অধ্যাপক হাসান আবদুল কাইয়ুম : মাওলানা আবদুল মান্নান (রহ.) বাংলাদেশের একজন স্বনামখ্যাত আলেম এবং পরিচ্ছন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ। তার আব্বা ও মাতামহ উভয়ই ছিলেন ফুরফুরা শরীফের পীর মুজাদ্দিদে যামান হযরত মাওলানা শাহ্ সুফী আবু বকর সিদ্দিকী রহমাতুল্লাহি আলাহির খলিফা। এখানে উল্লেখ্য যে, বর্তমান লেখকের আব্বা হুজুর কিবলা মওলানা শাহ্ সুফী তোয়াজউদ্দিন আহমদ (রহ.)ও ছিলেন ফুরফুরা শরীফের মুজাদ্দিদে যামানের খলিফা।
ফুরফুরা শরীফের সিলসিলাভুক্ত হওয়ার কারণেই বোধকরি মাওলানা আবদুল মান্নান এক বিপ্লবী চেতনায় উদ্বুদ্ধ ছিলেন। ফুরফুরা শরীফের পীর কেবলা বাংলা ভাষায় সাহিত্য চর্চা ও পত্র-পত্রিকা সম্পাদনা ও প্রকাশনায় বাংলার মুসলিম কবি সাহিত্যিকগণকে যেমন উদ্বুদ্ধ করেন এবং বাংলা ভাষায় সেকালে যত মুসলিম সম্পাদিত পত্র-পত্রিকা প্রকাশিত হয় সেগুলোর পৃষ্ঠপোষক তিনি ছিলেন। মাওলানা আবদুল মান্নান এই চেতনাকে ধারণ করে ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকা বের করেন। এই পত্রিকায় তিনি বাংলাদেশের সেরা সেরা সাহিত্যিকদের সমাবেশ ঘটান। মহান ভাষা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সংগঠক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল গফুরকে ফিচার সম্পাদক এবং বিপ্লবী কবি রূহুল আমিনকে নির্বাহী সম্পাদক করেন। এই পত্রিকা বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এত জনপ্রিয়তা লাভ করে যার গতিবেগ এখনও সমানভাবে অব্যাহত রয়েছে।
মাওলানা আবদুল মান্নান বাংলাদেশের মাদ্রাসা শিক্ষকদের প্রাণপ্রিয় সংগঠন জমিয়তে মোদার্রেছীন কায়েম করেন। মাদ্রাসা শিক্ষকদের সকল দাবি-দাওয়া আদায় করতে সমর্থ হন। মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে তার অবদান অবিস্মরণীয় হয়ে রয়েছে। এই জমিয়তকে উৎখাত করার লক্ষ্যে একটি চক্র মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতি গঠন করে ব্যর্থ হয়েছে। মাওলানা আবদুল মান্নান ইসলামের মূলধারায় বিশ্বাসী। তিনি নিঃস্বার্থভাবে তার কর্মতৎপরতা অব্যাহত রেখে গেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌতত্ব বিরোধী চক্রের বিরুদ্ধে এক মর্দে মুজাহিদ ছিলেন তিনি। তিনি পরিচ্ছন্ন রাজনীতির পক্ষে ছিলেন। তিনি কয়েকবার বাংলাদেশ মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ছিলেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে সারা দেশে বন্যা হলে তিনি ইরাক সরকারের কাছ থেকে দ্রুত রিলিফ পৌঁছে দেবার জন্য কয়েকটি হেলিকপ্টার নিয়ে আসেন, যা কেবল তার পক্ষেই সম্ভব ছিল।
কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা তার অবদান জাতি ভুলবে না। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য তিনি ইরাকের মহামান্য প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের কাছ থেকে মোটা অংকের অনুদান নিয়ে আসেন। মহাখালীতে গওসুল আজম মসজিদ তার অবদানের এক অনন্য সাক্ষী হয়ে রয়েছে। মাওলানা আবদুল মান্নান তাসাওউফ পন্থি আলেম ছিলেন। গওসুল আজম আবু মুহম্মদ মুহিউদ্দীন সৈয়দ আবদুল কাদির (রহ.)-এর তরীকা তরীকায়ে কাদেরিয়া তিনি আত্মস্ত করেছিলেন। তিনি কাদেরিয়া পাবলিকেশন প্রতিষ্ঠা করেন।
মাওলানা আবদুল মান্নান রহমাতুল্লাহি আলায়হি অমায়িক ব্যবহারের অধিকারী ছিলেন। মহাখালীতে গওসুল আজম মসজিদের পাশে তার মাজার শরীফ জিয়ারতে প্রত্যেক দিন অনেক লোকের ভিড় জমে।
লেখক : মুফাস্সিরে কোরআন, গবেষক, সাবেক পরিচালক
ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন