শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

গুলশানের ডিসিসি মার্কেটের দোকান মালিক ও ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত : ক্ষতিপূরণ দাবি

| প্রকাশের সময় : ৫ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শুক্রবার মার্কেট চালু করার ঘোষণা দিয়েছেন দোকান মালিক ও ব্যবসায়ীরা : প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি প্রদানের সিদ্ধান্ত, নাশকতা ও ষড়যন্ত্রের  বিচার বিভাগীয়  তদন্তের দাবি : গুলশান ডিসিসি মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে, তবে ভেতর থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে : মার্কেট নির্মাণের আগেই দোকান বরাদ্দ চান ব্যবসায়ীরা
উমর ফারুক আলহাদী : গুলশান-১ নম্বরের ডিএনসিসি মার্কেটে আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও ভেতর থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা মার্কেটের ভেতরে প্রবেশ করে তাদের মালামালের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। মার্কেটের চারপাশে র‌্যাব পুলিশের সদস্যরা অবস্থান করছেন। আছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরাও। বিকালে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। তবে আগুন লাগার ঘটনাকে নাশকতা ও ষড়যন্ত্র বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্ট দোকান মালিক ও ব্যবসায়ীরা। ক্ষতিগ্রস্ত কাঁচা মার্কেট দোকান সমিতির ব্যবসায়ীরা বলছেন, মার্কেটের নির্মাণ কাজ শুরুর আগেই দোকান বরাদ্দ দিতে হবে। ষড়যন্ত্রকারীদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ ও বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন দোকান মালিক সমিতি ও ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, জরুরি ভিত্তিতে মার্কেট চাল করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি তদন্তসাপেক্ষে আগুনের রহস্য উদঘাটন করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দিতে হবে। তারা বলছেন, আগামী শুক্রবারের মধ্যে মার্কেট চালু করা হবে। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি তোলা হয়েছে। এছাড়া দুই/একদিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের দাবি-দাওয়াসহ স্মারকলিপি প্রদানেরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গতকাল মার্কেটের সামনে এক সমাবেশ শেষে সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী নেতারা এসব কথা বলেছেন। সমাবেশে ব্যবসায়ীরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ও ক্ষতিগ্রস্তদের দোকান বরাদ্দ দিয়ে এরপর নির্মাণ কাজ শুরুর দাবি জানান।
গতকাল বিকাল ৪টার দিকে এক জরুরি বৈঠক শেষে দোকান মালিক সমিতির সভাপতি জানান, প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ দুর্ঘটনায় যথাযথ ব্যবস্থা নিতে স্মারকলিপি দেয়া হবে। সেই সাথে মার্কেটের খোলা জায়গায় আজ রাত থেকেই কাঁচাবাজার শুরু হবে বলে জানান তিনি। ঘটনার কারণ উদ্ঘাটনে কাজ শুরু করেছে তদন্ত কমিটি। তবে একদিন পরও মার্কেটের ভেতর থেকে বের হচ্ছে ধোঁয়া। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর গতকাল থেকে  উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। পাশাপাশি চলছে ভবনের ভেঙে যাওয়া অংশের অপসারণ কাজ।
ডিসিসি পাকা মার্কেটের সভাপতি এস এম তালাল রেজবী গতকাল জানিয়েছেন, আগামী শুক্রবার ৬ জানুয়ারি ডিসিসি পাকা মার্কেট খুলে দেওয় হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা শুক্রবার মার্কেট খুলে দিচ্ছি। এজন্য বুধ ও বৃহস্পতিবার পরিচ্ছন্নতার কাজ চলবে। এরই মধ্যে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মী, ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরাও পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন।’
সোমবার রাত ২টায় লাগা আগুন ১৬ ঘণ্টা নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে আগুন পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয়নি। পুরোপুরি নেভাতে আরও সময় লাগবে বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস সূত্রে। তবে এরই মধ্যে মার্কেটের ধসে পড়া অংশ সরিয়ে নেয়ার কাজ চলছে। আর পাকা মার্কেটের ব্যবসায়ী, দোকান কর্মচারীরা যার যার দোকান পরিষ্কার শুরু করেছেন।
প্রসঙ্গত, সোমবার রাত ২টার দিকে ডিসিসির দুটি মার্কেটে আগুন লাগে। আগুন লাগার ১৫ মিনিটের মধ্যে কাঁচা মার্কেটটি ধসে পড়ে। পরে আগুন পাকা মার্কেটে ছড়িয়ে পড়ে। ১৬ ঘণ্টা পর মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার ঘোষণা দেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন) মেজর শাকিল নেওয়াজ।
ডিসিসি কাঁচা ও পাকা মার্কেটে ৬ শতাধিক দোকান ছিল। আগুনে প্রায় আড়াইশ’ দোকান পুরোপুরি পুড়ে গেছে এবং বাকিগুলো নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা।
ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে পুড়ে যাওয়া টাকা, পাসপোর্ট, বের করে আনছে হতভাগ্য মানুষগুলো। জীবন-যাপনের একমাত্র অবলম্বন দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ায় আহাজারিই এখন তাদের সম্বল।
ভাগ্য পুড়েছে গুলশান ডিএনসিসি মার্কেটের দেড় শতাধিক দোকান মালিকের। মার্কেট পুড়ে যাওয়ার প্রথম দিন অনেকেই প্রবেশ করতে পারেননি তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু আগুন নিয়ন্ত্রণে এলে অনেককেই দেখা গেছে তাদের দোকানের পুড়ে যাওয়া মালপত্র বের করতে।
বুধবারও মার্কেট এলাকায় দেখা যায় পুলিশের পাহারা। মার্কেটের ব্যবসায়ী ছাড়া প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি বাইরের জনসাধারণকে। মার্কেটের ভেঙে যাওয়া অংশের অপসারণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস। এদিকে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও করণীয় বিষয়ে বৈঠক করেছে দোকান মালিক সমিতি।
সোমবার মধ্যরাতে গুলশানের ডিএনসিসি মাকের্টের দ্বিতীয় তলায় সূত্রপাত ভয়াবহ এই অগ্নিকান্ডে ১ দিন চেষ্টার পর নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস। ততক্ষণে মার্কেটের বেশিরভাগ দোকান পুড়ে যায়। এ ঘটনায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা করছে ফায়ার সার্ভিস।
টাকার বান্ডিল পুড়ে ছাই ব্যবসায়ীর মাথায় হাত
‘আমার সব শেষ। এখন আমি রাস্তার ভিখারি। আল্লাহ চাইলে আবার বাঁচব। নইলে কোনো উপায় নেই। এখন ভরসা শুধু আল্লাহ।’ পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকতে একমাত্র উপার্জনের পথ ছিল পুরনো কাগজের ছোট্ট দোকানটি। কিন্তু সোমবার রাতে গুলশানের ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মার্কেটের ভয়াবহ আগুনে পুড়ে গেছে সেই দোকানটিও। দোকানের ক্যাশে পলিথিনে মোড়া ৭৬ হাজার টাকার একটি বান্ডিল ছিল। বান্ডিলটি পাওয়া গেছে, কিন্তু টাকা পুড়ে অঙ্গার। পুড়ে যাওয়া টাকার বান্ডিল হাতে নিয়ে ডিএনসিসি মার্কেটের সামনে বসে বিলাপ করতে করতে এই কথাগুলো বলছিলেন চল্লিশোর্ধ্ব মনির হোসেন। বেশ কয়েক বছর ধরে পুরনো কাগজের দোকানটি চালাচ্ছিলেন মনির হোসেন। অন্যদিনের মতো সোমবার রাতেও সবকিছু গুছিয়ে বাসায় যান তিনি। দোকানে রেখে গিয়েছিলেন ৭৬ হাজার টাকার একটি বান্ডিল। পলিথিনে মুড়িয়ে। শেষ রাতে খবর পান ভয়াবহ আগুনের। বুকটা তখন মোচড় দিয়ে ওঠে মনিরের। তিনি ছুটে আসেন ডিএনসিসি মার্কেটে। দূর থেকে দেখছিলেন আকাশ ছেয়ে গেছে ধোঁয়ায়। আরো কাছে গিয়ে দেখেন দাউ দাউ করে জ্বলছে মার্কেট। বাজারের যেই জায়গায় তার দোকানটি ছিল, সে অংশ ধসে গেছে।
মঙ্গলবার দিনভর আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসায় ধ্বংসস্তূপের কাছে যাওয়া সম্ভব হয়নি তার। গতকাল সকালে এসে মনির হোসেন নিজের দোকানের জায়গাটি শনাক্ত করেন। পরে খোঁজাখুঁজি করে সন্ধান পান পলিথিনে মোড়ানো টাকার বান্ডিলটি। কিন্তু হায়! এ যে এক বান্ডিল টাকার অঙ্গার। তবে এর গায়ে টাকার অঙ্ক, বাংলাদেশ ব্যাংকের নাম জলছাপের দেখা যায়। ডিএনসিসি মার্কেটের আগুনে মনিরের মতো কয়েকশ’ দোকানির জীবিকা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সহায়-সম্বল হারিয়ে মঙ্গলবার থেকে পাগলপ্রায় এসব দোকানি।
ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক একে দুর্ঘটনা দাবি করলেও শুরু থেকেই ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আগুন লাগাটা ‘পরিকল্পিত’। তারা এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান।
রাজধানীর গুলশান-১ নম্বরের ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মার্কেটে ব্যবসা চালিয়ে যেতে চান বলে দাবি জানিয়েছে পাকা ও কাঁচা মার্কেট দোকান সমিতি। গতকাল দুপুরে ডিএনসিসি মার্কেটের প্রবেশপথে পৃথক সমাবেশ করে দুই সমিতির ব্যবসায়ীরা এ দাবি জানান।
সমাবেশে পাকা মার্কেট দোকান সমিতির কোষাধ্যক্ষ আখতারুজ্জামান বলেন, আমরা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের একটাই দাবি, আমরা এখানে ব্যবসা করতে চাই। যেহেতু তাদের ভবনটি ধসে পড়েনি, তাই তা মেরামত করে ব্যবসা করার সুযোগ দিতে হবে উত্তর সিটি করপোরেশনকে।
আগুন নেভানোর কাজে ফায়ার সার্ভিসের গাফিলতির অভিযোগ করে ব্যবসায়ীরা বলেন, ২২ থেকে ২৩টি ইউনিটের কথা বলা হলেও আসলেই এসেছিল কি না, সে বিষয়ে তদন্ত করতে হবে।
এদিকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত গুলশান-১ ডিএনসিসি মার্কেটের পুড়ে যাওয়া বিভিন্ন দোকান থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে। বাতাস বাড়লে বেড়ে যাচ্ছে ধোঁয়ার মাত্রাও। মার্কেটের অনেক দোকান থেকে মালামাল সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। যেখান থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সেখানে পানি ছিটাচ্ছেন।
দুপুরে ফায়ার সার্ভিসের ইন্সপেক্টর এমরান হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, পানি ছিটানোর কারণে পুড়ে যাওয়া মালামাল স্তূপ আকারে জমাট বেঁধে গেছে। তাই অনেক জায়গায় পানি ঢুকছে না। যেসব জায়গা থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী, খোলা জায়গাসহ ডিএনসিসি মার্কেটটির আয়তন প্রায় ১ লাখ ৮০০ বর্গফুট। পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে বিস্তৃত মার্কেটটির পাশাপাশি দুটি ভবন রয়েছে। পশ্চিম দিকের দোতলা ভবনটি ‘পাকা মার্কেট’ নামে পরিচিত। এটির নিচতলায় ফার্নিচার এবং দ্বিতীয়তলায় পোশাক, জুতা ও খেলাধুলার পণ্য বিক্রির খুচরা ও পাইকারি বাজার। পূর্বাংশে ‘কাঁচা ও সুপার মার্কেট’ নামের ভবনটি চারতলা। এর নিচতলায় কাঁচাবাজারের দোকান ও ওপরের তলাগুলোতে প্রসাধন ও খাদ্যপণ্যের পাইকারি দোকান। ধসে পড়া এই ভবনে ৪০০টি দোকান ছিল।
একাধিক ব্যবসায়ী গতকালও দাবি করেছেন, এটি নাশকতা। ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদই মূল লক্ষ্য। তদন্তের আগেই কি করে বুঝলেন এটি নাশকতা, এমন প্রশ্নের জবাবে দোকান মালিক সমিতির একজন কর্মকর্তা পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, মেয়র সাহেবে তদন্তর আগেই কি করে বললেন এটা নাশকতা বা ষড়যন্ত্র নয়। এ কারণে বিচার বিভাগীয় তদন্তের প্রয়োজন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
রুপম ৫ জানুয়ারি, ২০১৭, ১:৫৬ পিএম says : 0
ব্যবসায়িদের দাবি আমলে নেয়া উচিত।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন