শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষা প্রচলনে রেনেসাঁর প্রয়োজন

প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষা প্রচলনের জন্য আমাদের একটি রেনেসাঁর প্রয়োজন। বিচারপ্রার্থী মানুষ আর আদালতের কাঠগড়ায় অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে চায় না। কারণ যে ভাষায় বিচারকের সঙ্গে তার আইনজীবী কথা বলে বিচারপ্রার্থী হিসেবে সে তা বুঝতে অক্ষম। যে ভাষায় বিচারক রায় দিচ্ছেন, সে তা-ও বুঝতে অক্ষম। তার প্রতি ন্যায় বিচার করা হলো কি-না সেটা তাকে বুঝতে হচ্ছে তার আইনজীবীর দেহভঙ্গী দেখে বা তার কাছ থেকে শুনে। গতকাল সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘উচ্চ আদালতের সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলন’ শীর্ষক মুক্ত আলোচনায় আলোচকরা একথা বলেন।
স্বেচ্ছাসেবী মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশন এর আয়োজনে উক্ত আলোচনায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার এডভোকেট মো: ফজলে রাব্বী মিয়া। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রথম আলোর যুগ্ম-স¤পাদক, মিজানুর রহমান খান। এতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক, ভাষা সংগ্রামী আহমদ রফিক, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের মানবাধিকার কমিটির চেয়ারম্যান জেড আই খান পান্না এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেম মো: ফজলুল হক। মুক্ত আলোচনার পর আলোচকদের বক্তব্যের সার সংক্ষেপ তুলে ধরে দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এআই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ এবং আয়োজনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বর্ণনা করেন হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এডভোকেট মুহাম্মদ শফিকুর রহমান। এছাড়া সমাজের বিভিন্ন ভাষা প্রেমী, আইনজ্ঞ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
ডেপুটি স্পিকার এডভোকেট মো: ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, আমরা সচিবালয়কে এখনো মন্ত্রণালয়ে পরিণত করতে পারিনি। এই ব্যর্থতার কারণে সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন হচ্ছে না। উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষা প্রচলনের জন্য আমাদের একটি রেনেসাঁর প্রয়োজন। বিচারপতি কাজী ইবাদুল হক প্রথম হাইকোর্টে বাংলা ভাষায় রায় প্রদান করেছেন এবং অন্যদেরও বাংলায় রায় লেখায় উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। এজন্য সরকার এবার তাঁকে একুশে পদক প্রদান করেছেন। উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষা প্রচলনের পক্ষে এটা সরকারের এক ধরনের স্বীকৃতি।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, দেশে বাংলা ভাষার প্রচলন না হলে আমরা অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে বঞ্চিত হব। আদালতে যুত্তিতর্ক উপস্থাপন ও রায় লেখা বাংলায় হওয়া প্রয়োজন।
মূল প্রবন্ধে মিজানুর রহমান খান সুপ্রিমকোর্ট কর্তৃক অবিলম্বে উভয় বিভাগের দেয়া রায় বা আদেশের অন্তত অপারেটিভ অংশের বাংলা তরজমা প্রকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ; সুপ্রিম কোর্টে একটি বাংলাভাষা প্রচলন সেল বা বিভাগ করা; সিআরপিসি, সিপিসি, এভিডেন্স অ্যাক্ট, হাইকোর্ট এবং আপিল বিভাগের রুলসের অনুমোদিত বাংলা পাঠ প্রকাশে যথাযথ কর্তৃপক্ষের তরফে যথা উদ্যোগ গ্রহণ এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতার আলোকে আদালতের সর্বস্তরে মাতৃভাষা প্রচলনে একটি সরকারি বিলের খসড়া অবিলম্বে জাতীয় সংসদে উত্থাপন করার সুপারিশ করেন।
মোহাম্মদ আবদুল মোবারক বলেন, সর্বস্তরে রাষ্ট্রভাষা প্রচলনের জন্য ১৯৮৭ সালে আইন করা হলেও সে আইনে আইনটি অন্য সকল আইনের উপর প্রাধান্য পাবে মর্মে বিধান না থাকায় তা মানা হচ্ছে না। তিনি আইন মন্ত্রণালয়কে উক্ত আইন সংশোধন করে আইনটির অন্য আইনের উপর প্রাধান্য নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
জেড আই খান পান্না বলেন, আদালতে যদি বাংলায় উপস্থাপন করা হয় তাহলে আদালত এখন তা গ্রহণ করেন। কোন কোন বিচারপতি বাংলায় রায় লেখেন। আদালত বাংলা আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন না। এক্ষেত্রে আইনজীবীদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। তবে আইন কখনও গরীবদের জন্য হয় না, তা হয় ধনীদের রক্ষার জন্য। আইনের পরিবর্তন দরকার।
স্বাগত বক্তব্যে এডভোকেট মুহাম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, একজন ন্যায় বিচারপ্রার্থী মানুষ হিসেবে, এ জাতির সন্তানরা আর আদালতের কাঠগড়ায় অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে চায় না। কারণ যে ভাষায় বিচারকের সঙ্গে তার আইনজীবী কথা বলে বিচারপ্রার্থী হিসেবে সে তা বুঝতে অক্ষম। যে ভাষায় বিচারক রায় দিচ্ছেন, সে তা-ও বুঝতে অক্ষম। তার প্রতি ন্যায়বিচার করা হলো কি-না সেটা তাকে বুঝতে হচ্ছে তার আইনজীবীর দেহভঙ্গী দেখে বা তার কাছ থেকে শুনে। এটা ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে প্রতীয়মান হয় না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন