মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বেতন বাড়ল বিচারকদের মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব অনুমোদন

প্রকাশের সময় : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : নিম্ন আদালতের বিচারকদের বেতন ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ল। অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোর সঙ্গে সমন্বয় করে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস সদস্যদের ‘বেতন, ভাতা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণ’ সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে নিম্ন আদালতের সহকারী জজ (প্রবেশ পদ) থেকে সর্বোচ্চ সিনিয়র জেলা জজদের বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, জাতীয় বেতন স্কেলে যে সুপারিশ তার আলোকেই একটু পুনর্বিন্যাস করে জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫’র আলোকে জুডিশিয়াল সার্ভিস সদস্যদের বেতন-ভাতা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০০৯ সালে তাদের যে বেতন স্কেল ছিল তার সঙ্গে আনুপাতিক হারে বাড়িয়ে সমন্বয় করা হয়েছে।
২০০৯ সালে সিনিয়র জেলা জজদের বেতন স্কেল ছিল ৪০ হাজার টাকা, তা বাড়িয়ে ৭৮ হাজার টাকা করা হয়েছে। তারা সচিবদের স্কেলে বেতন পাবেন। জাতীয় বেতন স্কেলে তাদের এ বেতন ৮৪ হাজার টাকা সুপারিশ করা হয়। জেলা জজ ও সমপর্যায়ের (সিনিয়র জেলা জজ নন, চাকরি ৫ বছর পূর্তি হয়নি) কর্মকর্তাদের বেতন স্কেল ৩৬ হাজার ৯০০ থেকে ৩৯ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত ছিল, তাদের ৭০ হাজার ৯২৫ টাকা থেকে ৭৬ হাজার ৩৫০ টাকা পর্যন্ত করা হয়েছে। জাতীয় বেতন স্কেলে তাদের বেতন সুপারিশ করা হয় ৭৮ হাজার থেকে ৮১ হাজার ১১২ টাকা।
অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ সমপর্যায়ের ক্ষেত্রে আগে স্কেল ছিল ৩২ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৩৭ হাজার টাকা, তা ৬২ হাজার ৩৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার ৮৮০ টাকা করা হয়। এ পর্যায়ে জাতীয় বেতন স্কেলের সুপারিশ ছিল ৭০০০০ হাজার থেকে ৭৮ হাজার ৪৪০ টাকা। যুগ্ম জেলা জজদের ক্ষেত্রে বেতন স্কেল ছিল ২৮০০০ হাজার থেকে ৩৭ হাজার টাকা। তা করা হয়েছে ৫৪ হাজার ৩৭০ টাকা থেকে ৭৪ হাজার ৪৬০ টাকা। জাতীয় বেতন স্কেলের সুপারিশ ছিল ৬২০০০ হাজার থেকে ৭৮ হাজার ৪৫০ টাকা। সিনিয়র সহকারী জজদের বেতন স্কেল ছিল ২৩ হাজার থেকে ৩৪ হাজার ২০০ টাকা, এখন সুপারিশ করা হয়েছে ৪৪ হাজার ৪৫০ থেকে ৭২ হাজার ২১০ টাকা। জাতীয় বেতন স্কেলের সুপারিশ ছিল ৫২০০০ হাজার থেকে ৭৬৯৭০ টাকা। সহকারী জজদের (প্রবেশ পদ) ১৬ হাজার থেকে ২৫ হাজার ৬০০ টাকা বেতন স্কেল ছিল, ৩০ হাজার ৯৩৫ থেকে ৬৪ হাজার ৪৩০ হাজার টাকা করা হয়েছে। জাতীয় বেতন স্কেলের সুপারিশ ছিল ৩৫ হাজার থেকে ৩৫০০০ হাজার থেকে ৭৩ হাজার ৭৪০ টাকা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জাতীয় বেতন স্কেলে যে হারে বেতন বেড়েছে সে আলোকে নিম্ন আদালতের বিচারকদের বেতনও সুপারিশ করা হয়েছে, সর্বোচ্চ বেতন বেড়েছে ১২৩ শতাংশ। এ হিসাবে জ্যেষ্ঠ জেলা জজদের বেতন ৯৫ শতাংশ, জেলা জজদের ৯৭ দশমিক শূন্য এক শতাংশ, অতিরিক্ত জেলা জজদের ৯৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ, যুগ্ম-জেলা জজদের ৯৪ দশমিক ১৮ শতাংশ, জ্যেষ্ঠ সহকারী জজদের ৯৩ দশমিক ২৬ শতাংশ এবং সহকারী জজদের বেতন ৯৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ বাড়ছে।
অন্য বেতন স্কেলের মতোই ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে এই কাঠামো বাস্তবায়ন হবে। মূল বেতনের বকেয়া তারা পাবেন। ২০১৫ সালের ৩০ জুন যে ভাতা পেতেন, সে হারে তারা ভাতা পাবেন। এছাড়া নিম্ন আদালতের বিচারকরাও মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাংলা নববর্ষ ভাতা পাবেন। জুডিশিয়াল, চিকিৎসা, বাড়িভাড়া, উৎসব, শ্রান্তি-বিনোদন, পোশাক, কার্যভার, ভ্রমণ ভাতা পাবেন তারা।
পোশাক ভাতা ৫ হাজার টাকা, কার্যভার ভাতা ১৫০০ টাকা, সিনিয়র জেলা জজরা আপ্যায়ন ভাতা এক হাজার টাকা, অন্য জেলা জজরা ৯০০ টাকা, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ৬০০ টাকা ভাতা পাবেন। চৌকি ভাতা, ৩০ শতাংশ প্রশিক্ষণ ভাতা। মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস, আবাসিক টেলিফোন ও মোবাইল সুবিধা রয়েছে বিচারকদের। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, অবসর সুবিধা পেনশন ৮০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা হয়েছে। ১২ মাসের পিআরএল, ১৮ মাসের ছুটি নগদায়ন সুবিধা, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতো পদোন্নতি সুবিধা পাবেন।
বৃক্ষ সংরক্ষণ আইন ও চা আইনের খসড়া অনুমোদন
পরিবেশের স্বার্থে দেশের পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী গাছ সংরক্ষণে মন্ত্রিসভা ‘বৃক্ষ সংরক্ষণ আইন-২০১৬’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।
সচিব বলেন, জীববৈচিত্র্য যথাযথভাবে সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে প্রাকৃতিক বনাঞ্চল ছাড়াও সংরক্ষিত ও পুরনো বন ও গাছের আবর্তনকাল উত্তীর্ণের পরও সংরক্ষণ করতে হবে। মন্ত্রিসভা ব্যাপক পর্যালোচনা করে বৃক্ষ সংরক্ষণ আইনের খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আইনটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আবার মন্ত্রিসভায় আনা হবে।
সোমবারের মন্ত্রিসভা বৈঠকে চা আইন ২০১৬-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
সচিব বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সামরিক শাসনামলে জারি করা আইন নতুন করে বাংলায় প্রণয়নের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাই ১৯৭৭ সালের চা আইনকে ইংরেজি থেকে বাংলা ভাষায় রূপান্তর করে পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। নতুন আইনে কিছু সংজ্ঞা যোগ করা ছাড়াও কিছু সংজ্ঞাকে স্পষ্ট করা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তিনি বলেন, এটি মূলত চা বোর্ডের গঠন ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত আইন। আইন লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ দুই বছরের জেল অথবা ৫০ হাজার টাকা অর্থদ-ের বিধান রাখা হয়েছে।
আগের ইংরেজি অধ্যাদেশ বাংলায় রূপান্তর করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, চা বোর্ডের ব্যবস্থাপনার জন্য এই আইনে বোর্ডের গঠন কী হবে, সদস্য কারা হবে, প্রধান নির্বাহী ও বোর্ডের কাজকর্ম কী হবে, চা চাষের প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা যুক্ত রয়েছে।‘চা নিলাম, চা বোর্ড করে থাকে। চা উৎপাদন ও বীজ রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ কিভাবে হবেÑ নিবন্ধিত কারখানা ছাড়া চা প্রস্তুতকরণ নিষিদ্ধ, কিছু দ-ের বিধান আছে। তবে আইনে চা শ্রমিকদের মজুরি বা চা শ্রমিকের বিষয়টি উল্লেখ করা নেই বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
আইনটি মূলত চা বোর্ড কিভাবে চলবে- তার গাইড করার জন্যই। আইনে চায়ের সংজ্ঞা বড় করা হয়েছে, চায়োত্তর চা বর্জ্য ব্যতীত সাইনেনসি বা কমিলিয়া পাতা, কিংবা বিধি দ্বারা নির্ধারিত ও অন্য যে কোনো গাছের পাতা ও কচি কা- হতে চা নামে উৎপাদিত পণ্য এবং সবুজ চা (গ্রিন টি) এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নতুন বিষয়গুলোর মধ্যে ক্ষুদ্রায়তন চা বাগান, কাস্টম কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন