মোহাম্মদ খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী : আলহাজ হজরত মাওলানা এম এ মান্নান (রহ) ছিলেন বহু ভাষাবিদ এবং বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এক জীবন্ত প্রতিষ্ঠান, যাকে বহু মাতৃক প্রতিষ্ঠান বলে বলা যায়। অর্থাৎ মাওলানা মান্নান (রহ) ব্যক্তি হিসেবে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রবর্তকরূপে খ্যাতির অধিকারী ছিলেন। তিনি ছিলেন জমিয়াতুল মোদার্রেছীন, বাংলাদেশের পুনর্জীবন দানকারী আজীবন সভাপতি, মসজিদে গাউসুল আজম ও মাদ্রাসা শিক্ষকদের কমপ্লেক্সের এবং কাদেরিয়া পাবলিকেশন এন্ড প্রডাক্টস লিঃ-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং একই সঙ্গে দৈনিক ইনকিলাবের প্রাণ প্রতিষ্ঠাতা মহাপরিচালক। এগুলো প্রত্যেকটি আলাদা আলাদা প্রতিষ্ঠান। এক ব্যক্তির পক্ষে এতগুলো প্রতিষ্ঠান কায়েম এবং জমিয়াত সংগঠনসহ সবগুলো প্রতিষ্ঠান এককভাবে সুষ্ঠু-সুন্দর ও দক্ষতার সাথে পরিচালনা করা সহজসাধ্য নয় কিন্তু তা তিনি অতি চমৎকারভাবে পরিচালনা করে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার তীক্ষè বুদ্ধি দূরদর্শিতা, পারদর্শিতা এবং অসাধারণ প্রতিভা, বিচক্ষণতা, দক্ষতা সমস্ত মুশকিলকে আসান করে দিয়েছিল।
বাংলাদেশের অমর প্রতিভা, আলেম সমাজের শিরোমণি মাওলানা এম এ মান্নান (রহ)-এর জীবনকাল ১৯৩৫ সালের মার্চ মাস হতে ২০০৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ৭১ বছর। জীবনের শেষ দিনগুলোতে তিনি মারাত্মকভাবে অসুস্থ ছিলেন, জাগতিক কর্মতৎপরতা তখন থেকে অচল থাকে। তার অধ্যয়ন জীবন বাদ দিলে তার কর্মযজ্ঞকালকে এইভাবে ভাগ করা যায়। অধ্যয়নের পর কয়েক বছর শিক্ষকতা জীবন, ১৯৬২ সাল থেকে রাজনৈতিক জীবন এবং ১৯৭৬ সাল থেকে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি দ্বীনি শিক্ষার প্রচার-প্রসার জীবন, পাশাপাশি রাজনীতির সাথে সরকারের মন্ত্রিত্ব জীবনও কিছু কাল। সর্বক্ষেত্রেই তিনি দক্ষতা, যোগ্যতা এবং অসাধারণ প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। নিষ্ঠা ও সততার সাথে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। তার প্রতিষ্ঠানগুলোকে তিনি ব্যক্তি স্বার্থের পরিবর্তে জনস্বার্থে নিয়োজিত রেখেছেন। তার প্রচার মাধ্যম পত্রিকাটি ইচ্ছা করলে আত্মপ্রচারে নিয়োজিত রাখতে পারতেন কিন্তু তিনি তা করেননি, জনসেবায় নিয়োজিত রেখেছেন।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশেষভাবে মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র মাওলানা এম এ মান্নান (রহ) বাংলাদেশের এমন এক প্রতিভাশালী ব্যক্তিত্ব ছিলেন যার খ্যাতি-পরিচিতি রাজনীতিবিদ হিসেবে নয়, একজন ধর্মীয় চিন্তাবিদ হিসেবে এবং আলেম সমাজের নেতা হিসেবে স্বীকৃত। ইসলামী আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলোতে যারা মাওলানা এম এ মান্নান (রহ)-এর সফর সঙ্গী হিসেবে যোগদান করেছিলেন তারা নিসন্দেহে প্রত্যক্ষ ও উপলব্ধি করেছেন তার বিশাল ব্যক্তিত্ব ও খ্যাতি পরিচিতি। ঐ সব দেশের খ্যাতনামা উলামা-মাশায়েখ এবং নেতৃবৃন্দ যারা আন্তর্জাতিক ইসলামী সম্মেলনগুলোতে শরিক হতেন তাদের অনেকে বাংলাদেশের উলামা প্রতিনিধিদের এ নেতার সাথে সাক্ষাৎ করতে, কথাবার্তা বলতে উদগ্রীব থাকতেন। আরবী ভাষাভাষী সবাই তার সাথে আলাপ-আলোচনা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। কারণ তিনি আরবদের ন্যায় আরবীতে কথাবার্তা, আলাপ-আলোচনা করতেন যা অন্যদের পক্ষে সম্ভব ছিল না।
তার পূর্ণ নাম মোহাম্মদ আবদুল মান্নান তিনি সংক্ষেপে এম এ মান্নান ব্যবহার করতেন আমরাও সর্বত্র ওই নামই ব্যবহার করেছি। তার ১৯৩৫ সালের ৯ মার্চ। তার পৈতৃক নিবাস ছিল চাঁদপুর উপজেলার কেরোয়া গ্রাম। কেউ কেউ বলেন, গ্রাম ইসলামপুর- সাবেক দেবীপুর, পৌঃ চান্দ্রা বাজার, চাঁদপুর। মাওলানা এম এ মান্নান শৈশবেই পিতৃহারা হন। তার সে জীবনের বিস্তারিত বিবরণ জানা না গেলেও তিনি যে পরিবেশ-পরিস্থিতিতে বেড়ে উঠেন তা উল্লেখিত বর্ণনা হতে সহজেই আঁচ করা যায়। দ্বীনি ও আধ্যাত্মিক পরিবেশে তার শৈশব কেটেছে, যার প্রভাব বাল্যকাল থেকেই তার মধ্যে পড়েছিল। পিতা-মাতা উভয় দিক থেকে তিনি সম্ভ্রান্ত ও মর্যাদাবান পরিবারের একজন মেধাবী ও প্রতিভাবান কৃতীসন্তান ছিলেন। তাই পিতার অবর্তমানে তিনি সৃষ্ট প্রতিকূলতা সৎসাহসের সাথে মোকাবেলা করেছেন।
ইসলামের তবলিগ ও ইসলামী শিক্ষার প্রচার-প্রসারের অনুকূল পরিবেশ মাওলানা এম এ মান্নান (রহ)-এর ঘরানাতেও বিদ্যমান ছিল। তরিকতের সিলসিলার সাথে পরিচিতি তার শৈশবেই হয়ে গিয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই পীর পিতা তার সন্তানের লেখাপড়ার ব্যবস্থা স্বীয় চিন্তাধারা ও মতাদর্শ অনুযায়ী করেন এবং ছেলেকে স্থানীয় মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছেন। তিনি ছেলের শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি হয়তো রেখে যেতে পারেননি কিন্তু প্রতিভাশালী মেধাবী ছেলে মাদ্রাসাতেই তার শিক্ষা জীবন শেষ করেন। তার অগ্রজ মাওলানা আব্দুস সালাম (রহ)ও মাদ্রাসায় শিক্ষিত এক জবরদস্ত আলেম ও পীর। দ্বীনি শিক্ষার এ ঐতিহ্যম-িত পরিবেশে মাওলানা এম এ মান্নানের শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি ঘটে।
কর্ম জীবন
অসাধারণ মেধাবী মাওলানা এম এ মান্নান (রহ) সম্মানিত পেশা শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্ম জীবনের সূচনা করেন। প্রতিভা ও যোগ্যতা বলে প্রথমে তিনি স্থানীয় ফরিদগঞ্জ আলিয়া মাদ্রাসার শায়খুল হাদীস হিসেবে টাইটেলের ক্লাস নেন এবং একজন বিজ্ঞ মোহাদ্দেস হিসেবে হাদীসের কেতাবাদি পড়াতে থাকেন এবং এ ক্ষেত্রে সুনাম অর্জন করেন। অতঃপর তিনি একই প্রতিষ্ঠানে প্রিন্সিপালের পদ অলংকৃত করেন এবং তারই উদ্যোগ প্রচেষ্টার ফলে ১৯৫৮ সালে ফরিদগঞ্জ আলিয়া মাদ্রাসা টাইটেল (কামেল) ক্লাস খোলার সরকারি অনুমোদন লাভ করে ইতিপূর্বে সমগ্র বাংলাদেশে হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি টাইটেল মাদ্রাসা ছিল সেগুলোর মধ্যে ফরিদগঞ্জ আলিয়া মাদ্রাসা ছিল নতুন সংযোজন। এতে টাইটেল ক্লাস খোলার ফলে কেবল স্থানীয় ছাত্ররা নয়, দেশের দূরদূরান্ত থেকেও এখানে এসে টাইটেল পড়ার সুযোগ লাভ করতে থাকে। বিভিন্ন স্থান থেকে অভিজ্ঞ মোহাদ্দেসগণ এখানে এসে হাদীসের অধ্যাপনা করতে থাকেন।
এখানে আরো একটি বিষয়ের উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, মাওলানা এম এ মান্নান (রহ) মাদ্রাসায় অধ্যাপনা ও পরিচালনাকালে মাদ্রাসাসমূহের করুণ অবস্থা সম্পর্কে প্রত্যক্ষভাবে অবহিত ছিলেন। মাদ্রাসা ছাত্রদের নানা সমস্যা তার অজানা ছিল না কিন্তু সমাধানের চাবি তার হাতে ছিল না। তার এ অনুভূতি উপলব্ধি একদিন নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে, এ কথা হয়তো তিনি ধারণা করতে পারেননি।
শিক্ষকতা জীবনে বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে এবং দেশের বিরাজমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে মাওলানা এম এ মান্নান (রহ) অনুধাবন করতে পেরেছিলেন দেশের মাদ্রাসা শিক্ষিত আলেম সমাজ ও পীর-মাশায়েখ-উলামাকে আরো সচেতন হতে হবে এবং অধিক দায়িত্ববোধ সম্পন্ন হতে হবে। বিশেষত দেশের প্রচলিত রাজনীতির সাথে তাল মিলিয়ে নিজেদের স্বাতন্ত্র্য স্বকীয়তা অক্ষুণœ রেখে চলতে হবে কিন্তু স্রোতের সাথে গা ভাসিয়ে নয়। এ উপলব্ধি থেকে তিনি রাজনীতিতে পদার্পণ করেছিলেন এবং সফলতাও লাভ করেছিলেন। তাই দেখা যায় ১৯৬২ সালে সাবেক পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের তিনি সদস্য নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে সর্ব প্রথম সংসদীয় রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। কথিত আছে যে, সংসদে প্রদত্ত প্রথম ভাষণে তৎকালীন স্পিকার এতই মুগ্ধ ও অভিভূত হয়ে ছিলেন যে অধিবেশন শেষে তিনি মাওলানা এম এ মান্নানকে জড়িয়ে ধরে অভিনন্দন জানান।
একই সময় তিনি স্থানীয় সরকারের পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি নিযুক্ত হন এবং ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত উক্ত পদে বহাল থাকেন। তাছাড়া বিভিন্ন সংস্থার গুরুত্বপদে ১৯৬৫ সাল থেকে ৬৮ সাল পার্যন্ত তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগের সেক্রেটারি জেনারেল পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
ফেনী আলিয়া মাদ্রাসায় প্রিন্সিপাল মাওলানা ওবায়দুল হক জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সেক্রেটারি হিসেবে দীর্ঘকাল দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তাঁর ইন্তেকালের পর জমিয়াত পুনর্গঠনের প্রয়োজন দেখা দেয়। ১৯৬৯ সালের মার্চ মাসে মাওলানা এম এ মান্নানকে সর্বসম্মতিক্রমে মাদ্রাসা শিক্ষাকগণ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি পদে নির্বাচিত করেন। এ যাবৎ মাদ্রাসা ছাত্রদের দাবি-দাওয়া পূরণ ও ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় দাবির প্রতিও সমর্থন জানিয়ে আসছিলেন। উল্লেখ্য, তিনি ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনেরও সক্রিয় সদস্য ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূর্ব সত্তরের দশক ছিল মাওলানা এম এ মান্নানের রাজনৈতিক জীবনের প্রথম অধ্যায়। মাত্র দশ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে তিনি রাজনীতির অঙ্গনে বিশেষ স্থান অধিকার করেছিলেন। এ সময় আলেম সমাজের মধ্যে যারা সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন তাদের সংখ্যা খুব বেশি ছিল না। তৎকালীন পরিস্থিতিতে তিনি জমিয়াতের সভাপতি হওয়ার পূর্বেও মাদ্রাসা শিক্ষা, শিক্ষক এবং মাদ্রাসা ছাত্রদের সমস্যাবলীর সমাধান ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার মধ্যেও তালাশ করতে থাকেন। তিনি ক্ষমতায় থেকে মাদ্রাসা-শিক্ষক-ছাত্রদের দাবিদাওয়াগুলোকে সমর্থন করতে কার্পণ্য করেননি। এ সময় মাদ্রাসা শিক্ষার পাঠ্যসূচি সংস্কারের গঠিত বিভিন্ন কমিটির সাথেও যুক্ত ছিলেন বলে জানা যায় এবং তাঁর নিজেরও নানা সংস্কার প্রস্তাব ছিল। কেননা, মাওলানা এম এ মান্নান মাদ্রাসা শিক্ষক হিসেবে মাদ্রাসা শিক্ষার সমস্যাবলী প্রত্যক্ষভাবে অনুভব করতেন বলে সরকারি ক্ষমতার বিভিন্ন পর্যায়ে সেগুলোর সমাধানে আপ্রাণ চেষ্টা করেন এবং মাদ্রাসা-দরদী হিসেবে শিক্ষক-ছাত্ররাও বিনা দ্বিধায় তাঁর শরণাপন্ন হতেন।
এ পর্যায়ে একটি ঘটনার কথা মনে পড়ে ১৯৬২/৬৩ সালে ঢাকা সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার কিছু ছাত্র তাদের কিছু সমস্যা নিয়ে মাওলানা এম এ মান্নানের কাছে গমন করেন। তিনি তাদের কথা ধৈর্যসহকারে শুনেন এবং সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, আলিয়া মাদ্রাসা দেশের একমাত্র সরকারি মাদ্রাসা- শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারই তার সরাসরি দেখাভাল ও পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে। এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-ছাত্রদের যাবতীয় সমস্যার সমাধান করা সরকারেরই দায়িত্ব। তিনি ছাত্র প্রতিনিধি দলকে বলেন, আপনারা এ প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন হিসেবে আপনাদেরও দায়িত্ব আছে, আপনারা সকল সমস্যা চিহ্নিত করে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানাবেন। তিনি আলিয়া মাদ্রাসার সমস্যাবলী সম্পর্কে অবহিত নন বলে জানান এবং তাদেরকে বলেন, আপনারা লিখিতভাবে আলিয়া মাদ্রাসার সমস্যাবলী বিস্তারিতভাবে তার কাছে পেশ করতে পারেন, সমাধানের ক্ষমতা তার হাতে নেই, তবে তিনি সব বিষয় সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানানোর এবং চেষ্টা-তদবির করার আশ্বাস প্রদান করেন। এ সময় তিনি ছাত্র প্রতিনিধিদলের কাছ থেকে আলিয়া মাদ্রাসার পরিস্থিতি অবগত হন। এ ঘটনা হতেও মাওলানা এম এ মান্নানের মাদ্রাসা শিক্ষা ও ছাত্রদের প্রতি দরদি মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায়।
সত্তরের দশকব্যাপী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানী পরিবেশে মাদ্রাসা ছাত্রদের নানা দাবিদাওয়া ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ছিল তুঙ্গে মাওলানা এম এ মান্নান সরকারের সাথে সম্পৃক্ত থাকায় মাদ্রাসা ছাত্ররা স্বাভাবিকভাবেই আশা পোষণ করতেন যে, তাঁর সমর্থন পাওয়া যাবে যা পূর্বে বলা হয়েছে। তিনি সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সম্ভাব্য সমর্থন-সহযোগিতা প্রদান করেছে। তিনি মাদ্রাসা শিক্ষকদের বলতেন, মাদ্রাসার সাথে তাঁর প্রত্যক্ষ যোগ সূত্রের কারণে তিনি এসব প্রতিষ্ঠানের এবং ছাত্রদের সমস্যাবলী সম্পর্কে তার অজানা কিছু নেই। এ ব্যাপারে তাদের এগিয়ে আসতে হবে এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে ও যৌক্তিকভাবে সেগুলোর সমাধানকল্পে সরকারের কাছে পেশ করতে হবে। তিনি সকলকে সীমা লঙ্ঘন না করার উপদেশ দিতেন। তিনি তাদের শান্তিপূর্ণ ঐক্যবদ্ধ এবং ন্যায়সঙ্গত দাবিদাওয়া আদায় করার আন্দোলনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করতেন। তিনি তাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাতেন। তিনি বিশেষভাবে দেশের আলেম সমাজের ঐক্যের ওপর গুরুত্ব আরোপ করতেন। তিনি বিভিন্ন উপলক্ষে মাদ্রাসা শিক্ষক তথা আলেম সমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে উপদেশ দিতেন।
বিগত সেই সত্তর দশকে যখন দেশে মাদ্রাসা শিক্ষাবিরোধী তৎপরতা জোরদার হয়ে উঠেছিল এবং নৈতিকতা ও সমাজদ্রোহী কার্যকলাপ, অপরাধ-অনাচার ইত্যাদি মাথাচারা দিয়ে উঠে মাওলানা এম এ মান্নান ক্ষমতায় থেকেও এসবের বিরুদ্ধে নিন্দা-সমালোচনা- প্রতিবাদ করতে দ্বিধা করেননি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার ছিলেন।
কর্মবীর, সাহসী, প্রাজ্ঞরীতিবিদ মাওলানা এম এ মান্নান (রহ)-এর বহু গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে যার বিশদ বিবরণের দীর্ঘ পরিসর প্রয়োজন। সত্তরের দশকে তার জীবন অধ্যায়ের কিছু খ-চিত্র বর্ণিত হলো, তার বিস্তারিত জীবন কাহিনী এক স্বতন্ত্র-কাহিনী।
লেখক : সাংবাদিক, ইসলামী গবেষক
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন