মুহাম্মদ শফিকুর রহমান : দোয়া কবুলের পূর্বশর্ত হালাল রুজি। হারাম পথে অর্জিত উপার্জনের রুজি পরিহার করতে হবে। অথচ আমরা তা কতটুকু করছি। উপার্জনের যেন কোন বালাই নেই। নেই বিচার বিবেচনা। দুনিয়ার সমৃদ্ধির জন্য হারাম পথে উপার্জন করা হচ্ছে। এই অবৈধ উপার্জন নিয়ে অহঙ্কারের শেষ নেই। কে কতটা হারাম পথে উপার্জন করলো তা নিয়ে আলোচানার শেষ নেই। অবশ্য হাদিসে বলা হয়েছে- মানুষের নিকট এমন এক জমানা আসবে যখন তারা হালাল-হারাম বাছবিচার না করে উপার্জন করবে। (বুখারী শরীফ)। না জানি সে জমানা চলে এসেছে কিনা?
আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন- হে মানবজাতি। পৃথিবীতে যা কিছু বৈধ ও পবিত্র খাদ্যবস্তু রয়েছে তা হতে তোমরা আহার কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্যে শত্রু (সূরা বাকারা, আয়াত ১৬৮)। পবিত্র খাদ্যবস্তু মানে হালার খাবার। সৎভাবে উপার্জিত অর্থের কেনা খাবার। পবিত্র বস্তু আহার এবং আল্লাহপাকের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে। হে ঈমানদারগণ, তোমাদিগকে আমি যেসব পবিত্র বস্তু দিয়েছি তা হতে আহার কর এবং আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর যদি তোমরা শুধু তারই ইবাদত কর (সূরা বাকারা, আয়াত ১৭২)। শুধু নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত আদায়ই ইবাদত নয়। বরং আল্লাহ ও রাসূল (সা.) নির্দেশিত পথে জীবনযাপন করলে পুরো জীবনটাই ইবাদত বলে গণ্য হবে। ইসলাম পরিশ্রম করাকে গুরত্ব দেয়। পরিশ্রম করে হালাল উপার্জন করতে হবে। আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন- নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে (হালাল উপার্জনের জন্য) ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সূরা জুমআ, আয়াত ১০)। নামাজের পরই আল্লাহতায়ালা হালাল রুজির সন্ধানে বের হবার নির্দেশ দিয়েছেন। এর মানে আবার এটা নয়। রুজির সন্ধানে এমনই ব্যস্ত হলেন। নামাজই পড়া হল না। রাসূল (সা.) সৎভাবে উপার্জন করেছেন। তিনি পরিশ্রম করতেন। যখন রাসূল (সা.) হযরত খাদিজা (রা.)-কে বিবাহ করলেন। তখন কিন্তু তার প্রচুর ধন-দৌলত ছিল। তারপরেও তিনি বসে থাকেনি। ব্যবসার জন্য সময় দিয়েছেন। তার হালাল উপার্জন মানুষকে অকাতরে দান করেছেন। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, সৎভাবে জীবিকা অর্জন করা অন্যতম ফরজ। (বায়হাকি)। রাসূল (সা.) আরো বলেছেন, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং হালাল জীবিকা অন্বেষণে সর্বাত্মক চেষ্টা কর। ইহা পাইতে বিলম্ব হলে আল্লাহর অবাধ্য হইও না। (বায়হাকি)। রাসূল (সা.) আরো বলেছেন- আল্লাহ পবিত্র এবং তার কাছে পবিত্র জিনিসই গ্রহণযোগ্য। হাদিসে আছে, কিয়ামতের দিন সকল মানুষকে ৫টি প্রশ্ন করা হবে। তার মধ্যে দুটি প্রশ্ন হলোÑ কি উপায়ে অর্থ সঞ্চয় করেছিলে এবং আর কীভাবে তা ব্যয় করেছিলে? হারাম পথে অর্জিত অর্থের খাবার খেলে ইবাদত কবুল তো হবেই না বরং হাদিসে আছে, দেহের যে অংশ হারাম মাল দ্বারা পালিত হয়েছে তা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। হারাম পথের উপার্জন জাহান্নামে যাবার পথকে সহজ করে দিবে। রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন, যে বান্দা হারাম সম্পদ উপার্জন করে, যদিও সে সদকা করে তা কবুল হবে না। আর যদি ব্যয় করে তবে তাতেও কোনো বরকত হবে না। আর যদি রেখে মারা যায় তা জাহান্নামে যাওয়ার পাথেয় হবে। আল্লাহতায়ালা মন্দ (কাজ) দ্বারা মন্দকে মিটিয়ে দেন না, হ্যাঁ ভালো কাজ দ্বারা মন্দকে মিটিয়ে দেন, নিঃসন্দেহে নাপাকীকে নাপাকী দূরীভূত করতে পারে না। (মুসনাদে ইমাম আহমদ হাম্বল পৃষ্ঠা-৩৬৭২)
তাই হারাম-হালাল বুঝে আমাদের উপার্জন করা দরকার। যদি না আমরা জান্নাতের প্রত্যাশা করি। আল্লাহ এবং রাসূল (সা.)-কে ভালোবেসে থাকি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন