রফিকুল ইসলাম সেলিম : আন্দোলন ও নির্বাচন সামনে রেখে চট্টগ্রামে বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের মধ্যদিয়ে ঘর গোছানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, খুব শিগগির চট্টগ্রাম মহানগরীর কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার পাশাপাশি চট্টগ্রাম দক্ষিণ ও উত্তর জেলার নতুন কমিটি গঠন করা হবে। কাউন্সিলের মাধ্যমে না হলেও সমঝোতার ভিত্তিতে যত দ্রুত সম্ভব কমিটি গঠন করার পক্ষে বিএনপির হাইকমান্ড।
দীর্ঘদিন দেশের গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক জেলা চট্টগ্রামে বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় সাংগঠনিক কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, মামলা-হামলায় জর্জরিত নেতা-কর্মীরা দলের কাছ থেকে যথাযথ সহযোগিতা পাচ্ছেন না। এ জন্য তারা দুর্বল সাংগঠনিক কাঠামোকে দায়ী করছেন।
তাছাড়া সামনে জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে সাংগঠনিক অবস্থা মজবুত করা অনিবার্য হয়ে পড়েছে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মনে করেন আগামী দিনগুলোতে মাঠে শক্তি দেখাতে না পারলে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে বাধ্য করা যাবে না। সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামতে না পারলে জনসমর্থনও বিএনপি কাজে লাগাতে পারবে না। ফলে এই মুহূর্তে দলকে গুছিয়ে সাংগঠনিক ভিত্তি সুদৃঢ় করার কোন বিকল্প নেই।
এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গত বছরের আগস্টের শুরুতে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয় কেন্দ্র থেকে। এ কমিটিতে ডা. শাহাদাত হোসেনকে সভাপতি ও আবুল হাশেম বক্করকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। আবু সুফিয়ানকে করা হয়েছে সিনিয়র সহ-সভাপতি। নতুন এ কমিটিকে এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে জমা দিতে বলা হলেও এখনো তা করা যায়নি।
নতুন কমিটি মহানগরীর পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার আগে ওয়ার্ড পর্যায়ে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়। ইতোমধ্যে ওয়ার্ড পর্যায়ে বেশ কয়েকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে এ প্রক্রিয়ায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পর গঠন করা হবে থানা কমিটি। এরপর মহানগর কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হবে বলে জানান দলের নেতারা। তবে গেল নভেম্বরের মধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে কমিটি গঠনের এ প্রক্রিয়া শেষ করার কথা থাকলেও তা শেষ হয়নি।
জানা গেছে, বিএনপির হাইকমান্ড থেকে দ্রুত তৃণমূলে সম্মেলন ও কমিটি গঠনের মাধ্যমে মহানগরীর পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা জমা দিতে বলা হয়েছে। নগর বিএনপির এক নেতা জানান, অল্প সময়ের মধ্যে এ তালিকা ঢাকায় পাঠানো হবে। বর্তমানে দুই সদস্যের কমিটি দিয়ে চলছে নগর বিএনপি। আবু সুফিয়ানকে নতুন কমিটিতে সিনিয়র সহ-সভাপতি করা হলেও তিনি আরও বড় পদ না পেয়ে অভিমান করে সাংগঠনিক কর্মকা- থেকে বিরত রয়েছেন।
এর আগে ২০১০ সালে বর্তমান স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে সভাপতি ও ডা. শাহাদাত হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে তা জমা দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সেই কমিটি সাড়ে ছয় বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি। তিন সদস্যের কমিটি ঘোষণার পর ছয় মাস পার হয়ে গেছে। এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। এর আগে পাঁচ জনের কমিটি নিয়ে চলেছে সাড়ে ছয় বছর। মহানগরীতে যারা বিএনপিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা প্রায় সাত বছর পদ-পদবি ছাড়াই রয়েছেন। এতে করে নেতাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।
ইতোমধ্যে দক্ষিণ জেলা বিএনপির নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। গত সোমবার ঢাকায় দলের এক ভাইস চেয়ারম্যানের বাসায় দক্ষিণ জেলা বিএনপির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। সেখানে স্বল্প সময়ে দক্ষিণ জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের তাগিদ দেয়া হয়। বর্তমান কমিটির সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরীকে সভাপতি রেখে নতুন কমিটি গঠন করা হবে বলে জানা গেছে। কারণ, গত বছর জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে দলের ঢাউস কেন্দ্রীয় কমিটিতে বড় কোন পদ পাননি জাফরুল ইসলাম। তাকেই সভাপতি রেখে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হচ্ছে বলে জানান দলের নেতারা।
২০১১ সালের এপ্রিলে ১৫১ সদস্যের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটির মেয়াদ তিন বছর হলেও আগামী এপ্রিলে এই কমিটির মেয়াদ ছয় বছর পূর্ণ হবে। ২০১১ সালে কমিটি গঠন করা হলেও বিগত দিনে আন্দোলন সংগ্রামে অনেক নেতাকে রাজপথে দেখা যায়নি। দক্ষিণ জেলা বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে শক্তভাবে মাঠে দাঁড়াতে পারেনি বিএনপি। এর কারণ হিসেবে সরকারের জুলুম-নির্যাতনের পাশাপাশি দলীয় কোন্দলকেও দায়ী করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তাদের অভিমত, কমিটির শীর্ষ দুই নেতার দ্বন্দ্বের কারণে দলে অনৈক্য বেড়েছে। সাংগঠনিক কাজেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। নতুন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো বিবেচনায় আনা জরুরী বলে মনে করেন তারা।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপি কমিটি গঠন নিয়েও চিন্তা-ভাবনা করছে দলের হাইকমান্ড। বিএনপির বিভাগীয় সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম জানান, দক্ষিণ জেলার পাশাপাশি খুব শিগগির উত্তর জেলারও কমিটি গঠন করা হবে। কমিটি গঠনের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে বিএনপিকে শক্তিশালী করা হবে।
উল্লেখ্য, প্রায় তিন বছর ধরে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চলছে উত্তর জেলা বিএনপি। ২০১৪ সালের ২৬ এপ্রিল গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন কমিটি ভেঙে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক আসলাম চৌধুরীকে নতুন কমিটির আহ্বায়ক করা হয়। সদস্যসচিব করা হয় কাজী আবদুল্লাহ আল হাছানকে। আহ্বায়ক কমিটিকে কম সময়ের মধ্যে সম্মেলন করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেয়া হয়। তবে বিভিন্ন উপজেলায় কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের মধ্যে তীব্র মতবিরোধ দেখা দেয়। কয়েকটি উপজেলায় পাল্টাপাল্টি কমিটি হয়।
এর মধ্যে গত বছরের ১৫ মে ঢাকার খিলক্ষেত থানা এলাকা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ আসলাম চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে। এর এক মাস আগে দলের যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পান তিনি। তবে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হিসেবেও তার নাম রয়ে যায়। আসলাম চৌধুরীর জেলে যাওয়ার পর উত্তর জেলার সাংগঠনিক অবস্থা আরও দুর্বল হয়ে পড়ে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন