দেখা যায়, গতকাল (শুক্রবার) শিশুপ্রহর না হলেও এদিন সকাল ১১টায় শুরু হওয়া মেলা জমে উঠতে সময় লাগেনি। তীব্র রোদ আর গরম উপেক্ষা করে মেলার প্রবেশপথে সৃষ্টি হয়েছিল দীর্ঘ লাইনের জটলা। যা গ্রাম বাংলার আঁকা-বাঁকা রাস্তার মতো দেখা যায়। আর এই সারিগুলোর শুধুই দীর্ঘ থেকে আরো দীর্ঘ হয়। বই কেনা ছাড়াও ছুটির দিনে বইমেলা হয়ে উঠেছে বিনোদনের প্রাণ কেন্দ্র।
তাই পছন্দের বই খুঁজে নিতে এবং গায়ে বিনোদনের একটু হাওয়া লাগাতে বাংলা একাডেমী থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের সর্বত্র ঘুরে বেড়িয়েছে দর্শনার্থীরা। বিভিন্ন স্টল ঘুরে ঘুরে বই  দেখেন তারা। তাছাড়া পাঠকদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন স্টলের বিক্রয় প্রতিনিধিরাও জনপ্রিয় লেখক আর তাদের বইয়ের নাম উল্লেখ করে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করতে দেখা যায়।
এদিকে একদিন পরই আসছে ভাষা দিবস। যেই দিনটিকে স্মরণ করে পুরো একটা মাস বইমেলার আয়োজন করা হয়  সেই দিনটি আর বেশি দূরে নয়, মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই পালন করা হবে ভাষা শহীদ দিবস অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। এ দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ইউনেস্কোভুক্ত বিশ্বের সকল দেশ পালন করে থাকে। যা বাংলা ভাষা ও বাঙালীদের বিশ্বের দরবারে করেছে অতি উচ্চ।
প্রতি বছরই এই দিনটিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, বাংলা একাডেমীর অমর একুশে গ্রন্থমেলা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ এর আশপাশের এলাকায় প্রচ- ভিড় হয়। লাখো লাখো মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয় এসব এলাকা। বইমেলাতেও এই ভিড় ব্যাপক আকার ধারণ করে। তাই এ বছর একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে বইমেলায় বসানো হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত করে নজরদারিতে রাখা হয়েছে বইমেলার সকল স্টল। এছাড়া র‌্যাব-পুলিশের পাশাপাশিও রয়েছে গোয়েন্দাদের নজরদারি।   
বিশেষ করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ায় ব-দ্বীপ প্রকাশনী বন্ধ হওয়ার পর থেকে মেলায় নিরাপত্তা বাড়িয়ে দিয়েছে একাডেমী কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ প্রশাসন। ইতিমধ্যে এ অভিযোগে তিনজনকে  গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া এর সঙ্গে যদি অন্য কেউ জড়িত থাকে তাহলে তাদেরও খুঁজে বের করতে আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।  
নতুন বই ও গতকালের অনুষ্ঠান : গতকাল শুক্রবার ছিল অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১৯তম দিন। মেলায় কাল নতুন বই আসে ২৩৬টি। অমর একুশে উদ্যাপন উপলক্ষে সকাল ১০টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দী। বিচারকম-লীর সদস্য হিসেবে ছিলেন শিল্পী কল্যাণী ঘোষ, সুজিত মোস্তফা ও আবু বকর সিদ্দিক। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।
প্রতিযোগিতায় ক-শাখায় প্রথম হয়েছেন তাহসিন রহমান, দ্বিতীয় হয়েছেন সুদীপ দত্ত অহন এবং তৃতীয় হয়েছেন ফাবিহা লামিছা তাহা। খ-শাখায় প্রথম হয়েছেন নিপা আক্তার মীম, দ্বিতীয় হয়েছেন অগ্নিতা শিকদার মুগ্ধ এবং তৃতীয় হয়েছেন নামিরা মুশকান (শান্তনা)। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতা কমিটির আহ্বায়ক রহিমা আখতার কল্পনা।
বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় রাধারমণ দত্ত : মৃত্যুশতবার্ষিকী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শুভেন্দু ইমাম। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মাহফুজুর রহমান, বিশ্বজিৎ রায় এবং নৃপেন্দ্রলাল দাশ। সভাপতিত্ব করেন কবি মোহাম্মদ সাদিক।
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সিদ্দিকুর রহমান পারভেজের পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন ‘মুক্তধারা সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র’ এবং হাসান আরিফের পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন ‘শ্রুতিঘর-এর শিল্পীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী আকবর আলী সাঁই, দেলোয়ার হোসেন বয়াতি, অমিয় বাউল, পাগলা বাবলু খান।
আজকের অনুষ্ঠানসূচি : আজ (শনিবার) মেলা শুরু হবে সকাল ১১টায় এবং চলবে রাত ৮০টা   পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জাগরণ : সমস্যা ও সম্ভাবনা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মফিদুল হক। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন বদিউর রহমান, গোলাম কুদ্দুছ এবং শুভাশিস সিনহা। সভাপতিত্ব করবেন কামাল লোহানী। সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ : বিশ্বে উত্তেজনা বাড়াচ্ছে রাশিয়া ও চীন
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর বিশ্বব্যাপী উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য বেইজিং ও মস্কোকে অভিযুক্ত করেছে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, দেশ দুটোর সমরসজ্জা বিশ্বকে অনিরাপদ করে তুলেছে। পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিমতের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বেশির ভাগই একমত পোষণ করে।
ওয়াশিংটনে বৃহস্পতিবার এক প্রেসবিফ্রিংয়ে পররাষ্ট্র দফতের পক্ষে মুখপাত্র কিরবি বলেন, ইউরোপের পূর্বাঞ্চলে মার্কিন সামরিক সম্প্রসারণ ও দক্ষিণ চীন সাগরে সামরিক উপস্থিতি মিত্রদের অনুরোধেই হচ্ছে। রাশিয়া ও চীনের হুমকি বিবেচনায় এটা করা হতে পারে এই ধারণা তিনি নাকচ করে দেন।
তিনি বলেন, আমি মনে করি আমাদের মিত্র ও অংশীদাররা যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে স্বস্তিকর হিসেবে দেখছে এবং সে অঞ্চলে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি অব্যাহত থাকবে বলে তিনি পুনঃনিশ্চিত করেন।
সম্ভাব্য হুমকির বিবেচনা থেকে ইউরোপের পূর্বাঞ্চল অভিমুখী ন্যাটোর পদক্ষেপ ও দক্ষিণ চীন সাগরে মার্কিন রণতরী প্রেরণ করা হচ্ছে কীনা প্রশ্ন করা হলে জবাবে কিরবি একথা বলেন।
কয়েক বছর ধরেই রাশিয়া তার পূর্ব সীমান্ত অভিমুখে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো সম্প্রসারণের অভিযোগ করে আসছে। তৎকালীন সোভিয়েট প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভ একবার বলেছিলেন যে পূর্ব অভিমুখী এক ইঞ্চি এলাকায়ও ন্যাটো সম্প্রসারণ করা হবে না বলে একটি প্রতিশ্রুতি ছিল। তবে এই অঙ্গীকার কখনোই দালিলিক রূপ নেয়নি। বাস্তবে ন্যাটোর সম্প্রসারণ ঘটছে নাটকীয়ভাবে। ১৯৯০ তে যেখানে ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্রের সংখ্যা ছিল ১৬ সেখানে এখন ২৮।
রাশিয়ার মতো চীনও যুক্তরাষ্ট্রের উপর অসন্তুষ্ট। বিশেষকরে প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন সামরিক পদক্ষেপকে চীন উস্কানিমূলক বলে বিবেচনা করে। গত জানুয়ারিতে মার্কিন নৌবাহিনী দক্ষিণ চীন সাগরে  প্যারসেল দ্বীপপুঞ্জের ট্রিটন দ্বীপের ১২ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপনাস্ত্র সজ্জিত একটি ডেসট্রয়ার প্রেরণ করে। চীনসহ সে অঞ্চলের দেশগুলো সেই দ্বীপপুঞ্জের উপর নিজের সার্বভৌমত্ব দাবি করে আসছে।
‘চীনের প্রেক্ষিত থেকে অবশ্যই আপনি এটা উপলব্ধি করতে পারেন যে এটা সামরিকীকরণ এবং এই পদক্ষেপ উত্তেজনা বাড়াচ্ছে’ এপি সংবাদদাতা ম্যাট লি’র এই অভিমতকে চ্যালেঞ্জ করেন কিরবি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ম্যাট লি চীনা সরকারের পক্ষেই কথা বলছেন। তিনি বলেন, মার্কিন এই পদক্ষেপ সমরসজ্জা নয়। অবশ্য আমরাই ঠিক এবং আপনি ভূল এটা এ ধরণের কোন ঘটনা নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সে অঞ্চলে তার মিত্রদেরকে দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছে।
দক্ষিণ চীন সাগরে প্রতিটি বিমানের উড্ডয়ন ও নৌবাহিনীর জাহাজ চলাচলকে তারা কি ভাবে দেখছে আমি এটা বিশেষভাবে নির্দিষ্ট করতে চাই না। তবে আপনার নিজস্ব ব্যাখ্যা গ্রহণ করাতে চান এটাই আপনি বলছেন বলে মন্তব্য করেন কিরবি।
কিরবি বলেন, দক্ষিণ চীন সাগরে উত্তেজনার যথেষ্ট উপাদান রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিমত কেবল ওয়াশিংটনের একার নয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ সদস্যেরও অভিমত তাই। উত্তেজনা আরো বাড়তে পারে এবং আমরা সেখানে সামরিকীরণের অনেক কিছুই দেখতে পাচ্ছি।
তবে চায়না ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডির পরিচালক ভিক্টর গাও মনে করেন, দক্ষিণ চীন সাগরে ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের মতো আঞ্চলিক মিত্রদের যুক্তরাষ্ট্র হয়তো সন্তুুষ্ট করতে পারবে তবে ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপ চীনা জনমতকে আরো বেশী মার্কিন বিরোধী করে তুলতে পারে। সূত্র : রয়টার্স, দ্য নিউজ রিপাবলিক

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন