শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বিএনপির সকল কর্মকান্ড চলছে কাউন্সিল ঘিরে

রাজনৈতিক কৌশল ইউপি নির্বাচন

প্রকাশের সময় : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:২৭ এএম, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬

আফজাল বারী : বিএনপির সকল কর্মকান্ড চলছে জাতীয় কাউন্সিল ঘিরে। আগামী ১৯ মার্চ কাউন্সিল। দিনক্ষণ নির্ধারণ হয়েছে অনেক আগেই, কিন্তু স্থান কোথায়? এ প্রশ্ন খোদ দলটির শীর্ষ নেতা বেগম খালেদা জিয়ারও। তবে বসে নেই বিএনপি। শেষ মুহূর্তে স্থান পাবেন-এমনটি ধরেই সবকিছু ঠিকঠাক করে রাখছে আগেভাগেই। সফল করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছেন উপ-কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। প্রতিদিনই তারা কোনো না কোনো কমিটি বৈঠক করছেন দলের চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে।
এদিকে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ফলাফল কী হবে তা আগে থেকেই জানা আছে মনে করেন বিএনপি প্রধান। তবে রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে তাতে অংশগ্রহণ করেছে বিএনপি। নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখাসহ সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং আওয়ামী লীগের বর্তমান রাজনৈতিক চরিত্র কী তা আবারো জানান দিতেই এই কৌশল বলে দলটির সিনিয়র নেতাদের ভাষ্য।
বিএনপির একাধিক সূত্র ইনকিলাবকে জানিয়েছে, দলের চেয়ারপার্সন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের পরামর্শক্রমে উপ-কমিটিগুলো সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নিজ নিজ কাজগুলো সেরে নিচ্ছে। ১১ উপ-কমিটির বেশিরভাগই বৈঠক করেছে। কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করছে কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে। তিনি গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে নিজ কার্যালয়ে প্রথম বৈঠক করেছেন। তাতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
আগামী ১৯ মার্চ দলটির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল। গত ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কাউন্সিলে প্রায় তিন হাজার কাউন্সিলর, ১২ হাজার ডেলিগেটসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত থাকবেন। প্রতি তিন বছর পরপর কাউন্সিল করার বিধান গঠনতন্ত্রে থাকলেও প্রতিকূলতার কারণে তা সম্ভব হয় না। তবে জাতীয় নির্বাচনের মতোই দলের জন্য একটি বড় কাজ এটি। দলের চেয়ারপার্সন, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। একই সাথে দলের মহাসচিবও এই কাউন্সিলের মাধ্যমেই নির্বাচিত হয়ে থাকেন। দীর্ঘদিনের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আসন্ন কাউন্সিলের মাধ্যমে ভারমুক্ত হবেনÑএ প্রত্যাশা কাউন্সিলর ছাড়াও তৃণমূল নেতাকর্মীদেরও।
এবারের কাউন্সিলের অভ্যর্থনা উপ-কমিটির আহবায়ক হিসেবে রয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি দলের সাংগঠনিক জেলা-উপজেলাসহ বিভিন্ন কমিটি দেখভাল করছেন। যেখানে কমিটি নেই সেখানে কাউন্সিলর কে হবেন, বিরোধ থাকলে তা নিষ্পত্তি করে কাউন্সিলর নির্বাচিত করার দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। ইতোমধ্যে স্থানীয়ভাবে সম্মেলন করে, ঢাকায় ডেকে এনে বেশ কয়েকটি জেলা-উপজেলার কমিটিসহ কাউন্সিলর নির্বাচন করেছেন।
আরেক গুরুত্বপূর্ণ কমিটি দলের ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র সংশোধন উপকমিটি। গঠনতন্ত্রকে সময়োপযোগী ও নেতাকর্মীদের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটাতে পরিবর্তন, বিধি-বিধান সংযোজন-বিয়োজনের কাজ করতে হয়। এই কমিটির আহ্বায়ক প্রবীণ রাজনৈতিক সাবেক তথ্যমন্ত্রী তরিকুল ইসলাম। তিনি তার কমিটির সদস্যদের নিয়ে ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কাজ প্রায় শেষ করেছেন। ইতোমধ্যে দলের পাহাড়সম বাধা বলে বিবেচিত ‘এক নেতার এক পদ’ সংশোধনীটি সংযোগন করেছেন। সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে সরাসরি নির্বাচনের বিষয়টিও ইতোমধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও সহযোগী ও সমর্থক সংগঠনগুলোর অবস্থান নিয়েও নির্দেশনা আসছে দলীয় গঠনতন্ত্রে।
কমিটি সংশ্লিষ্ট এক সদস্য জানান, সকল কমিটির দেখাশুনা করলেও এই কমিটিতে সরাসরি সম্পৃক্ত বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া । তার নির্দেশনাতেই পরিবর্তন-পরিবর্ধন আসছে। সম্প্রতি তাঁতী দলের এক অনুষ্ঠানে তিনি ঘোষণা দিয়েছেনÑএকাধিক পদধারণকারী নেতাকে পছন্দসই পদটি রেখে বাকিগুলোতে অন্যদের স্থান দিতে হবে। দলে অনেক কর্মী আছে যারা নেতা হওয়ার যোগ্য।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উপকমিটির আহ্বায়ক সাংবাদিক শফিক রেহমান। গতকাল ফোনে তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার দায়িত্ব পেয়েছি। আগামী সপ্তাহে কমিটির বৈঠক হবে। সেখান থেকে পরামর্শ নিয়েই পুরোদমে কাজ করা হবে। তবে এখন প্রস্তুতি চলছে। তিনি জানান, বন্ধু রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল ছাড়াও রাজনৈতিক সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের দাওয়াত জানানো হবে। আশা করা হচ্ছে তারা বিএনপির কাউন্সিলে আসবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত কাউন্সিলে বিদেশীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চীনের কমিউনিস্ট পার্টি, ব্রিটিশ হাউজ অব কমন্স, পাকিস্তান ক্ষমতাসীন দল পিপলস পার্টি, ভারত, মিশর, শ্রীলঙ্কা ক্ষমতাসীন দল ফ্রিডম পার্টি, তুরস্ক, কানাডার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি, সুইজারল্যান্ডে ও মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা। এবার বিদেশী অতিথির সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
প্রকাশনা উপকমিটির আহ্বায়ক ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান ইনকিলাবকে বলেন, এখনো স্থান নির্বাচন না করায় কিছুটা উদ্বেগ রয়েছে। তবে আমাদের দলের চেয়ারপার্সনও দৃঢ়তার সাথেই জানিয়ে দিয়েছেন, প্রয়োজনে তার বাসা বা কার্যালয়ে কাউন্সিল হবে। আমি আগেও প্রতীকী অর্থে বলেছি, বটতলা, গাছতলা যেখানেই হোক কাউন্সিল হবেই।
প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি জানান, গতবারের চেয়ে এবার আরো সুন্দরভাবে প্রকাশনা ও সংশ্লিষ্ট কাজগুলো হবে। আজ এই কমিটির বৈঠক আছে, কমিটির সদস্য ছাড়াও প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ, ড. মাহফুজউল্লাহসহ বিজ্ঞজনরা উপস্থিত থাকবেন। তাদের পরামর্শও নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
ড্রাফটিং উপকমিটির আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম খান। তিনিও প্রাপ্ত দায়িত্ব প্রায় শেষ করেছেন বলে জানা গেছে। কাউন্সিলে চেয়ারপার্সনের বক্তব্য, শোক প্রস্তাবসহ ড্রাফটসংক্রান্ত কাজ করছেন দিবারাত্রি।
সারা দেশের কাউন্সিলরদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষাসহ সমস্যাবলী জেনে নিচ্ছেন দফতর ও যোগাযোগ উপ-কমিটির আহ্বায়ক যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। কাউন্সিলর তালিকা চূড়ান্ত হওয়া এবং ভেন্যু পাওয়ার পরই চিঠি দেয়া শুরু করবেন তিনি।
সারা দেশ থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী ও আমন্ত্রিত অতিথিদের সুষ্ঠুভাবে থাকা, খাওয়াসহ আনুষঙ্গিক বিষয় নিয়ে পরিকল্পনা করেছেন শৃঙ্খলা ও সেবা উপ-কমিটির আহ্বায়ক আসম হান্নান শাহ, ব্যবস্থাপনা ও প্রচার উপ-কমিটির আহ্বায়ক গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও চিকিৎসা সেবা উপকমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন। সাংস্কৃতিক উপকমিটির আহ্বায়ক গাজী মাজহারুল আনোয়ারও তেমনই প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Aminul Islam ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:৪৫ পিএম says : 0
Go Ahead BNP.
Total Reply(0)
মহিউদ্দিন ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:৪৭ পিএম says : 0
কেউ কেউ কাউন্সিল বানচাল করার চেষ্টা করবে, সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন