মোঃ আবু তালহা : মানবজাতীর জন্য আদর্শরূপে রাসূল (সা.) আগমন করেছেন। রাসূল (সা.) উম্মতদের জন্য উত্তম আদর্শ। মহান আলাহতায়ালা বলেন, “রাসূল (সা.)-এর মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ”। (সূরা আহযাব-২১)
জীবন যাপন : রাসূল (সা.) সর্বদা সাদাসিধা জীবন-যাপন করতেন। তিনি সকলের সাথে মিলেমিশে কথা বলতেন। হজরত আবু মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, “রাসূল (সা.)-এর কাছে এক লোক এসে কথা বলছিলেন, তখন লোকটি ভয়ে কাঁপছিল। রাসূল (সা.) এই দৃশ্য দেখে বলতে লাগলেন, তুমি স্থির হও! আমি কোন সম্রাট নই, আমি কুরাইশি এক মহিলার সন্তান যে শুকনা গোশত খেত”। (মুসতাদকে হাকিম)
খাবার গ্রহণ : রাসূল (সা.) কখনও বাম হাতে খাবার গ্রহণ করতেন না এবং বাম হাতে খাবার খেতে নিষেধ করতেন। হজরত জাবির (রা:) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, “তোমাদের কেউ যেন বাম হাতে খাবার গ্রহণ না করে”। (মুসলিম-৫৪৬৭)
প্রিয় খাদ্য : রাসূল (সা.) তরকারীর মাঝে ছারিদ তরকারি খুব ভালবাসতেন। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, “রাসূল (সা.)-এর কাছে সবচেয়ে প্রিয় তরকারি ছিল ছারিদ”। (আবু দাউদ-৩৭৮৩)
তাছাড়া রাসূল (সা.) মিষ্টি ও মধু খেতে খুব ভালবাসতেন (শামায়িলে মুহাম্মদী)
উপহার গ্রহণ : রাসূল (সা.) উপহার দ্রব্য গ্রহণ এবং অন্যকে উপহার দিতেন। কেউ তাকে উপহার দিলে কখনো তা ফিরিয়ে দিতেন না। তবে সদকার দ্রব্য হলে তা ভক্ষণ করতেন না। (বুখারী-২৪৩৭)
ঘুমানোর সময় : রাসূল (সা.) ঘুমানোর সময় ডান হাত ডান গ-ের নিচে রেখে দুয়া পড়ে ঘুমাতেন এবং ঘুম থেকে উঠে দুয়া পড়তেন। (আবু দাউদ-৫০৪৫)
ভাষা : রাসূল (সা.) ধীরস্থিরভাবে কথা বলতেন। যে কেউ ইচ্ছা করলে তা গণনা করতে পারত। (বুখারী-৩৩৭৪)
তাছাড়া রাসূল (সা.) কখনো অশ্লীল কথা বলতেন না এবং কটুভাষী ছিলেন না। কখনো কারো সাথে তিনি অসদাচরণ করেননি। বাজারে গেলে কখনো শোরগোল করতেন না। অন্যায়ের প্রতিশোধ অন্যায়ের মাধ্যমে নেননি। বরং উদার মনে ক্ষমা করে দিতেন। (তিরমিযী-২০১৬)
বসা : রাসূল (সা.) বলতেন খুব স্বাভাবিকভাবে আবু সাঊদ খুদরী (রা.) হতে বর্ণিত রাসূল (সা.) যখন মসজিদে বসতেন তখন দুই হাত দ্বারা পায়ের নলাকে বেড়িয়ে ধরে বসতেন”। (আবু দাউদ-৪৮৪৬)
হাসি : রাসূল (সা.) সর্বদা হাস্যমুখ থাকতেন। তার হাসি ছিল মুচকি। হজরত আব্দুলাহ ইবনুল হারিস (রা.) বলেন, “রাসূল (সা.) কেবল মুচকি হাসতেন”। (তিরমিযী-৩৬৪২)
সাহায্য করা : রাসূল (সা.) দুর্বলকে সাহায্য করতেন। রাস্তায় কোন পথিক পেলে তাকে নিজের সওয়ারীতে আরোহণ করিয়ে নিয়ে যেতেন। এবং তার জন্য দোয়া করতেন। (বাইহাকী-১০৪৮৭)
ব্যক্তিগত কাজ: রাসূল (সা.) নিজ হাতে নিজের কাজ সম্পাদন করতেন। বকরী থেকে নিজ হাতে দুধ দোহন করতেন। নিজের কাপড় নিজেই সেলাই করতেন। নিজের জুতা নিজেই জোড়া লাগতেন। কারো মুখাপেক্ষী হয়ে বসে থাকতেন না। (শামায়িলে মুহাম্মদী-পৃষ্ঠা ৩৫)
সালাম প্রদান : রাসূল (সা.) কোথাও গেলে মানুষদের প্রথমে সালাম দিতেন। এমনকি ছোটদেরকে সালাম দিতেন। (মুসলীম-৫৬২৮)
জামা পরিধান : হজরত আব্দুলাহ ইবনুল হারিস (রা.) বলেন, “রাসূল লম্বা জামা, জুব্বা, পাগড়ী, লুঙ্গী, চাদর, ব্যবহার করতেন। তবে তিনি জামা পরিধান করতেন। হজরত উম্মে সালমা (রা.) বলেন, “পোশাকসমূহের মধ্যে রাসূল (সা.)-এর কাছে প্রিয় ছিল জামা”।(আবু দাউদ-৪০২)
পাগড়ী পরিধান : রাসূল (সা.) নিয়মিত পাগড়ী পরিধান করতেন। হজরত জাবির (রা.) বলেন, “রাসূল (সা.) মক্কা বিজয়ের দিবসে যখন মক্কায় প্রবেশ করলেন তখন তার মাথায় কালো পাগড়ী ছিল”। (নাসাঈ-৫৩৬০)
জুতা ব্যবহার : রাসূল (সা.) ফিতাবিশিষ্ট জুতা ব্যবহার করতেন। হজরত কাতাদাহ (রা.) বলেন আমি আনাস (রা.)কে জিজ্ঞাসা করলাম রাসূল (সা.)-এর জুতা কেমন ছিল? তিনি বললেন, তার উভয় সেন্ডেলে দুইটি করে চামড়ার ফিতা ছিল”। (বুখারী-৫৫২০)
সুরমা ব্যবহার : রাসূল (সা.) সুরমা ব্যবহার করতেন। হজরত জাবির (রা.) হতে বর্ণিত, “রাসূল (সা.) বলেন, তোমরা ঘুমানোর পূূর্বে অবশ্যই ইছমিদ সুরমা ব্যবহার করবে, কেননা তা চক্ষু পরিষ্কার ও উজ্জ্বল রাখে এবং পশম গজাতে সহায়ক হয়”। (নাসায়ী-৫১২৮)
আতর ব্যবহার : তিনি আতর সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। হজরত আনাস (রা.) বলেন, “রাসূল (সা.)কে কেউ সুগন্ধি উপহার দিলে তিনি কখনো তা ফিরিয়ে দিতেন না’।(তিরমিযী-২৭৮৯)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন