কোর্ট রিপোর্টার : শিশু গৃহকর্মী নির্যাতনের মামলায় স্ত্রী জেসমিন জাহান নিত্যসহ ক্রিকেটার শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। একই সঙ্গে আগামী ২০ মার্চ সাক্ষ্য গ্রহণ শুরুর জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে। গতকাল ঢাকার ৫ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের বিচারক তানজিনা ইসমাইল এ আদেশ দেন। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি আলি আসগর স্বপন সাংবাদিকদের জানান, জামিনে থাকা আসামি শাহাদাত ও তার স্ত্রী জেসমিন জাহান নিত্য আদালতে হাজির হন। পরে তাদের মামলার অভিযোগ পাঠ করে শোনানো হয়। এসময় তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। ফলে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। মামলার অভিযোগপত্রে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৪-এর (২) খ ধারায় শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে এই আসামিদের বিরুদ্ধে। অভিযোগপত্রে ১২ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
এর আগে গত ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কালশী থেকে ক্রিকেটার শাহাদাতের গৃহকর্মী মাহফুজা আক্তারকে (১১) মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে এক সাংবাদিক বাদী হয়ে রাজধানীর মিরপুর থানায় মামলা করেন। এরপরে মাহফুজা আক্তারকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে আদালতে গিয়ে মাহফুজা আক্তার জাবানবন্দি দেয়।
মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, ক্রিকেটার শাহাদাতের বাসায় কাজ করত মাহফুজা আক্তার। কাজে ভুল হলে প্রথম দিকে তাকে ধমক দেওয়া হতো। আস্তে আস্তে থাপ্পড়, ঘুষি মারা শুরু হয়। পরে মারতে মারতে চার-পাঁচটি ডালঘুটনি ভেঙেছে। ভাতের চামচ দিয়েও মারত। প্লাস্টিকের চামচও ভেঙেছে কয়েকটা। এমনকি প্রায় আমাকে রুটি বানানোর বেলুন দিয়ে মারত। শাহাদাত হোসেনের বউ কাঠের খুন্তি গরম তেল থেকে তুলে আমার হাঁটুতে ছ্যাঁকা দিত। এ বিষয়ে মাহফুজা বলেন, খুব জোরে গলা টিপে ধরত শাহাদাত। মারা যাওয়ার উপক্রম হইতাম। আমার চোখমুখ ঘোলা হয়ে আসত। তখন জোরে শ্বাস নিতে থাকতাম। এভাবে শ্বাস নেওয়ার কারণেও থাপ্পড় দিত শাহাদাত। এখনো আমার গলায় দাগ আছে। তার স্ত্রীও আমাকে গলা টিপে ধরত। ওরা আমাকে মেরে পা ভেঙে দিয়েছে। আমার বাঁ হাতের একটা আঙুলও ভাঙা। এছাড়া আমাকে মারার পর ওরা ভয় পাইত, আমি যদি গেট খুলে পালাই। এ জন্য বাথরুমে ছিটকিনি আটকায় রেখে বাথরুমে রাতে ঘুমাইতে দিত। আর সারা দিন আমাকে গান গাইতে বলত, যাতে মানুষজন বুঝতে পারে, আমি ঘরে আছি। নির্যাতনের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে মাহফুজা বলে, একদিন বাচ্চার (শাহাদাত দম্পতির নয় মাস বয়সী একটা শিশু আছে) সুজি রান্না করছিলাম। কিন্তু দেরি হয়েছে বলে শাহাদাতের বউ আমাকে মারতে শুরু করে। আর শাহাদাত রুটি বানানোর বেলুন নিয়ে এসে আমাকে মারধর শুরু করে। ডান পায়ের হাঁটুর নিচে বেলুনের লাঠির অংশ লেগে গর্ত হয়। রক্ত বের হয়। তারপর সেখানে ন্যাকড়া বেঁধে তাদের বাসায় কাজ করতে থাকি। এ ছাড়া শাহাদাত আমার চোখে ঘুষি দিত। তাদের নির্যাতনে আমার বাঁ চোখ প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তারা আমাকে ঠিকমতো খেতে দিত না। তাই নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে গত ৬ সেপ্টেম্বর শাহাদাতের বাসা থেকে পালিয়ে যাই। পরে এ মামলার তদন্ত করে মিরপুর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক শফিকুর রহমান গত বছর ২৯ ডিসেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে শাহাদাত দম্পতির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন