স্টাফ রিপোর্টার : রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির ২৭ কর্মকর্তা জড়িত ছিল বলে জানিয়েছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। এছাড়া ৫৬টি প্রতিষ্ঠানও এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত ছিল বলেও জানান তিনি।
মঙ্গলবার দশম জাতীয় সংসদে নবম অধিবেশনে জাতীয় পার্টির সিলেট-৫ এর সংসদ সদস্য সেলিম উদ্দিনের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান এ তথ্য জানান। অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী জানান, বেসিক ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারিতে জড়িত ছিলেন সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম সাজেদুর রহমান, কাজী ফখরুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মঞ্জুর মোরশেদ, উপ-মহাব্যবস্থপনা পরিচালক ফজলুস সোবহান, কনক কুমার পুরকায়স্থ, সাময়িক বরখাস্তকৃত উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ মোনায়েম খান, উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সেলিম, মহাব্যবস্থাপক জয়নুল আবেদীন চৌধুরী, মো. মোজাম্মেল হোসেন, সাময়িক বরখাস্তকৃত মহাব্যবস্থাপক খন্দকার শামীম হাসান, মহাব্যবস্থাপক মো. মনিরুজ্জামান, গোলাম ফারুক খান, চাকরিচ্যুত মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আলী, সাবেক উপ মহাব্যবস্থাপক কোরবান আলী, উপ মহাব্যবস্থাপক ওমর ফারুক, চাকরিচ্যুত উপ মহাব্যবস্থাপক শিপার আহমেদ, সাময়িক বরখাস্তকৃত উপ মহাব্যবস্থাপক এস এম ওয়ালিউল্লাহ, সহকারী ব্যবস্থাপক মো. জহির উদ্দিন, মো. ইমরুল ইসলাম, আবদুস সবুর, আবদুস সাত্তার খান, পলাশ দাশ গুপ্ত, ইকরামুল বারী, সাবেক সহকারি ব্যবস্থাপক সরোয়ার হোসেন, ব্যবস্থাপক মো. মুহিবুল হক, চাকরিচ্যুত উপ ব্যবস্থাপক এসএম জাহিদ হাসান, উপ ব্যবস্থাপক এনএ তোফিকুল আলম।
তিনি জানান, এছাড়া আজাদ ট্রেডিং ভাসাবি ফ্যাশান লি. তাহমিনা ডেনিম লি. লাইফ স্টাইল ফ্যাশন মেকার লি. ইউকে বাংলা ট্রেডিং লিমিটেডসহ ৫৬টি প্রতিষ্ঠান এর সঙ্গে যুক্ত ছিল। সরকারের পক্ষ থেকে বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ৬ জুলাই অর্থমন্ত্রণালয় তৎকালীন পরিচালনা পরিষদ ভেঙে একজন অভিজ্ঞ ব্যাংকারকে চেয়ারম্যান করে নতুন পরিচালনা পরিষদ নিয়োগ দেয়।
তিনি জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৪ সালের ২৫ মে বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে জড়িত তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলামকে অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে চাকরি থেকে অপসারণ করে। এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে বিভিন্ন থানায় ৫৬টি ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান, ৮টি সার্ভেয়ার প্রতিষ্ঠানের ১১ জন মালিক/কর্মকর্তা এবং ২৭ জন ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এফআইআর দাখিল করা হয়েছে। মামলাগুলো বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে।
খেলাপি ঋণ ৭৪ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকা
দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭৪ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকা বলে সংসদকে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবুল মুহিত। অর্থমন্ত্রী বলেন, ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) ডাটাবেজে রক্ষিত ডিসেম্বর ২০১৫ পর্যন্ত মাসভিত্তিক পঞ্চাশ হাজার টাকা ও তদূর্ধ্ব বকেয়া স্থিতি সম্পন্ন ঋণ হিসাব এবং দশ হাজার টাকা ও তদূর্ধ্ব স্থিতি সম্পন্ন খেলাপি ক্রেডিট কার্ড হিসেবের ভিত্তিতে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭৪ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকা। এ ছাড়া দেশের তফসিলি ব্যাংকগুলো থেকে বিতরণ হওয়া কৃষি ও পল্লী ঋণের মধ্যে জানুয়ারি ২০১৬ সাল ভিত্তিক খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার ৫১৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা। অপর এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, বর্তমানে দেশে ই-টিআইএনধারী করদাতার সংখ্যা ১৮ লাখ ৬১ হাজার ৬৮২ জন। এর মধ্যে ব্যক্তি পর্যায়ের করদাতা ১৭ লাখ ৭৬ হাজার ৪০১ এবং প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ের ই-টিআইএনধারীর সংখ্যা ৮৫ হাজার ২৮১ জন।
এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক বিল পাস
এশিয়ার দেশগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকের অংশীদার হতে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) নামে একটি বিল পাস হয়। অর্থমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বিলটি পাসের জন্য উত্থাপন করেন। যদিও বিলের ওপর বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম, নুরুল ইসলাম ওমর, রওশন আরা মান্নান এবং স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আব্দুল মতিন জনমত যাচাই-বাছাই করার প্রস্তাব দেন।
অর্থ প্রতিমন্ত্রী তাদের প্রস্তাবের ওপর ব্যাখা দেন। এরপর জনমত যাচাই-কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব নাকচ হলে বিলটি পাসের প্রস্তাব করেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী। পরে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বিলটি পাসের প্রস্তাব কণ্ঠভোটে দিলে তা সর্বাধিক সংখ্যক সদস্যের ভোটে পাস হয়।
এমপিদের যুক্তিতর্কে জবাব দিতে গিয়ে অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাম-ডান বলে কেন যুক্তি তর্ক হচ্ছে? আমরা আমাদের পুরনো বন্ধু রেখেই নতুন বন্ধু তৈরি করছি। আমাদের জন্য এটি একটি নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। বিল পাসের পর প্রেসিডেন্ট স্বাক্ষর করার পরই আইনটি কার্যকর হবে। এর আগে গত ০৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক বিল-২০১৬ উত্থাপন করা হয়। বিলটি উত্থাপনের পর তা অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। কমিটির প্রস্তাব অনুযায়ী বিলটি পাস হয়।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়, এশিয়ার ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে চীন এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। এআইআইবি’তে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে যোগ দিতে বাংলাদেশ ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছে। ২০১৫ সালের ২৯ জুন বাংলাদেশসহ ৫৭টি সদস্য দেশ আর্টিকেল অব অ্যাগ্রিমেন্ট (এওএ) সই করে। গত ২৫ ডিসেম্বর থেকে এওএ কার্যকর হয়েছে। এই ব্যাংকের সদস্য হওয়ায় বাংলাদেশেরও কিছু দায়-দায়িত্ব রয়েছে। যে কারণে নতুন আইন প্রণয়ন প্রয়োজন। যে কারণে এই বিলটি আনা হয়েছে।
বিলে বলা হয়েছে, এআইআইবি’র অনুমোদিত মূলধন ধরা হয়েছে একশ’ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সদস্য পদের জন্য বাংলাদেশকে শেয়ারমূল্য বাবদ ৬৬ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার পরিশোধ করতে হবে। এর মধ্যে পরিশোধিত মূলধন হিসেবে ১৩ কোটি ২১ লাখ ডলার এবং ৫২ কোটি ৮৪ লাখ ডলার পরিশোধ করতে হবে অপরিশোধিত (কিস্তিতে) মূলধন হিসেবে। প্রতি কিস্তিতে ১০৫ কোটি ৬৮ লাখ পরিশোধ করতে হবে।
বিলে আরও বলা হয়েছে, এই ব্যাংকের উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রধানত অবকাঠামো এবং অন্যান্য উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে এশিয়ার টেকসই উন্নয়ন, সম্পদ সৃষ্টি এবং যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নে উৎসাহিত করা। দ্বিপাক্ষিক ও বহুপক্ষীয় উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের মাধ্যমে কাজ করে আঞ্চলিক সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির মাধ্যমে উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা।
এর আগে গত ২১ ডিসেম্বর প্রস্তাবিত আইনটি মন্ত্রিপরিষদ নীতিগতভাবে অনুমোদন দেয়। গত ১৯ জানুয়ারি আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ থেকে ভেটিং সম্পন্ন হয়। এরপর প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ অনুমোদন দেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন