বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

রাজধানীতে জঙ্গি আস্তানা থেকে বোমা ও বিস্ফোরক উদ্ধার

প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানী ঢাকা মহানগরীতে জঙ্গিদের আস্তানার সন্ধান পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। মোহাম্মদপুর ও বাড্ডায় অভিযান চালিয়ে জঙ্গি আস্তানা থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক, বোমা, বোমা তৈরির সরঞ্জাম, জিহাদি বইপত্র ও বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় ১৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। মোহাম্মদপুরে একটি আবাসিক এলাকার বহুতল ভবনে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও বোমা উদ্ধারের পর এ ঘটনায় হতবাক হয়ে পড়েন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। জঙ্গিদের আস্তানা নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। তারা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে জঙ্গিরা যেভাবে আস্তানা গড়ে তুলেছে তাতে জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। পুলিশ বলছে, বাসাভর্তি বোমা ও বিস্ফোরক দ্রব্য রয়েছে।
গতকাল শনিবার ওই বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক দ্রব্য এবং বোমা উদ্ধার করে পুলিশ। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের আবাসিক এলাকা নবোদয় হাউজিংয়ের একটি বহুতল ভবনের এক বাসা থেকে উদ্ধারের পর এসব বোমা নবোদয় হাউজিংয়ের একটি ফাঁকা জায়গায় নিষ্ক্রিয় করা হয়। বোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সদস্যরা। এ ঘটনায় দুটি বাড়ির মালিকসহ ১৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাজধানীর উত্তর বাড্ডার সাতারকুলে জঙ্গিদের চাপাতির কোপে গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক ফারুকী আহত হন। তাকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। স্থানীয়দের সহযোগিতায় পুলিশ সেখান থেকে দুই জঙ্গি কামাল ও হিরনকে আটক করে। পরে রাত ১২টার দিকে বাড্ডায় অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মুনিরুল ইসলাম বলেন, আটককৃতরা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। তাদের আস্তানা থেকে ধারালো অস্ত্র ও বিভিন্ন ধরনের পুস্তিকা উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ জানায়, অভিযানে প্রতিটি কক্ষেই বোমা পাওয়া যায়। এর মধ্যে কিছু বোমা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেগুলো ঘটনাস্থলেই নিষ্ক্রিয় করা হয়। এর আগে গতকাল শুক্রবার রাতে মোহাম্মদপুরের ওই বাসাটিতে বিস্ফোরক ও বোমা রয়েছে Ñ এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়। অভিযানের সময় ফ্ল্যাটে কেউ ছিল না। তবে একের পর এক কক্ষে প্রবেশ করে দেখা যায়, দরজাগুলোতে ‘ডেঞ্জার’ লেখা রয়েছে। একপর্যায়ে একটি কক্ষ থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক পাওয়া যায়। এদিকে রাতের বেলায় ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় অভিযান স্থগিত করা হয়। পরে বাসাটি সিলগালা করে পুলিশ পাহারায় রাত পার করা হয়।
পুলিশ বলছে, বাড্ডার যে বাসাটিতে জঙ্গিদের সঙ্গে গোয়েন্দা পুলিশের গোলাগুলি হয়েছে সেটি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) হেডকোয়ার্টার্স এবং মোহাম্মদপুরের বাসাটি তাদের বোমা তৈরির কারখানা। গতকাল এ অভিযানে জঙ্গিদের আস্তানা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটি) প্রধান মনিরুল ইসলাম শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে অভিযান শেষে বাংলা সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান। এর আগে মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান বাসস্ট্যান্ড-সংলগ্ন নবোদয় হাউজিংয়ের ২৮ নম্বর ছয়তলা ভবনের পঞ্চম তলায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও সিটির সদস্যরা একসঙ্গে অভিযান চালান। এই বাসাটি থেকে উদ্ধারকৃত বিস্ফোরক ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম দেখে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা বিস্মিত হয়েছেন।
অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘নবোদয় হাউজিংয়ের ছয়তলা ভবনের পঞ্চম তলার ওই ফ্ল্যাটে বোমা বানানো হতো। সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয় শুক্রবার রাতে। তবে নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ওই রাতে অভিযান বন্ধ রাখা হয়। পরে গতকাল এসব বোমা নিষ্ক্রিয় করা হয়। তিনি বলেন, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় বাড্ডায় আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের দুই জঙ্গিকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় একজন স্বীকার করেন, মোহাম্মদপুরের ওই বাসায় বোমা তৈরি করা হচ্ছে। এরপর রাত ১০টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ওই বাসায় অভিযান চালানো হয়।
পুলিশ জানায়, গত শুক্রবার রাতে বাড্ডায় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের দুজনকে আটক করে তারা। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ মোহাম্মদপুরের ওই বাসা থেকে বোমাগুলো উদ্ধার করে।
কিছুদিন আগে রাজধানীর শাহ আলী থানাধীন একটি বাসায় জঙ্গি আস্তানা থেকে বিপুল পরিমাণ বোমা ও বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করে গোয়েন্দা পুলিশের বোমা বিশেষজ্ঞ এই দলটি। সেখানেও বোমাগুলো উদ্ধারের পর নিষ্ক্রিয় করা হয়। গোয়েন্দাদের ধারণা, জঙ্গিরা একই কায়দায় রাজধানীতে বাসা ভাড়া করে বোমা তৈরির কাজ করছে।
শনিবার দুপুরে বোমা নিষ্ক্রিয়কারী ইউনিটের প্রধান ও গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার সানোয়ার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ওই বাসায় বিস্ফোরক ও বোমা রয়েছে Ñ এমন তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার সন্ধ্যার পর অভিযান চালানো হয়। অভিযানের সময় ফ্ল্যাটে কেউ ছিল না। তবে বাড়ির মালিক আবদুল মালেককে আটক করা হয়েছে। ফ্ল্যাটে ঢুকে দেখা যায়, দরজাগুলোতে ‘ডেঞ্জার’ লেখা। একটি কক্ষে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক পাওয়া যায়। রাতের বেলায় ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় অভিযান স্থগিত করা হয়। পরে বাসাটি সিলগালা করে পুলিশ পাহারায় রাত পার করা হয়।
মনিরুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডিবি (দক্ষিণ) ও সিটি টিম বাড্ডার সাতারকুল সড়কের জিএম বাড়ির ৫৭৭/১ নম্বর বাসার নিচতলায় অভিযান চালায়। এ সময় জঙ্গিরা ডিবি পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালায়, গুলি করে। এতে বাহার উদ্দিন ফারুকী নামে পুলিশের এক পরিদর্শক আহত হয়েছেন। তাকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ওই বাসাটি থেকে দুই জঙ্গি কামাল ওরফে জামাল ও হিরণকে আটক করা হয়েছে। এক জঙ্গি পালিয়ে গেছে। পরে কামালের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মোহাম্মদপুরের বাসাটিতে অভিযান চালানো হয়। কামাল পুলিশকে জানান, তিনি বাড্ডার ওই বাসায় থাকেন না। মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিংয়ের ২৮ নাম্বার বাসার পঞ্চম তলায় থাকেন। এরপর পুলিশ তাকে নিয়ে মোহাম্মদপুরের এই বাসাটিতে অভিযানে যায়। তবে পুলিশ আসার আগেই এখানে থাকা জঙ্গিরা খবর পেয়ে পালিয়ে যায়। পুলিশ সদস্যরা বাসাটির ভেতরে প্রবেশ করে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও বোমা তৈরির বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম দেখতে পান। এরপর ডিবির বোম ডিস্পোজাল টিম ও বোমা বিশেষজ্ঞরা এসে বিস্ফোরকগুলো ঝুঁকিমুক্ত করার চেষ্টা করেন। পুলিশ জানিয়েছে, ‘বিস্ফোরকগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। রাতের অল্প আলোতে বিস্ফোরকগুলো ধ্বংস করা সম্ভব হয়নি। পরে শনিবার এসব বিস্ফোরক দিনের আলোতে ধ্বংস করা হয়।
তিনি বলেন, বাড্ডা থেকে আটক কামাল সহজে এই আস্তানার তথ্য দিতে চায়নি। সে অনেক পরে মুখ খুলেছে। তাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে আমরা মোহাম্মদপুরের এই আস্তানার সন্ধান পাই। মনিরুল ইসলাম বলেন, তিন রুমের ফ্ল্যাটটির প্রতিটি রুমেই বিস্ফোরক ছিল। ওয়ালে ল্যাবের মতো করে কম্পিউটার কম্পোজ করা বিপজ্জনকসহ বিভিন্ন লেখা সাঁটানো রয়েছে। তারা এখানে বোমা তৈরি করত ও প্রশিক্ষণ নিত।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে আমাদের মনে হয়েছে, এটি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের বোমা তৈরির কারখানা। বাড্ডা থেকে আটক দুজন নিজেদের যে নাম বলেছে, তাও তাদের সত্যিকার নাম কিনা আমাদের সন্দেহ রয়েছে। তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করলে এসব বিষয় পরিষ্কার হওয়া যাবে।
মোহাম্মদপুরে জঙ্গিদের ওই ফ্ল্যাটটির বিপরীতের ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। ওই ফ্ল্যাটটি থেকে ভিওআইপি সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে ভিওআইপি ব্যবসা করে আসছিল। তাদের সঙ্গে জঙ্গিদের কোনো যোগসূত্র আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে। তাই তাদের আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মনিরুল ইসলাম।
দুটি অভিযানে মনিরুল ইসলাম নিজেই নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার সঙ্গে ছিলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) শেখ নাজমুল আলম, দক্ষিণ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাশরুকুর রহমান, দক্ষিণ বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) রাজীব আল মাসুদ ও সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল আরাফাত। এছাড়া ছিল বোমা ডিস্পোজাল টিমের বিশেষজ্ঞ দল।
মোহাম্মদপুরে নবোদয় হাউজিংয়ে জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের হেডকোয়ার্টার্স হিসেবে চিহ্নিত বাসা থেকে পাঁচ ধরনের বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) বোমা নিষ্ক্রিয়করণ টিম ও কাউন্টার টেরোরিজম টিমের সদস্যরা সেখানে কাজ করেন। ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, মোহাম্মপুরে যে বিস্ফোরক সামগ্রী পাওয়া গেছে সেগুলো বহুতল ভবন উড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
উল্লেখ্য, জঙ্গি আস্তানা মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান বাসস্ট্যান্ড-সংলগ্ন নবোদয় হাউজিংয়ের ২৮ নম্বর বাসায় শুক্রবার অভিযান চালায় ডিবি। শুক্রবার রাত ১১টার দিকে অভিযান শুরু হয়। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত সন্দেহভাজন ১৯ জনকে আটক করেছে ডিবি পুলিশ। তবে তাদের নাম-ঠিকানা এখনও জানা যায়নি। ডিবি সূত্রে জানা গেছে, মোহাম্মদপুরের এ বাসাটিতে জঙ্গিরা প্রশিক্ষণ নিতেন এবং বোমা তৈরি করতেন। এ বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয়ের কাজ করছে পুলিশ। এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাজধানীর উত্তর বাড্ডার সাতারকুলে জঙ্গিদের চাপাতির কোপে গোয়েন্দা পুলিশের এক পরিদর্শক আহত হন। এ হামলার ঘটনায় বাড্ডা থেকে দুজনকে আটক করে পুলিশ। তারা হচ্ছে কামাল আর হিরন।
রাত ১২টার দিকে বাড্ডায় অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মুনিরুল ইসলাম বলেন, আটককৃতরা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। তাদের আস্তানা থেকে ধারালো অস্ত্র ও বিভিন্ন ধরনের বই উদ্ধার করা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, আটক হওয়া কামালের দেওয়া তথ্যমতে মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিংয়ের ওই বাসায় অভিযান শুরু করে ডিবি পুলিশ। বাড্ডা হচ্ছে আনসারুল্লাহ বাহিনীর প্রধান কার্যালয় আর মোহাম্মদপুর হচ্ছে তাদের বিস্ফোরক বানানোর কারখানা। ওই বাসাটি জঙ্গিরা প্রশিক্ষণ ও বোমা তৈরির কাজে ব্যবহার করে আসছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন